
জিডি করেই দায় সেরেছে রাজউক। পুলিশ বলছে, জিডি করার পর রাজউকের কর্মকর্তারা কোনো খোঁজখবর নেননি। ওদিকে আশুলিয়া থানা পুলিশও এ বিষয়ে কাউকে তদন্তে পাঠায়নি। ফলে জলাধার ভরাট বন্ধে শুক্রবার রাজউকের করা জিডি কার্যত কোনো কাজে আসেনি। এ সুবাদে ভরাটকারীরা আছেন খোশমেজাজে। শনিবারও আশুলিয়ার মড়াগাং এলাকার জলাশয় ভরাটে তাদের ছিল দোর্দণ্ড উপস্থিতি। ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভরাট সংশ্লিষ্টরা পাইপের সঙ্গে ড্রেজারের সংযোগ স্থাপন করেছে। প্রসঙ্গত, রাজধানী লাগায়ো আশুলিয়া এলাকায় অবস্থিত সুবিশাল জলাধার ভরাটে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের ডিটেল এরিয়া প্ল্যানেও (ড্যাপ) এটি রিটেশন পন্ড বা জলাধার হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালী গ্রুপ সন্ত্রাসী ভাড়া করে জলাধার ভরাটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
সরেজমিন শনিবার সকালে দেখা যায়, ভরাটকাজে ব্যবহৃত ড্রেজার পাইপ লাইনের সঙ্গে সংযোগ করা হচ্ছে। বালুভর্তি একটি জাহাজ ড্রেজারের সঙ্গে সংযোগ দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে ড্রেজারের কর্মচারীরা জানান, জোয়ারের পানি বাড়লেই যে কোনো সময় সংযোগ দিয়ে ভরাটকাজ শুরু করা হবে।
ড্রেজারের মালিক জালাল জানান, রাজউক অথবা পুলিশের কোনো লোক তাকে মাটি ভরাটে নিষেধ করেনি। বরং তাকে পুলিশের অফিসার সেলিম পাইপ লাগিয়ে মাটি ভরাটের নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, এলাকাবাসী জলাধার ভরাটে বাধা দিতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সন্ত্রাসী চক্রটি অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকাবাসীদের চাঁদাবাজি ও ডাকাতি মামলায় ফাঁসানোর ভয়-ভীতি দেখানো অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার এসআই ফারুক প্রতিবেদককে জানান, রাজউকের লোকজন যখনই পুলিশ চাইবে তখনই আমরা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু রাজউক কর্মকর্তারা জিডি করার পর আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি। তাছাড়া ঘটনাটি নিয়ে থানার ওসি তাকে এখনও তদন্তের নির্দেশ দেননি। ওসি নিজের কাছে জিডির কপি রেখে দিয়েছেন। অন্য কোনো অফিসারকে দিয়েও তদন্ত করাতে পারেন।
রাজউকের উপ-পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিডির বাদী কামরুল ইসলাম সোহাগ বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছি। এখন থানা পুলিশের ব্যাপার তারা কী করবে। রাজউকের করণীয় কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোববার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রাজউকের প্রধান পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার আশুলিয়া থানায় জিডি করে রাজউকের কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম সোহাগকে জলাধার ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ড্রেজার ও পাইপ লাইন সরিয়ে নেয়ার জন্য ড্রেজারের লোকদের বলা হয়েছে। তারপরও কোন শক্তির বলে তারা পাইপ সরিয়ে নিচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে জোনাল ডিরেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করে রোববার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। জলাধার ভরাটের সঙ্গে পুলিশের এসবি শাখার সেলিম জড়িত থাকার ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসবি) ফজলুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সেলিম মড়াগাং এলাকায় মাটি ভরাট নিয়ে এলাকাবাসী ও ভরাটকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু যদি সে উল্টো ভরাটের পক্ষে ভূমিকা রাখে তাহলে সেলিমের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেয়া হবে। যুগান্তর