
কালো টাকা-সাদা টাকার দ্বন্দ্ব যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। আসলে অবৈধভাবে অর্জিত টাকাই কালো টাকা। আর বৈধভাবে অর্জিত কিন্তু হয়তো ঘোষণা করা হয়নি এ ধরনের টাকাকে সত্যিকার অর্থে কালো টাকা বলা যায় না। যেমন- বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের উপার্জিত টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠিয়ে অন্যভাবে পাঠানো, জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় বিক্রয় মূল্য এবং দলিল মূল্যের মধ্যে ব্যবধান আবার কর্মকাল শেষে বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় অথবা ছুটিতে দেশে আসার সময় পকেটে করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে আসা ইত্যাদি, যা আয়কর বিবরণীতে কখনোই প্রদর্শন করা হয় না।
বিগত বাজেটে সরকারের দেয়া সুবিধা অনুযায়ী এই অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে যে কেউ বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয় করতে পারেন। তার জন্য আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ‘১৯বিবিবিবিবি’ ধারা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদান করলে আর ক্রেতাকে এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
মূল বিষয়:
আমাদের ধারণা যে, এ্যাপার্টমেন্ট/ফ্ল্যাট এর ক্রয় মূল্যের উপর ভিত্তি করে কর দিতে হয়। এই ধারণায় আমরা আয়-কে অঘোষিত বা অপ্রদর্শিত রাখি এবং আতঙ্কে থাকি। মূলতঃ ফ্ল্যাটের দাম ও কর দেয়ার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪-এর ‘১৯বিবিবিবিবি’ ধারা অনুযায়ী এ্যাপার্টমেন্ট এর দাম যাই হোক না কেন আপনাকে আয়কর দিতে হবে নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক প্রতি বর্গমিটারে নির্দিষ্ট হারে।
কিভাবে বিনিয়োগ করবেন:
অর্থ আইন ২০১৩ এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪ এর ‘১৯বিবিবিবিবি’ ধারার বিধান অনুযায়ী একজন করদাতার আবাসিক প্রয়োজনে এ্যাপার্টমেন্ট/ফ্ল্যাট এর অবস্থানভেদে করের হার নিম্নরূপ:
নং
এলাকা ভিত্তিক বাড়ি/এ্যাপার্টমেন্ট এর অবস্থান
আয়তন (বর্গমিটার)
করের হার
১.
গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বা/এ, দিলকুশা বা/এ
২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে
প্রতি বর্গমিটার ৫,০০০/-
২০০ বর্গমিটারের অধিক হলে
প্রতি বর্গমিটার ৭,০০০/-
২.
ঢাকা ঃ ধানমন্ডি আ/এ, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আ/এ, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা এবং নিকুঞ্জ।
চট্টগ্রাম ঃ পাঁচলাইশ, খুলশি, আগ্রাবাদ এবং নাসিরাবাদ
২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে
প্রতি বর্গমিটার ৪,০০০/-
২০০ বর্গমিটারের অধিক হলে
প্রতি বর্গমিটার ৫,০০০/-
৩.
ক্রমিক নং- ১ ও ২ এ বর্ণিত এলাকা ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনভূক্ত এলাকায়
২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে
প্রতি বর্গমিটার ২,০০০/-
২০০ বর্গমিটারের অধিক হলে
প্রতি বর্গমিটার ৩,০০০/-
৪.
জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা
২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে
প্রতি বর্গমিটার ১,০০০/-
২০০ বর্গমিটারের অধিক হলে
প্রতি বর্গমিটার ১,৫০০/-
৫.
অন্যান্য এলাকায়
২০০ বর্গমিটারের মধ্যে হলে
প্রতি বর্গমিটার ৭০০/-
২০০ বর্গমিটারের অধিক হলে
প্রতি বর্গমিটার ১,০০০/-
অঘোষিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়সমূহ:
-যে বছর রেজিষ্ট্রেশন সমাপ্ত হয়েছে সে বছরের সাথে সংশ্লিষ্ট কর বছরে এরূপ বিনিয়োগ প্রদর্শন করতে হবে।
-কোন করদাতা যদি ইতোপূর্বে দেশের যে কোন সিটি করপোরেশন এলাকায় কোন এ্যাপার্টমেন্ট এর মালিক হন তাহলে এ পদ্ধতিতে নতুন কোন বিনিয়োগের ঘোষণা প্রদান করলে ঐ করদাতাকে এ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উপরোক্ত সারণী অনুযায়ী প্রদেয় করের অতিরিক্ত ২০% কর প্রদান করতে হবে।
-পরিপত্র-১ (আয়কর)/২০১৩ এর শর্ত মোতাবেক অর্জিত অর্থ এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যাবে না।
-বিনিয়োগ সংক্রান্ত কর প্রদানের এ বিধানটি ঐচ্ছিক।
-বাণিজ্যিক বাড়ি বা এ্যাপার্টমেন্ট এর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রদর্শন করা যাবে না।
[সূত্র : পরিপত্র-১(আয়কর)/২০১৩]
সুতরাং অঘোষিত অর্থে যে কোন মূল্যের একটি এ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করলেই বেশী কর দিতে হবে তা নয়, কর দিতে হবে উপরোল্লিখিত প্রতি বর্গমিটার কর হার অনুযায়ী, দাম যাই হোক না কেন।
আয়কর ২০১৩ সালে অধ্যাদেশ-১৯৮৪-এ নতুনভাবে সংযোজিত ‘১৯বিবিবিবিবি’ ধারার বিষয়সমূহ বিবেচনার দ্বারা এবং আয়কর আইনজীবির সাথে পরামর্শক্রমে আপনি আপনার অঘোষিত অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনার সারা জীবনের স্বপ্ন- খুব সহজেই একটি এ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করতে পারেন।