আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
গড়ে উঠছে নতুন জনপদ, বাড়ছে জমির দাম

একাধিক ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দৃশ্যমান মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে দ্রুত গড়ে উঠছে নতুন বসতি। বাড়ছে জমির দাম।

এক দশক আগেও এলাকাটি ছিল জলাভূমি। তাতে মিলত কই, শিং, ট্যাংরা, পুঁটি থেকে নানা জাতের দেশি মাছ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের মনেই ছিপ দিয়ে মাছ ধরার স্মৃতি এখনো জীবন্ত। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। পুরো এলাকা ছেয়ে গেছে সুরম্য অট্টালিকায়। তাতে সংসার পাতা শুরু করেছে অনেক মানুষ। মিরপুরের ১৩, ১৪, ১৫ নম্বর সেকশনের একটা বড় অংশজুড়ে এলাকাটির অবস্থান। স্থানীয়ভাবে জায়গাটি বাইশটেকী নামেই পরিচিত।

গত শনি ও রোববার বাইশটেকী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সাত-আটটি বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান এই বিশাল এলাকাজুড়ে কাজ করছে দিন-রাত। ব্যক্তি উদ্যোগেও গড়ে উঠছে অসংখ্য বাসাবাড়ি। মিরপুর-১৪ পুলিশ কমিউনিটি হলের পেছনের সড়কের পাশ ঘেঁষে রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, বিজয় রাকিন সিটি গড়ে তুলছে। ৫০ বিঘা জায়গাজুড়ে ১ হাজার ৯৫০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কথা হয় আবাসন প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানেজার নাজমুল হাসান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ পরিবর্তনটা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। চার বছর আগেও অঞ্চলটি মিরপুরের নিম্নাঞ্চল বলে পরিচিত ছিল। জলা-জঙ্গলে আকীর্ণ পুরো অঞ্চলে পাওয়া যেত মাছ। বছরে একবার ধানের আবাদ হতো। কিন্তু এ কথা এখন বললে কারও বিশ্বাসই হবে না। ক্রেতাদের দারুণ সাড়া পাচ্ছি। আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ ফ্ল্যাট ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।’

বিজয় রাকিন সিটির পাশ ঘেঁষে ২৮ বিঘা জমিতে আরেকটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলছে নাভানা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। ১ হাজার ৬০০ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের এ প্রকল্পের ৩০০ অ্যাপার্টমেন্ট ইতিমধ্যে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাভানা রিয়েল এস্টেটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রূপসী বাংলা আবাসন, জয়নগর আবাসন (সরকারি) সহ একাধিক ছোট-বড় আবসন প্রকল্প গড়ে উঠছে এলাকাজুড়ে।

যেকোনো এলাকায় বসতি গড়ে ওঠার নেপথ্যের কারণ ভালো যোগাযোগব্যবস্থা। এ কারণেই পুরো এলাকাটিতে দ্রুত বসতবাড়ি গড়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন একাধিকজন। মিরপুর-১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর থেকে খুব সহজেই মিরপুর-১০ হয়ে নগরের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া যায়। এ ছাড়া সম্প্রতি মেট্রোরেল প্রকল্প দৃশ্যমান হওয়ায় উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের কাছে বসতি স্থাপনের জন্য এলাকাটি বেশ পছন্দের হয়ে উঠেছে।

কথা হয় ফ্ল্যাট কিনতে আসা একটি বেসরকারি কোম্পানির নির্বাহী নির্মল কুমার রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল আসছে। তাই আশপাশে ফ্ল্যাট দেখছি। দ্রুত কিনতে চাই। দিন যত যাচ্ছে দাম বাড়ছে। এখানে পরিবেশটিও ভালো।’

এ প্রসঙ্গে নাভানা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ অঞ্চলটির আশপাশে সাত-আটটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবস্থান হওয়ায় উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা এলাকাটিতে দ্রুত বসতি স্থাপন করছে। এখন নাগরিকদের নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করা গেলে এটি মধ্যবিত্তের অভিজাত এলাকায় পরিণত হবে।

এলাকাটি থেকে হাঁটাপথ দূরত্বে স্কলাসটিকা, এস ও এস হারম্যান মেইনার কলেজের মতো অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এ ছাড়া মনিপুর স্কুল ও কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজেও খুব সহজেই যাওয়া যায়।

এদিকে নতুন বসতি গড়ে উঠতে থাকায় পুরো অঞ্চলে বাড়ছে জমির দাম, হয়ে উঠছে আকাশছোঁয়া। স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দশক আগেও এসব নিচু জমির দাম ছিল প্রতি কাঠা চার-পাঁচ লাখ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকায়। আর উঁচু জমি অবস্থানভেদে প্রতি কাঠা ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার জামাল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, এটা পুরোটাই ছিল নিম্নাঞ্চল। বস্তি এলাকা বলে পরিচিত ছিল। আশপাশের রাস্তাঘাট ও ফুটপাতের ব্যাপক উন্নয়ন ও মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে দৃশ্যপট বদলে গেছে, বেড়েছে জমির দাম। প্রথম আলো