
কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতের তীর ঘেঁষে স্বপ্নের আবাস গড়তে চেয়ে প্রবাসের এক দণ্ডিত অপরাধীর কবলে পড়েছেন শতাধিক বাংলাদেশি। এর মধ্যে ডজনখানেক প্রবাসী নারীও রয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের সবাই তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেন সংশ্লিষ্ট একটি প্রকল্পে। এরপর ফ্ল্যাট-প্লট বুঝিয়ে দিচ্ছি দিচ্ছি করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নানা টালবাহানায় বছরের পর বছর কেটে গেছে তাদের। স্বপ্নের আবাসন এখন তাদের সামনে গুড়েবালি হয়ে দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ সরেজমিনে কথিত প্রকল্প এলাকা দেখতে গিয়ে আরও হতাশ হয়েছেন। প্রকল্পের কোনো চিহ্নই দেখতে পাননি তারা। বাস্তবিক এ অবস্থা সত্তেও কয়েকজনকে ভিলার দলিল প্রদান করা হয়েছে! ভুক্তভোগীদের একজন হচ্ছেন কমিউনিটি লিডার ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া। তিনি ওই প্রকল্পে এক কোটি সাড়ে ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রতিশ্রুত জমিতে নির্মিত ভবনের দোতলায় অ্যাপার্টমেন্ট, সমুদ্র সৈকতের দিকে মুখ করে বারান্দা, কলকল ধ্বনিতে সকাল-সন্ধ্যা সময় কাটাবেন, প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করবেন এমন লোভনীয় কথায় টাকা দেন ডা. ওয়াদুদ। এরপর চলে গেল প্রায় ৭ বছর। আর কোনো খবর নেই। গত বছর বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় তিনি কক্সবাজারে কথিত প্রজেক্ট সাইটে গিয়েছিলেন সরেজমিন বাস্তবতা দেখার জন্য। সেখানে একটি বিল্ডিং দেখেছেন তিনি। তবে সেটি আগে ছবিতে দেখা প্রকল্পের ধারেকাছেও নেই। অর্থাৎ ষোলোআনাই মিছে বলে মনে হচ্ছে তার।
এ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ ডা. ওয়াদুদ বলেন, ‘অনেক কষ্টের টাকা আমার। তা কেউ হজম করতে পারবে না। ধৈর্য ধরেছি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে যা করা দরকার তা করতে পিছপা হব না।’
প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন ভেবে গত ১০ জুলাই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর একটি দরখাস্ত দিয়েছেন সাহিদা বেগম, নাহিদ জামান এবং নূর কানিজ ফাতিমা। তারা অভিযোগ করেছেন যে, অ্যাপার্টমেন্ট প্রদান করা সম্ভব না হলে বিনিয়োজিত অর্থের ওপর বাংলাদেশের রেট অনুযায়ী লাভ দেওয়ার চুক্তিপত্র রয়েছে। সেটিও পালন করেনি ওই প্রকল্পের নিউইয়র্কস্থ কর্মকর্তা। অধিকন্তু সে পুলিশ ডেকে ভয় দেখিয়েছে। প্রতারণার যতগুলো পন্থা রয়েছে-সবগুলোকেই ব্যবহারের চেষ্টা করছে বলে ভিকটিমরা উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিন অফিসে এসে।
তারা বলেছেন, ‘বরঞ্চ ওই কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী নানাভাবে আমাদের অপমান, তিরস্কার এবং হয়রানি করেছেন। আবার কাউকে কাউকে প্রলোভন ও আশ্বাস দিয়েছেন এই বলে যে, প্রকল্পের কাজ মোটামুটি শেষের দিকে এবং ইচ্ছা করলে বিলাসবহুল স্যুইটে তারা অবস্থান করতেও পারেন। এমন কথায় আস্থা রেখে কয়েকজন বিনিয়োগকারী কক্সবাজারের ওই স্থানে যান এবং প্রকল্পটির বাস্তব দৈন্যদশা দেখে চরমভাবে হতাশ হন।’
ভিকটিমরা আরও উল্লেখ করেছেন, ‘তিনি (প্রকল্পের কর্মকর্তা) কিছু গ্রাহককে বলেছিলেন যে, সরেজমিন পরিদর্শন শেষে যদি তারা সন্তুষ্ট না হন, তবে চাওয়া মাত্রই তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী হতাশাগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা অর্থ ফেরত চাইলে কথিত দম্পতি তাদেরকে চরম অপমানপূর্বক অফিস থেকে বের করে দেন।’
এ ব্যাপারে ভিকটিমরা প্রবাসীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ফেডারেল ক্রিমিনাল হিসেবে দণ্ডিত ব্যক্তির মিষ্টি কথায় আর কেউ যেন পা না বাড়ান। তাহলে আমাদের মতোই প্রতারণার শিকার হতে হবে।’
এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসেও দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত চলছে আরও কয়েকটি সংস্থার পক্ষ থেকে। কারণ, বিশেষ একটি চক্র নবউদ্যমে একইভাবে সহজ-সরল প্রবাসীদের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ার ফাঁদ পেঁতেছে বলে নির্ভরযোগ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানা গেছে। এই চক্রের আনাগোনা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, পার্কচেস্টার, চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এবং এস্টোরিয়ায় বলেও সূত্রটি উল্লেখ করেছে। এ অবস্থায় উপরোক্ত ভিকটিমরা পরামর্শ দিয়েছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে যেন মার্কিন ডলারকে হিসাব হিসেবে বেছে নিয়ে লিগ্যাল ওয়েতে তা করা হয়। বিনিয়োজিত অর্থ যেন অবশ্যই ট্যাক্সের আওতায় থাকে-সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ সিপিএর পরামর্শ ব্যতীত বিনিয়োগে পা বাড়ানো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন ভিকটিমরা। অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য জানতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও টেলিফোনে না পেয়ে তার নাম প্রকাশ করা হলো। তার বক্তব্য পেলে আরও কিছু তথ্যসহ পুনরায় তা সবিস্তারে প্রকাশ করা হবে। বিডি প্রতিদিন