
চট্টগ্রামে চিহ্নিত শিল্প এলাকায় গড়ে উঠেছে আবাসিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে আবাসিক এলাকায় চলছে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা পূর্ব থেকে চট্টগ্রামে স্বীকৃত কয়েকটি শিল্প এলাকায় বর্তমানে শিল্প কারখানা ন্যূনতম পর্যায়ে পৌঁছেছে। একইভাবে ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি আবাসিক এলাকা বর্তমানে এক প্রকার বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলোতে আবাসিক এলাকা হিসেবে যেমন অবকাঠামোগত সুবিধা লোপ পেয়েছে। অন্যদিকে আবাসিক ভবনসমূহ ও তার আশপাশে বাণিজ্যিক এবং শিল্প কারখানা বিস্তার লাভ করেছে। ফলে শিল্প এলাকা ও আবাসিক এলাকা তাদের মূল শ্রেণি বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। এমনকি কয়েকটি স্বীকৃত বাণিজ্যিক এলাকা থেকেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম অন্যত্র সরে গেছে। এতে করে অপরিকল্পিত নগরায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরী। এ কারণে পরিবেশও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। শিল্প-বাণিজ্যিক ও আবাসনের অসম অবস্থার কারণে কেউ পরিবেশগতভাবে স্বাচ্ছন্দ্য অবস্থায় নেই। অনিয়ন্ত্রিতভাবে যত্রতত্র শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক ভবন ও আবাসিক এলাকা গড়ে উঠায় দিন দিন পরিবেশের মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিত নগরায়ন নিয়ন্ত্র মূল দায়িত্বে থাকলেও ওয়াসা, বিদ্যুত্ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ইউটিলিটি সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও এর জন্য কম-বেশি দায়ি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বও কম নয়। শিল্প এলাকায় বসবাসকারি বাসাবাড়ির লোকজন যেমন দূষণের শিকার হচ্ছে। একইভাবে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠা কলকারখানার কারণে বসবাসকারি লোকজন দূষণে আক্রান্ত হচ্ছে। লোকজনের চলাফেরা ও যাতায়াতের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তাছাড়া শিল্প এলাকা ও আবাসিক এলাকায় যততত্র গড়ে উঠা স্কুল, কলেজ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কারণে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের মানুষ দূষণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান শিল্প এলাকা নাসিরাবাদ সাগরিকা ও কালুরঘাট। অনেক শিল্প প্লটে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত গড়ে উঠেছে। আবার কোন কোন শিল্প প্লটে অনুমতি নিয়ে আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিংবা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পুরনো রিরোলিং মিলগুলোর কারণে আশপাশের অন্যান্য কলকারখানার লোকজন দূষণের শিকার হচ্ছে। অন্যান্য কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কখনই দরজা-জানালা খোলা রাখা যায় না ধোঁয়ার কারণে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক জানান, ধোঁয়া বন্ধে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনেকে নতুন মেশিন এনেছে বলে শুনেছি। কিছুদিন ধোঁয়ার মাত্রা কম ছিল। বর্তমানে আবার ধোঁয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ এসেছে। একটি স্টীল মিলকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তবে বিভিন্ন শিল্প নগরীর কারখানা মালিকদের অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের তদারকি বাড়ানো গেলে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। তাছাড়া শিল্প এলাকায় অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা রোধ করা জরুরি। ইত্তেফাক