
অব্যাহত দখল আর দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে নওগাঁর ছোট যমুনা নদী। কারখানার বর্জ্যে নদীর জলজ প্রাণী ও মাছের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এর সঙ্গে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদী নিয়ে স্মৃতিচারণ করে কেডির মোড় এলাকার বাসিন্দা পলাশ চন্দ্র পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘শিক্ষক বাবার সঙ্গে ছোট বেলায় এই নদীতে অনেক মাছ ধরেছি। এখন আর এখানে মাছ পাওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে বাড়ি-কারখানা করেছে। বয়লারের ছাই ফেলা হচ্ছে নিয়ত। পৌরসভার ময়না তো আছেই। সবমিলে যা অবস্থা, আর কিছুদিন পর এটি যে নদী তা কেউই বিশ্বাস করতে চাইবে না।’
শহরের বাসিন্দা আব্দুস ছালাম জানান, জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্য এসে নদীটি ধ্বংস হতে চলেছে। দূষণের কারণে নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষেরা তীব্র পানি সংকটে পড়েছেন।
নদী দূষণে প্রতিবাদে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয় না বলে অভিযোগ তার।
শহরের পার-নওগাঁ মেরিগোল্ড মহল্লার বাসিন্দা আসাদুর রহমান জয় জানান, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নিজেরাই নদীটাকে নষ্ট করছে। ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন কোমাইগাড়ী এলাকায় ময়লা ফেলার সুনির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও তারা নদীতে ফেলছে। দেখার কেউ নেই। অভিযোগ করলেও তাদের গা নেই।
নওগাঁর নদী গবেষক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষ দূষিত বর্জ্য ফেলে পরিবেশ আইন ও পানি নীতি ভঙ্গ করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ জেলা শাখার সদস্য কায়েস উদ্দীন জানান, শহরের বুক চিরে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদী আস্তে আস্তে তার যৌবন হারিয়ে ফেলেছে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে কারখানা গড়েছে। সেসব কারখানা থেকে নিয়মিত দূষিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি বলেন, ‘পৌরসভার কর্মীরা কম শিক্ষিত। এজন্য না বুঝে তারা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলেছেন। তাদের নিষেধ করা হয়েছে, আশা করছি ভবিষ্যতে আর এমনটি হবে না।’
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘ছোট যমুনা নদীর পানি দিয়ে এক সময় মানুষ প্রচুর ফসল উৎপাদন করেছেন। জেলেরাও মাছ ধরে অনায়াসে পরিবার নিয়ে সুখে থেকেছেন। কিন্তু, আজ সবই স্মৃতি হতে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘নদীর নাব্যতা ফেরাতে সবার আগে জনসচেতনতা জরুরি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চেষ্টা করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের পাশে থাকবে।’ পরিবর্তন