আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
আবাসন কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকি: তদন্তে এনবিআর

দেশের আবাসন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার কাঙ্ক্ষিত হারে ভ্যাট পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। হিসাবপত্রে কারসাজির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশাল অঙ্কের এই ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসব আবাসন প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটনে বিশেষ তদন্ত শুরু করেছে। সন্দেহভাজন অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ৫টি আবাসন কোম্পানির নথিপত্র পরীক্ষা করে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওই অর্থ পরিশোধের জন্য ইতোমধ্যে দাবিনামা জারি করা হয়েছে। অবশ্য এ ধরনের নিরীক্ষাকে হয়রানি বলে মনে করছেন আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব এ বিষয়ে এনবিআরকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে বলে সূত্র জানায়।

এনবিআর সূত্র জানায়, গত প্রায় দুই মাস আগে প্রথম ধাপে ২০টি প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা তৈরি করে ভ্যাট নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা বিভাগ। এনবিআর গঠিত টাস্কফোর্সের অধীনে বিশেষ তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো শেলটেক লিমিটেড, বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট, ডম-ইনো, রূপায়ন রিয়েল এস্টেট, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট, সুবাস্তু ডেভেলপমেন্ট, সিটি হোমস, আফতাব রিয়েল এস্টেট, এএনজেড প্রোপার্টিজ, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন, জাপান গার্ডেন সিটি, প্যারাডাইজ হোমস, আমিন মোহাম্মদ প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস, এনা প্রোপার্টিজ, এডভান্সড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস, বে ডেভেলপমেন্ট, নাভানা রিয়েল এস্টেট, অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড হোল্ডিংস, দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স ও মোমেন রিয়েল এস্টেট।

এদিকে সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ থেকে ৩৫টি আবাসন কোম্পানির তালিকা করে এসব প্রতিষ্ঠানে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিগত পাঁচ বছরের আবাসন সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ, বিক্রিসহ হিসাব চাওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ খাতের সব কোম্পানিকে নিরীক্ষার আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোর ভ্যাট পরিশোধের হালনাগাদ তথ্য, প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সনদ, অডিট ফার্মের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন, ২০১১ সাল থেকে হালনাগাদ পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রির নিবন্ধনের কপি, দাখিলপত্র, ক্রয়-বিক্রয়ের নথি, আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের চালান এবং ভ্যাট চালান, বিক্রি বা সরবরাহ হিসাব নথি ও ট্রেজারি চালানের কপিসহ ভ্যাটসংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

এনবিআরের আওতাধীন ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটও আলাদাভাবে আবাসন কোম্পানিগুলোর ভ্যাট ফাঁকি তদন্তে কাজ করছে। ঢাকা দক্ষিণের ভ্যাট কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আবাসন কোম্পানিগুলোর ভ্যাট ইস্যু নিয়ে প্রথম উদ্যোগ এই কমিশনারেট থেকেই নেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে ৫টি আবাসন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ নিরীক্ষা করে ৬৫ কোটি টাকার দাবিনামা জারি করা হয়েছে।

ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ে বিভিন্ন ধাপে ভ্যাট রয়েছে। বর্তমানে ১৬শ’ বর্গফুট পর্যন্ত ফ্ল্যাটের বিক্রয়মূল্যের উপর ভ্যাটের হার ২ শতাংশ। আর ১৬শ’ বর্গফুটের বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের ভ্যাটহার সাড়ে চার শতাংশ। আর আকার নির্বিশেষে একই ফ্ল্যাট দ্বিতীয়বার বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট ২ শতাংশ। রিহ্যাব সূত্র জানিয়েছে, সদস্যভুক্ত আবাসন কোম্পানির সংখ্যা ১ হাজার ২শ’। তবে এর মধ্যে প্রায় ৮শ’ প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর রিহ্যাবের সদস্য বহির্ভূত আরো প্রায় দেড় হাজার আবাসন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ভ্যাট ফাঁকি দিতে অনেকেই প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম নিবন্ধন মূল্য দেখান। আবাসন খাতের উদ্যোক্তা ও ক্রেতারা মনে করেন, ভ্যাট ও নিবন্ধন ফি অত্যধিক হওয়ায় অনেকে এ পথ বেছে নেন। এসব ক্ষেত্রে ভ্যাটহার ও নিবন্ধন ফি সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনার দাবিও দীর্ঘদিনের। ইত্তেফাক