
নকশা নিয়ে বিড়ম্বনা, ক্রেতাপর্যায়ে ঋণসুবিধা না পাওয়া, অতিরিক্ত নিবন্ধন-ফি ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের এ খাতের সঙ্গী হয় ‘মন্দাভাব’।
আবার রাজধানী ঢাকাতে প্রতিবছরই নানা অজুহাতে বাড়ির মালিকরা বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দেন। ভাড়া দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ভাড়াটিয়াদের। মাস শেষে বাসাভাড়া, সন্তানদের লেখা-পড়ার খরচ মিটিয়ে নিজের কাছে আর পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। আর তাই অনেকেরই স্বপ্ন থাকে এই শহরে একটা নিজস্ব আবাসনের ব্যবস্থা করার। এজন্য তাদের দৌড়াতে হয় ব্যাংকগুলোর কাছে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকেও চলছে একই বিড়ম্বনা, সুদের হার দুই অঙ্কের।
তবে এবার আশার বাণী শুনিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি)। ব্যাংকঋণেরর সুদহার এক অঙ্কে (৯ শতাংশ) নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছ তারা। একইসঙ্গে আমানতের সুদহারও সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ করার কথা জানানো হয়ে। সিদ্ধান্তটি কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। বুধবার বিএবির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এটি করা হয় বলে জানান বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
একই দিন সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, আমানতের সুদহার না বাড়ানোর জন্য রাষ্টায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই সময় ব্যাংলোদেশ ব্যাংকের গর্ভনর, ডেপটি গভনরসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এতে বেশ উচ্ছ্বসিত আবাসন ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিবছর আবাসন খাতে যে মন্দাভাব থাকে সেটি কমে আসবে। একই সঙ্গে সুদিন ফিরবে আবাসন খাতে। আর ঋণ-প্রত্যাশীরা বলছেন, এটি কার্যকর হলে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই মিলবে।
আবদুল হামিদ একটি গ্রুপ অব কোম্পানিজ-এর কর্মকর্তা। তার চাকরির মেয়াদ ছয় বছর। অন্যদের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেন এই শহরে নিজের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করার। কিন্তু ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে তিনি চাইলেও পারেননি এতোদিন।
তিনি বলেন, আমাকে অনেক ব্যাংক ও অর্থসহায়তা প্রতিষ্ঠান ঋণের জন্য অফার করে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের সুদহার বৃদ্ধি আমাকে ভাবিয়ে তুলতো। আমি সাহস করতাম না ঋণ করার।
তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স-এর সিদ্ধান্তের কারণে আমার এখন গৃহঋণ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যেহেতু আগামী ১ জুলাই থেকে সব ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার এক অঙ্কে নেমে আসছে। তাই জুলাই মাসেই কোনো একটি ব্যাংকে গৃহঋণের জন্য আবেদন করব।
রিহ্যাব সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর নান্দনিক ফ্ল্যাট আর প্লট নিয়ে কোম্পানিগুলো এগিয়ে এলেও ঋণ সমস্যার কারণে তার অধিকাংশ ফ্লাটই অবিক্রীত থেকে যায়। আবাসন খাতে এখনও প্রায় ৮ হাজার ফ্লাট অবিক্রীত আছে। এসব ফ্ল্যাটের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
বিএবির সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তে আশার আলো দেখছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। এবিষয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিএবির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এতে আবাসন খাতের মন্দাভাব দূর হবে। আবার ঘুরে দাঁড়াবে, চাঙ্গা হবে এই খাত। একইসঙ্গে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আমরা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করতে পারব। আবাসনের জন্য তাদেরও রয়েছে একবুক স্বপ্ন। তাদের সেই স্বপ্নও বাস্তবে রূপ নেবার পথ সুগম হবে। বাংলানিউজ