আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
ঢাকার পূর্বাঞ্চল নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য

পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ঢাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে পূর্ব দিকে পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন করার যে পরামর্শ দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, ওই এলাকা কিভাবে গড়ে উঠবে সে ব্যাপারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে। আর বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত ঢাকার সমস্যার সমাধানে দেশের অন্যান্য মহানগর, জেলা ও উপজেলা শহরকে গড়ে তুলতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। এজন্য ঢাকাকে কেন্দ্র করে আর কারো কোনো পরিকল্পনা না করলেও চলবে।
গতকাল রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ‘নগর পরিকল্পনা ও নাগরিক সেবা : পরিকল্পনাসংশ্লিষ্ট সেবাসমূহ ও পেশাজীবীদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। বিআইপির সভাপতি এ কে এম আবুল কালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় পরিকল্পনাবিদরা বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকার পূর্বাঞ্চল পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হলে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়বে। সেখানে নতুন করে ৫০ লাখ মানুষের আবাসন ও ১৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আর ঢাকা শহরের মানুষের মাথাপিছু আয় ৮ হাজার ডলার থেকে বেড়ে ৯ হাজার ২০০ ডলারে উন্নীত হবে। এজন্য বিশ্বব্যাংকের তিন সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ দিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বন্যার হাত থেকে ঢাকার পূর্বাঞ্চল রক্ষা করতে এবং পানির গতি ঘোরাতে বালু নদীর তীরে বাঁধ দিতে হবে, ক্রমবর্ধমান সাধারণ ট্রান্সপোর্ট ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচলে কার্যকর সমন্বয় করতে হবে এবং ঢাকার পূর্বাংশে একটি পরিকল্পিত বড় বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। আর এ সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা। যে অর্থ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক।
সেমিনারে রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশোধিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ন গড়ে তুলতে পরিকল্পনাবিদদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে সেটি বাস্তবায়ন হয়। তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের কাছেও পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। টেকসই উন্নয়ন করতে হলে আগে পরিকল্পনা করতে হবে। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক কয়েকবার ঢাকার পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের ব্যাপারে রাজউকের সাথে বৈঠক করেছে। আমরা তাদেরকে পরিষ্কার বলে দিয়েছি, রাজউকের বিদ্যমান মাস্টার প্ল্যানের আলোকে কিছু করতে চাইলে সেটি করতে পারবে, নইলে করতে পারবে না।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সমস্যাবহুল ঢাকা শহরকে নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা কোনো ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে না। আমরা এখন দেশব্যাপী পরিকল্পনার বিষয়ে ভাবছি। তিনি আরো বলেন, ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকা নিয়ে রাজউকের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই ঢাকার পূর্বাঞ্চলও পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠবে। বিদ্যমান অবস্থার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, দেশে এখন পরিকল্পনাবিদের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জন। অথচ এই সময়েও পরিকল্পনাবিদদের বাদ দিয়ে শহর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ঢাকার পূর্বাঞ্চল নিয়ে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। কেননা, ওই পরিকল্পনার সাথে জড়িত সবাই অর্থনীতিবিদ। তা ছাড়া ঢাকা মহানগর নিয়ে মাস্টার প্ল্যান রয়েছে, সেখানে অর্থনীতিবিদদের পরিকল্পনা করার কী দরকার রয়েছে।
সেমিনারে আরো বক্তৃতা করেন মিউনিসিপাল টাউন প্ল্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আতিকুল খালিদ, বিআইপির প্রতিষ্ঠাতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান, বিআইপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম মোর্তজা, নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মইনুল ইসলাম, বিআইপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের জেনারেল ম্যানেজার মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ। নয়া দিগন্ত