
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মোগরখাল এলাকায় ‘হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র’ থেকে গতকাল শুক্রবার রাতে ১৭ নিবাসী পালিয়ে গেছে। ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে গাজীপুর ও মির্জাপুর থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
সূত্র জানিয়েছে, নদী, লুৎফুন, আফিয়া ও চামেলীকে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার পুলিশ এবং তানিয়া, রীনা, লাইজু, লামিয়া, শাবানা, সুরমা, জেসমিন ও বৃষ্টিকে মির্জাপুর থানার পুলিশ আটক করে।
আবাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও পুলিশ জানায়, ঢাকা বাইপাস সড়কের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মোগরখাল এলাকায় নারী, শিশু ও কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র নামের একটি সেফহোম রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মামলার আসামিদের নিবাসী হিসেবে বন্দী রাখা হয়। ওই কেন্দ্রে বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তার হওয়া ৩৪ জন নিবাসী রয়েছে, যাদের সবার বয়স ১৮ বছরের নিচে।
গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই কেন্দ্রের ভবনের দ্বিতীয় তলার ২০৫ নম্বর কক্ষের গ্রিল ভেঙে ফেলে বন্দীরা। পরে কৌশলে বিছানার চাদর ও ওড়না বেঁধে নিচে নেমে ১৭ জন নিবাসী বিচ্ছিন্নভাবে পালিয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তদারক করতে গিয়ে ২০৫ নম্বর কক্ষে গিয়ে কাউকে পাননি। তখন জানার গ্রিল ভাঙা দেখতে পান। পরে কেন্দ্রের কর্মকর্তারা রাতেই বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। তথ্য পেয়ে জয়দেবপুর থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাসন সড়ক এলাকা থেকে তিনজন এবং ওই কেন্দ্রের পেছনের দিকের সড়ক থেকে একজনকে আটক করে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক জানান, সেফহোম থেকে পালিয়ে রাতে ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গগামী একটি ট্রেনে ওঠে কয়েকজন। ট্রেনে তারেক সালমান নামের এক হোটেল কর্মচারীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। পরে তারা মির্জাপুর রেলস্টেশনের নামে। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আটজন কিশোরী রেলপথ ধরে হাঁটছিল। এ সময় আশপাশের লোকজনের কাছে তাদের আচরণ ও কথাবার্তা সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ মির্জাপুর রেলস্টেশন থেকে ওই আটক কিশোরীকে আটক করে।
ওই কেন্দ্রের সুপার জোবাইদা খাতুন প্রথম আলোকে জানান, নিবাসীরা কৌশলে খাটের লোহার পায়া খুলে সেটি দিয়ে জানার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যায়। রাতে তদারক করতে গিয়ে তাঁদের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে বিষয়টি থানা-পুলিশকে অবহিত করা হয়। পুলিশ গাজীপুর ও মির্জাপুর থেকে ১২ জনকে আটক করেছে।
এদিকে সেফ হোম থেকে বন্দী পালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, গাজীপুর জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শাহানাজ আক্তারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, বন্দী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে। বাকি দুই সদস্য হলেন গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তোফাজ্জল হোসেন ও গাজীপুর জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শাহানাজ আক্তার। আগামী তিন কার্যদিবসে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, পালিয়ে যাওয়া কিশোরীদের মধ্যে ১২ জনকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। অন্যদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। পরবর্তী সময়ে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে কর্মকর্তাদের সতর্ক পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। প্রথম আলো