আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
৮১ লাখ টাকার ফ্ল্যাট এক কোটি ১৯ লাখ!

ঢাকার লালমাটিয়া নিউ কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ১৫৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর এই অভিজাত আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাট পেয়ে অনেকটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ফ্ল্যাট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ ৮১ লাখ টাকা থেকে এক লাফে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা বেড়ে একেকটি ফ্ল্যাটের দাম দাঁড়াচ্ছে এক কোটি ১৯ লাখ টাকা।

জানা যায়, ১০টি বহুতল ভবনের এই প্রকল্পে বিচারপতি, জেলা জজ, সরকারের সিনিয়র সচিব, সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা ফ্ল্যাট পেয়েছেন। আগামী আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই বরাদ্দ গ্রহীতাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ফ্ল্যাটের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাট গ্রহীতাদের অনেকেই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রসপেক্টাস বিক্রির সময় ফ্ল্যাটের নাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। প্রসপেক্টাসকে ‘পাবলিক ডকুমেন্টস’ উল্লেখ করে সেখানে উল্লেখ থাকা দাম নতুন করে বাড়ানোর সুযোগ নেই। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি আর কূটকৌশলের কারণে এমনটি হয়েছে।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, ‘দাম কিছুটা বেড়েছে। এখানে গ্রস জায়গার দাম আগে ধরা ছিল না। পরে তা যুক্ত করায় আকার ও দাম বেড়েছে।’ ডিপিপি আর প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা দামে মিল রয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অসতর্কভাবে প্রসপেক্টাস অনুমোদন করায় এটি হয়েছে। তবে এ নিয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।’

জানা যায়, লালমাটিয়া নিউ কলোনি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ১৫৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করে। সে সময় মূল ডিপিপি অনুমোদিত হওয়ার পর ২০১৫ সালের মাঝামাঝি প্রসপেক্টাস বিক্রির মাধ্যমে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে বিভিন্ন শর্তের সঙ্গে এক হাজার ৮০০ (গ্রস) বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মূল্য ৮১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ছোট আকারের এক হাজার ২৫০ বর্গফুটের (গ্রস) ফ্ল্যাটের দাম ধরা হয় ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই দাম ধরেই যাঁরা ফ্ল্যাট পেয়েছেন তাঁরা কিস্তির প্রায় অর্ধেক টাকাও জমা দিয়েছেন। সম্প্রতি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ১৮৪তম বোর্ড সভায় ফ্ল্যাটের দাম নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে বড় আকারের ফ্ল্যাট এক কোটি ১৯ লাখ টাকা আর ছোট আকারের ফ্ল্যাটের দাম এক কোটি দুই লাখ টাকা ধরা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রকৌশলী জানান, এই প্রকল্পে ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ নিয়ে কূটকৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ডিপিপি অনুমোদনের সময় বড় আকারের ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্য ছিল ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। আর ছোট ফ্ল্যাটের দাম ছিল ৭৯ লাখ তিন হাজার টাকা। কিন্তু সংস্থার চেয়ারম্যান প্রসপেক্টাসে দাম কম উল্লেখ করে ফ্ল্যাট বরাদ্দপ্রাপ্তদের আকৃষ্ট করার কৌশল নিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে এসে প্রকৃত হিসাব করে যখন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তখন ফ্ল্যাটের আকার ও মূল্য দুটিই বেড়েছে। এখন একদিকে যারা ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন তাঁরা অর্থের বাজেট নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। অন্যদিকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষেরও সুনাম নষ্ট হচ্ছে। অথচ ফ্ল্যাটের দাম কম নির্ধারণের সময় নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা ডিভিশন-২) নাছিম খান এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সচেতন করেছিলেন। সেখানে তিনি প্রসপেক্টাসে প্রকৃত মূল্য দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালের ২২ জুলাই একটি চিঠিও দেন। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে এই কাজ করা হয়েছে। এখন প্রতিটি ফ্ল্যাটের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার ঘটনায় বিপাকে রয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষও।

বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-২-তে দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ডিপিপিতে আমরা ফ্ল্যাটের দাম ঠিক ধরে পাস করিয়েছিলাম। কিন্তু প্রসপেক্টাসে কম মূল্য ধরা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল গ্রাহকদের কম মূল্যে ফ্ল্যাট দেওয়ার চেষ্টা করা। এখন হয়েছে উল্টো। আমাদের পক্ষ থেকে নানা যৌক্তিকতা থাকলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দাম অনেক বেড়ে গেছে।’ কালের কণ্ঠ