
বিদেশে অর্থ পাচার রোধে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ চায় রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। সংগঠনের নেতারা মনে করেন, দেশে বিনিয়োগের সুযোগ পেলে তখন বিদেশে টাকা যাবে না। বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগে যেভাবে পাচার হচ্ছে, তা আইন কঠোর করেও বন্ধ করা যাবে না। প্রশ্ন ছাড়া এমন অর্থ দেশে ফ্ল্যাট ও প্লট কেনায় বিনিয়োগের সুযোগ দিলে আবাসন খাত চাঙ্গা হবে।
রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে গতকাল শনিবার ‘জাতীয় অর্থনীতিতে আবাসন খাত’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন তারা। সেন্টার ফর কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক (সিসিএন) আয়োজিত এ বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট উপস্থাপক জিলল্গুর রহমান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সব খাত এগিয়ে নিয়েছে সরকার। আবাসন খাতও পিছিয়ে থাকবে না। এ খাত এগিয়ে নিতে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা হবে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও গৃহায়নমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। বাজেট পেশের আগের দিনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে বিষয়গুলো উত্থাপন করার আশ্বাস দেন তিনি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে আগে একটি সিদ্ধান্ত ছিল। হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা ঠিক হয়নি। টাকাকে কালো বা সাদা বলতে চান না তিনি। ১০ শতাংশ কর দিয়ে এ অর্থ সঠিক পথে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মতামত দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বিদেশে টাকা যাওয়ার স্রোত যদি ইতিমধ্যে তৈরি হয়েই থাকে, এটি তাহলে হঠাৎ বন্ধ হবে না। দেশে আবাসন খাতে অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে এ অর্থ দেশেই বিনিয়োগ হবে। এ ছাড়া আবাসন খাতের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি নিবন্ধন ব্যয় কোনোমতে ১৬ শতাংশ থাকতে পারে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আবাসন খাতে বিনিয়োগ ব্যাংকের জন্য নিরাপদ। এ খাতে ফ্ল্যাট কেনাকাটায় ব্যাংকগুলো ঋণ দিলে টাকা ফেরত পাবে। অথচ ব্যাংকগুলো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঋণ দিয়েছে। এ জন্য তিনি ব্যাংকগুলোকে এ খাতে ঋণ দেওয়ার আহ্বান জানান।
সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ফ্ল্যাট কিনলে টাকা কোথা থেকে এসেছে তার জবাব নিতে পেছনে লেগে থাকে দুর্নীতি দমন কমিশন। নানা বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচারের সস্তা সুযোগ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। পাচার বন্ধ করে দেশের আবাসনে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ খাতের উন্নয়নে সরকার কিছু করছে না। উল্টো প্রতি পদে বাধা দেয়। বিশেষ করে রাজউক হচ্ছে লুটপাটের খনি। সাধারণ মানুষের জন্য দুর্ভোগের জায়গা। ঘুষ দিলে ১৫ দিনে কাজ হয়। আর না দিলে ১০ বছর ঘুরতে হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, যে কোনো অবস্থায় হোক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে। একই সঙ্গে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া উচিত। তা না হলে অর্থ পাচার আটকে রাখা যাবে না। কোনো আইন দিয়ে মানি লন্ডারিং বন্ধ হবে না। তিনি এ খাতে গতি আনতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানান।
রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বাজেটে আবাসন খাতে ক্রেতাদের জন্য সরকারি কোনো তহবিল নেই। ১৪ থেকে ১৬ শতাংশের উচ্চ নিবন্ধন কমিয়ে ৭ শতাংশ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা গতিশীল করতে দ্বিতীয়বার ফ্ল্যাট ক্রয়ে নিবন্ধন ব্যয় কমানোর দাবি জানান তিনি। সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, ঋণের সুদহার বৃদ্ধিতে আবাসন খাত আবার স্থবিরতার দিকে যাচ্ছে। এ খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। দীর্ঘ মেয়াদে ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের দাবি জানান তিনি। রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূইয়া বলেন, রিহ্যাব সদস্যরা ঢাকার বাইরেও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিনা প্রশ্নে ক্রেতাদের ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
বৈঠকে আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন, বারভিডার সভাপতি মো. হাবিব উল্লা ডন, রি-রোলিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল হকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। সমকাল