
গ্যাসের পর এবার বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত পাইকারি ও সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শুনানির পর বিইআরসির টেকনিক্যাল কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে দাম বাড়ানোর বিষয়ে মূল্যায়ন দেবে। আইন অনুযায়ী গণশুনানি শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাম সমন্বয়ের ঘোষণা করবে বিইআরসি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ (৭২ পয়সা)
বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আর বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ৮ থেকে ১২ শতাংশ হারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে ২০১০ সালের ১লা মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর।
এখন দেশে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদনমূল্য ৫ টাকা ৫৯ পয়সা। এর সঙ্গে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় যুক্ত করে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গড় দাম পড়ে ৬ টাকা ৭৩ পয়সা। কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়ানো হলে প্রতি ইউনিটের গড় দাম হবে ৭ টাকা ৭১ পয়সা। বিদ্যুতের দাম ছাড়াও দু-একটি বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে ডিমান্ড চার্জ ও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বলে সূত্র জানায়। বর্তমানে প্রতিটি মিটারে প্রতি মাসে ৩০ টাকা করে ডিমান্ড চার্জ ও ১০ টাকা করে সার্ভিস চার্জ ধার্য আছে। এটা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৪০ টাকা ও ২০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে কোনো কোনো বিতরণ কোম্পানি।
দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের যৌক্তিকতা সম্পর্কে কর্মকর্তারা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির (গ্যাস) দাম বাড়ানো হয়েছে। অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে তেলও (ফার্নেস অয়েল) কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদনমূল্য বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি পড়ছে। সরকারকে এখনো বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাই দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।
গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, গ্যাসের দামটা একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা বিদ্যুতের দামও সমন্বয় করতে চাই।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি তো নেই-ই, বরং দাম কমানোর সুযোগ আছে। সরকারও বলেছিল ২০১৩-১৪ সালে দাম কমানোর কথা। সেটা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তার দায়ভার গ্রাহকের ঘাড়ে চাপানো তো অনৈতিক।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে তেমন কমানো হয়নি। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম প্রতিকিলোওয়াট ২ থেকে আড়াই টাকার উপরে হওয়ার কথা নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিদ্যুতের দাম কম রাখা হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে দেশের ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে একমাত্র পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) লোকসান দিচ্ছে। অন্য চারটি কোম্পানি লাভজনক। এই কোম্পানিগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিতরণ অঞ্চল, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডেসকো) এবং পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুত এর মূল্যবৃদ্ধি
তারিখ পাইকারি গ্রাহক
১ মার্চ ২০১০ ৫%
১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১১% ৫%
১ আগস্ট ২০১১ ৬.৬৬%
১ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬.৭৯% ১৩.২৫%
১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৪.৩৭% ৭.০৯%
১ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১৬.৯২% ১৫%
ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ৬.৯৬%
(১৩ মার্চ ঘোষণা)
১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২.৯%