আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
টাকার জন্য শিলা-মাবিয়া-শাকিলকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিচ্ছে না রাজউক

* ফ্ল্যাটে ওঠার আগ পর্যন্ত বাসা ভাড়া বাবদ যে টাকা পাওয়ার কথা এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী তিন ক্রীড়াবিদের, তাও বন্ধ

গলায় স্বর্ণের পদক পরে অঝোরে কেঁদেছিলেন মাবিয়া আক্তার সিমান্ত। ভারতের গুয়াহাটিতে এই নারী ভারোত্তোলকের সে আনন্দ-কান্না ছুঁয়েছিল লাল-সবুজের দেশের ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়। আসামের রাজধানীতে সুইমিংপুলে সোনা ফলিয়েছিলেন আরেক নারী ক্রীড়াবিদ মাহফুজা খাতুন শিলা। এসএ গেমস সাঁতারে জোড়া স্বর্ণ জিতে হাসি ফুটিয়েছিলেন দেশের মানুষের মুখে। তরুণ শুটার শাকিল আহমেদ পিস্তলে স্বর্ণ জিতে শুটিং তুলেছিলেন নতুন উচ্চতায়।

তিন ক্রীড়াবিদের সাফল্যে খুশি হয়ে তাদের ফ্ল্যাট উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষণামতে গত বছরের ১৬ এপ্রিল তাদের হাতে ফ্ল্যাটের চাবিও হস্তান্তর করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা; কিন্তু চাবি হস্তান্তরের পর ১৫ মাস কেটে গেলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এখনো তাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়নি। তিন কৃতী ক্রীড়াবিদ কখনো রাজউক ভবনে, কখনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আবার কখনো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন; কিন্তু ফ্ল্যাটে তারা কবে উঠতে পারবেন- তা এখনও জানেন না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহার এই ফ্ল্যাটে ওঠার তাড়াটা বেশি হওয়ার কারণও আছে শিলা-মাবিয়া-শাকিলদের। তাদের মাথার ওপর যে আরেকটি বোঝা! কথা ছিল সরকারি এ ফ্ল্যাটে ওঠার আগ পর্যন্ত তিন ক্রীড়াবিদের বাসা ভাড়ার টাকা দেবে সরকার। দেয়া শুরুও হয়েছিল। ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাসের ভাড়া বাবদ টাকা দেয়া হয়েছিল স্বর্ণজয়ী তিন ক্রীড়াবিদকে; কিন্তু ১৬ মাস ধরে তারা বাসা ভাড়া বাবদ টাকা পাচ্ছেন না।

গত বছরের এপ্রিলে জাতীয় ক্রীড়া দিবসে পল্টন মাঠে তাদের হাতে চার মাসের ভাড়ার চেক তুলে দিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার। তার কয়েকদিন পরই গণভবনে সফল ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করেন শিলা, মাবিয়া ও শাকিলকে।

ফ্ল্যাট প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত বাসা ভাড়ার টাকা দেয়া হবে এবং সে মোতাবেক এ তিন ক্রীড়াবিদ পুরনো আবাসন ছেড়ে উঠবেন নতুন বাসায়। খিলগাঁওয়ের টিনের ঘর ছেড়ে ওই এলাকায়ই ২২ হাজার টাকা ভাড়ার বাসায় ওঠেন মাবিয়া আক্তার সিমান্ত। মাহফুজা খাতুন শিলাও ২২ হাজার টাকায় বাসা নিয়েছেন মিরপুরে। শাকিল নিয়েছেন গুলশানে। তার বাসা ভাড়া ২৪ হাজার টাকা।

২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুলাই। ২১ মাসের মধ্যে মাত্র ৬ মাস বাসা ভাড়া বাবদ টাকা পেয়েছেন স্বর্ণজয়ী এ তিন ক্রীড়াবিদ। তারা দ্বিতীয়বার দুই মাসের ভাড়া পেয়েছেন বছরখানেক হয়ে গেছে। তাও অনেক দেনদরবারের পর। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে দৌড়ঝাঁপ করে তারা দুই মাসের ভাড়ার টাকা হাতে পান।

রাজউক বলছে, শিলা-মাবিয়াদের ফ্ল্যাট প্রস্তুত। তাহলে কেন তা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না তাদের? রাজউকের উপ-পরিচালক (বোর্ড, পিআর অ্যান্ড প্রটোকল) মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের ফ্ল্যাট প্রস্তুত; কিন্তু ওই ফ্ল্যাটের টাকার বিষয়টি এখনো ফয়সালা হয়নি। ফ্ল্যাটের টাকা সরকার দেবে জানি; কিন্তু আমরা টাকা না পেলে তো তাদের ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে পারি না। আমাদের বোর্ডের সিদ্ধান্ত, টাকা পেলেই ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়া হবে।’

রাজউকের ওই কর্মকর্তা জানান, তিন ক্রীড়াবিদের প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য ৮৪ লাখ টাকার মতো। তার মানে ৩টি ফ্ল্যাটের মূল্য ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। কয়েক দিন আগে শিলা-মাবিয়া রাজউকের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষৎও করেন। ‘ওরা আমার সঙ্গে দেখা করেছে কিছুদিন আগে। আমি এ কথাগুলোই বলেছি। আসলে আমাদের একটা নির্দেশনা লাগবে। প্রধানমন্ত্রী যদি নির্দেশনা দেন, তাহলে এটা প্রতীকী মূল্যেও দেয়া যায়। তিনি যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই সম্ভব; কিন্তু আমাদের তো একটা নির্দেশনা পেতে হবে’- বলেছেন রাজউকের ওই উপ-পরিচালক।

টাকার জন্য শিলা-মাবিয়াদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিচ্ছে না রাজউক শুনে বিস্মিত হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার। আজ (বুধবার) বিকেলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ টাওয়ারে তার কার্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও রাজউক টাকার জন্য কেন তাদের ফ্ল্যাট আটকে রেখেছে তা বুঝলাম না। আমি বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো।’

কিন্তু শিলা-মাবিয়ারা ১৬ মাস ধরে তাদের বাসা ভাড়া বাবদ টাকা পাচ্ছেন না কেন? ভাড়া সরকার দেবে বলেই তো তাদের দামি বাসায় উঠানো হয়েছে। এখন তো তারা বাসা বদলে রীতিমতো বিপাকে। উপস্থিত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাবি হস্তান্তরের পর থেকেই তাদের বাসা ভাড়ার টাকা দেয়া বন্ধ।

কিন্তু যতদিন সরকারি ফ্ল্যাটে তারা না উঠবে ততদিন বর্তমান বাসার ভাড়া দেবে সরকার- এমনই তো কথা ছিল। মনে করিয়ে দেয়ার পর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কথা বলবো।’ জাগোনিউজ