
মহানগরীর ব্যস্ততম কমার্শিয়াল জোন (বাণিজ্যিক এলাকা) কেডিএ এভিনিউ। এখানে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক স্থাপনা থাকার কথা থাকলেও অবৈধভাবে বসবাসের জন্য বেশকিছু বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে নিরাপত্তার ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি অপরিকল্পিত আবাসনে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেডিএ এভিনিউতে কমার্শিয়াল জোনে নবনির্মিত হাতিল ভবনের ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম তলা আবাসিক ফ্ল্যাট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি কক্ষে ভাড়াটিয়া বসবাস শুরু করেছেন। একইভাবে সড়কের অপরপাশে ইমু টাওয়ারে ৬ষ্ঠ তলা আবাসিক ফ্ল্যাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অ্যাপোলো ফার্নিচার ভবনেও আবাসিক ফ্ল্যাট হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনুমতি না নিয়েই বাণিজ্যিক ভবনে ছাত্রী হোস্টেল করা হয়েছে। জানা যায়, কমার্শিয়াল এলাকায় ব্যাংক-বীমাসহ নানা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, এটিএম বুথ, গুরুত্বপূর্ণ অফিস, সেলস্ সেন্টার থাকে। রাতের বেলায় আবাসিকভাবে বসবাস শুরু হলে পুরো এলাকাই অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। তবে খুলনার বাণিজ্যিক এলাকাকে আবাসিককরণের হাত থেকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. গাউসুল আজম জানান, মহানগরীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েকটি এলাকাকে আবাসিক, কিছু এলাকা বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ও কিছু এলাকাকে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক এলাকা করা হয়েছে। কিন্তু কেডিএ এভিনিউ বাণিজ্যিক এলাকা হলেও কয়েকটি ভবনে আবাসিক হিসেবে বসবাস শুরু হয়েছে। যা প্রতিনিয়ত জনমনে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। নাগরিক নেতাদের মতে, এসব ভবনে আবাসিক বসবাসের ফলে প্রতিদিনের রান্নার কাজ চলে। যদি কোনো কারণে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে তাহলে ভবন মালিকদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে।
সূত্র জানায়, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে আবাসিক স্থাপনার অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিকসহ কমার্শিয়াল বা শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তেমনি কমার্শিয়াল জোনে শুরু হয়েছে আবাসিক বসবাস।
কেডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আধুনিক ও পরিকল্পিত খুলনা শহর নির্মাণে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। বাণিজ্যিক ও অর্থনেতিক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির জন্য ৬০.৭৪ একর জমিতে বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। বাণিজ্যিক এলাকাগুলো হচ্ছে- কেডিএ এভিনিউ (শিববাড়ী মোড় হতে রয়েল মোড়), জলিল সরণি (খুলনা-যশোর রোড হতে রায়েরমহল পর্যন্ত), যশোর রোড হতে স্টিমার ঘাট পর্যন্ত সড়ক (জব্বার সরণি), এম এ বারী সড়ক, যশোর রোড হতে তেলিগাতী পর্যন্ত সড়ক (টিটিসি সড়ক), শিরোমণি সড়ক, বাস্তুহারা হতে সিটি বাইপাস পর্যন্ত সংযোগ সড়ক। যদি এসব স্থানে কোনো আবাস গড়ে ওঠে তা প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে কেডিএ বাণিজ্যিক প্লটের মালিক চৌধুরী হারুনুর রশীদ বলেন, খুলনা শহরের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখনো তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। এছাড়া ভবনগুলো লিফটসহ সেই মানের সুবিধা না থাকায় ৪র্থ তলার ওপরে অধিকাংশই ফ্ল্যাটই বছরজুড়ে শূন্য থাকে। এ কারণে আর্থিক ক্ষতি মেটাতে ভবনের মালিক আবাসন হিসেবে ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া শুরু করেছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেছেন, বাণিজ্যিক জোনের পরিবেশ বজায় রাখতে এ ক্ষেত্রে কেডিএ’কে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক স্থাপনায় আবাসন গড়ে উঠেছে।