আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
৩৫ আবাসন কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকির খোঁজে এনবিআর

আবাসন ও ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দেশের ছোট-বড় বা স্বনামধন্য সব কোম্পানির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ৩৫ কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। তবে পর্যায়ক্রমে সব কোম্পানি নিরীক্ষা করা হবে। এসব কোম্পানির কাছে ফ্ল্যাট বিক্রিসহ ভ্যাটসংক্রান্ত দলিলাদির তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে এ নিরীক্ষাকে হয়রানি বলে উল্লেখ করে তা বন্ধে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে নিরীক্ষার জন্য ৩৫টি কোম্পানির তালিকা করে এনবিআর। এসব কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি তদন্তে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মূসক গোয়েন্দা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এসব কোম্পানির ফাঁকি তদন্তে সাতটি নিরীক্ষা দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি নিরীক্ষা দল পাঁচটি করে কোম্পানি নিরীক্ষা করছে। নিরীক্ষা দল প্রতিটি কোম্পানির কাছে তথ্য চেয়ে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে।
চিঠিতে ভ্যাট পরিশোধের হালনাগাদ তথ্য, প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সনদ, সিএ ফার্মের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন, ২০১১ সাল থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রির রেজিস্ট্রেশন কপি, দাখিলপত্র (রিটার্ন), ক্রয়-বিক্রয় পুস্তক, আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের বিল অব এন্ট্রি এবং মূসক চালান (মূসক চালান, ক্যাশ মেমো, ভাউচার), বিক্রি বা সরবরাহ হিসাব পুস্তক ও ট্রেজারি চালানের কপিসহ মূসকসংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে এসব জমা দিতে বলা হয়েছে।
তালিকার প্রথমে রয়েছে দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়িক গ্রুপ আবদুল মোনেম গ্রুপের আবদুল মোনেম কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এছাড়া রয়েছে অঙ্গন প্রপার্টিজ লিমিটেড, বসুধা বিল্ডার্স লিমিটেড, মাল্টিপ্লান লিমিটেড ও মাল্টিপ্লান ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে দেশের স্বনামধন্য র‌্যাংগস প্রপার্টিজ লিমিটেড, অজন্তা প্রপার্টিজ লিমিটেড, ইম্পেরিয়াল ইনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, ইম্পেরিয়াল রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও এলিট প্রপার্টিজ লিমিটেড। তৃতীয় তালিকায় রয়েছে এলাইস প্রপার্টিজ লিমিটেড, বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড, এনডিই লিমিটেড, বসুমতি রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড। চতুর্থ তালিকায় আকাক্সক্ষা ডেভেলপার্স লিমিটেড, বসতি কনসোটিয়াম লিমিটেড, মদিনা ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, হলমার্ক ডেভেলপার লিমিটেড ও বিডি হোমস লিমিটেড। পঞ্চম তালিকায় রয়েছে আশা প্রপার্টিজ প্রাইভেট লিমিটেড, জাপান গার্ডেন সিটি লিমিটেড, মোহাম্মদী হোমস লিমিটেড, মেট্রো হোমস লিমিটেড ও মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড। ষষ্ঠ তালিকায় রয়েছে হলি হোমস রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, ইনডেক্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, ইনডেক্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, হলি ল্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড ও হামিদ রিয়েল এস্টেট কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। সপ্তম তালিকায় অ্যাডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজি লিমিটেড, এলাইস প্রপার্টিজ লিমিটেড, আনোয়ার রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড, গ্লোরি হোমস লিমিটেড ও গ্লোরি রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের মতো বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি নিরীক্ষা করছে এনবিআর। নিরীক্ষার মাধ্যমে আবাসন খাতের কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি উঠে আসবে বলে মনে করেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
চিঠিতে নিরীক্ষা দলকে সহায়তা করার অনুরোধ করা হয়েছে। কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান সহায়তা না করলে তার বিরুদ্ধে মূসক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে নিরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কাজ শেষ না হওয়ায় ইতোমধ্যে সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠান সাড়া দিলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সাড়া দিচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক এএফএম আবদুল্লাহ খান বলেন, এনবিআরের নির্দেশে প্রাথমিকভাবে ৩৫টি কোম্পানির নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। নিরীক্ষা দল কাজ শুরু করেছে। তথ্য চাওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ খাতের সব কোম্পানি নিরীক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, আমরা পাঁচ বছরের তথ্য চেয়েছি। তবে কাউকে হয়রানি করা হবে না।
মূসক গোয়েন্দা তদন্তের নামে হয়রানি করছে বলে উল্লেখ করে হয়রানি বন্ধে উদ্যোগ নিতে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, আবাসন শিল্প নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। মূসক গোয়েন্দা আবাসন খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ২০১১ সাল থেকে সিএ ফার্মের বার্ষিক প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় হিসাব পুস্তক, দলিলাদি ও ট্রেজারি চালানের কপি দিতে চিঠি দিয়েছে। আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিমার্ণ করা ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশনের সময় মূসক পরিশোধ করে। মূসক আদায়ের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ আবাসন খাতে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। স্থবির এ খাতে নতুন এ হয়রানি বন্ধে চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, সাত থেকে ৯ বছর আগের কাগজ চাওয়া হয়েছে, যা অনেক কোম্পানির কাছে নেই। আবার অনেক কোম্পানির বয়সও সাত থেকে ৯ বছর হয়নি। দেশের উন্নয়নে তাদেরও অবদান রয়েছে। সেজন্য আমরা নিরীক্ষাকে হয়রানি বলছি।
উল্লেখ্য, রিহ্যাবের হিসাবে দেশে এক হাজার ২০৩টি প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট ও প্লট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএল) হিসেবে ২৩১টি প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট ও প্লট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সারা দেশে দেড় হাজার আবাসন ও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। শেয়ারবিজ