আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
রাজউককে ভবন মালিকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণে মালিকপক্ষ/ডেভেলপাররা নকশার অনুমোদন নিলেও বসবাসের জন্য ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ নিচ্ছেন না। ভবনের অর্ধেক বা সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পর রাজউককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরাসরি বসবাস শুরু করছেন। এতে বছরের পর বছর রাজউকের খাতায় ভবনগুলো নির্মাণাধীন দেখানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজউকের নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করার মনোভাব ভবন মালিকদের একদিনে গড়ে উঠেনি। ভবন নির্মাণের পর বসবাসের জন্য ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের’ নামে আবারো হয়রানির শিকার হতে চান না ভবন মালিকরা। জানা যায়, রাজউকের মূল কাজ নগর উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বসবাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করা। কিন্তু সেই মূল কাজ থেকে সরে রাজউক নিজেরাই প্লট-ফ্ল্যাট বাণিজ্যে নেমে পড়েছে। এই বাণিজ্যিক কাজে কর্মকর্তারা নিজেদের ব্যস্ত রাখায় নগরীতে নির্মাণাধীন ভবনগুলো নিরাপদ কিনা সেদিকে নজর দিতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজউকের পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োজিত। এসব কর্মকর্তা ৩ বছরের বেশি এখানে থাকতে পারেন না। এ কারণে তারা যোগদান করেই প্লট-ফ্ল্যাট বাণিজ্যে নেমে পড়েন এবং অবৈধপথে অর্থ উপার্জন করেন। সেখানে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের দিকে নজর দেয়ার সময় নেই তাদের। ভবন নির্মাণের বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্মাণাধীন ভবনের অর্ধেক কিংবা সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পর বসবাসের জন্য একটি সনদ নিতে হবে, যেটিকে বলা হয় ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’। এই সনদের অর্থ হচ্ছে ভবনটি নিরাপদ, বসবাসযোগ্য। এই সার্টিফিকেট না নেওয়ার আগ পর্যন্ত এ ভবনে বসবাস অবৈধ। অবশ্য নগরীর বেশিরভাগ ভবন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই অবৈধ কাজই করা হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর মাতুয়াইলে কয়েকটি নতুন ভবন নির্মাণ হয়েছে। এসব ভবনে বসবাসও শুরু করেছেন। কিন্তু বসবাসের জন্য তাদের কাছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেই। এ বিষয়ে ভবন মালিক ফয়জুল্লাহ আহমেদ (খোকন) আমার সংবাদকে বলেন, রাজউকের নকশা অনুমোদন নিতে ঘুষ-হয়রানি তো আছেই এরপরও মাসের পর মাস কর্মকর্তাদের রুমে রুমে ঘুরতে হয়।

অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে আর হয়রানির মুখে পড়তে চাই না। রাজউক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রতিনিয়ত গ্রাহকরা সেবা পাওয়ার নামে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন। টাকা দিলে যেকোনো বাড়িই ব্যবহার উপযোগী বলে সনদ পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬-এর ১২ নম্বর ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী আটতলা উচ্চতার বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবনের সামনে কমপক্ষে ২৫ ফুট এবং ছয়তলা উচ্চতার বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকা বাধ্যতামূলক। এ বিধিমালার ৮ নম্বর বিধির ৫ উপবিধি অনুযায়ী উল্লিখিত ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী সড়কের কেন্দ্র থেকে কমপক্ষে চার দশমিক পাঁচ মিটার অথবা সড়কসংলগ্ন ইটের সীমানা থেকে এক দশমিক পাঁচ মিটার দূরে ভবন নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু নগরীর বেশিরভাগ ভবন নির্মাণে এসবের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। রাজউকের অনুমোদিত নকশা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে না। এজন্য ভবন মালিকরা রাজউকের কাছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনও করেন না। রাজউক কর্মকর্তারা এসব কর্মকা- দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছেন। রাজউকের এই ব্যর্থতার ফলে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে। এছাড়া, পাঁচ বছর পরপর ব্যবহার সনদ নবায়ন করার বিধান আছে। নবায়নের সময় রাজউক সরেজমিন দেখতে পারত এই সময়ের মধ্যে ভবনটিতে কোনো ত্রুটি দেখা দিয়েছে কি না এবং তা বসবাসের জন্য নিরাপদ আছে কি না। কিন্তু মূল সনদই যেখানে নেয়া হয় না সেখানে নবায়নের তো প্রশ্নই থাকে না। ফলে রাজউক সেই ভবনের বসবাসযোগ্যতা নিরূপণের সুযোগও পায় না। এভাবে অনেক ভবনে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন।

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশোধিত ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ভবন মালিকরা যেন ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ নেন এজন্য রাজউক কয়েকবার সার্কুলার দিয়েছে, লিফলেট বিতরণ করেছে। এছাড়াও আগামী সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১ মাসব্যাপী জনসচেতনতা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এই অনুষ্ঠানে সকল শ্রেণির মানুষ উপস্থিত থাকবেন। মাঠপর্যায়ে রাজউকের পরিদর্শক রয়েছেন। তারা প্রতিটি ভবন মালিকদের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেওয়ার কথা বলছেন। গত ৪-৫ মাসে এই বিধিমালার প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে এবং মনিটরিংও করা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো- রাজউক আগে এই বিষয়ের ওপর ততটা জোর দেয়নি। এ বিষয়ে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ভবন নির্মাণে রাজউক যখন নকশার অনুমোদন দেয় তখন একটি চিঠিও দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেয়ার কথাটি রয়েছে। এই সার্টিফিকেট ছাড়া ভবনে বসবাস করা অবৈধ। এমনকি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইনের সংযোগ ভবনে দেয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ভবন মালিকরা নকশা অনুযায়ী বিল্ডিং নির্মাণ করেন না। এজন্য অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নেওয়ার আবেদনও করেন না। কারণ অকুপেন্সি সার্টিফিকেট চাইতে গেলেই রাজউকের পরিদর্শক ভবনে যাবেন এবং নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কিনা সেটি দেখবেন। তখন ভবন মালিক সমস্যায় পড়বেন। এজন্য বিভিন্ন কৌশলে সেবা সংস্থাগুলোকে ম্যানেজ করে মালিকপক্ষ/ডেভেলপাররা সংযোগগুলো নিয়ে থাকেন। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিশ্চিতে রাজউককে কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।