আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
উনিশ প্রকল্পে আট হাজার ১৯০টি সরকারি ফ্ল্যাট হচ্ছে

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ১৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে মোট আট হাজার ১৯০টি বিভিন্ন আকৃতির আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কার্যক্রম বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এসব ফ্ল্যাট সহ মোট ২২ হাজার ৭৫৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ হলে সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সংখ্যার ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ আবাসিক সুবিধা পাবে। ঢাকা শহরে বর্তমানে পদায়িত এক লাখ ৪৮ হাজার ৯১৫ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ এই সুবিধা ভোগ করতে পারছেন। তাই সরকার গণপূর্ত অধিদফতরের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিত্যক্ত বাড়িতে আবাসিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

গণপূর্তের তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকা শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। আবাসন পরিদফতর এ সঙ্কট সমাধান করতে পারছে না। ফলে প্রজাতন্ত্রের জনবলকে বাধ্য হয়ে অধিক মূল্য দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন নিম্নমানের বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ বা ১৮ হাজার ২৭৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে। ইতঃপূর্বে দু’টি প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের জনবলের জন্য শেরেবাংলা নগরে ১৫তলা বিশিষ্ট ৪৪৮টি ফ্যাট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য ২০তলা বিশিষ্ট ৭৬টি ফ্ল্যাটসহ মোট ৫২৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ শেষ করা হয়েছে। গণপূর্ত অধিদফতর চারটি প্রকল্পে এক হাজার ৫১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ সম্পন্ন করে তা হস্তান্তর করেছে।

এ ছাড়া ১৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে আট হাজার ১৯০টি ফ্যাট নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে, সচিব বা প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য ইস্কাটনে ১১৪টি ফ্যাট, মতিঝিলে কর্মচারীদের জন্য ৪৫৬টি ফ্ল্যাট, মিরপুরের পাইকপাড়ায় ৬০৮টি ফ্ল্যাট, মিরপুরের সেকশন ৬-এ এক হাজার ৬৪টি ফ্ল্যাট, মিরপুরে গণপূর্তের খালি জায়গাতে ২৮৮টি ফ্যাট, নারায়ণগঞ্জের আলিনগঞ্জে ৬৭২টি ফ্যাট, মালিবাগে ৪৫৬টি ফ্যাট, ঢাকায় বিভিন্ন স্থানের পরিত্যক্ত বাড়িতে ৩৯৮টি ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামে ৫৯৬টি ফ্ল্যাট, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আজিমপুরে সরকারি কলোনির ভেতরে ১৫টি বহুতল ভবনের মাধ্যমে মোট এক হাজার ১৪০টি বিভিন্ন আকৃতির ফ্ল্যাট এবং পরিকল্পনা কমিশনের কর্মচারীদের জন্য ২২৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম।

সূত্রে জানা গেছে, এই কার্যক্রমেরই একটি অংশ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আজিমপুরে সরকারি কলোনির ভেতরে ১৫টি বহুতল ভবনের মাধ্যমে মোট এক হাজার ১৪০টি বিভিন্ন আকৃতির ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমানে আজিমপুর কলোনিতে (জোন-এ) ৩৩ দশমিক ৬৮ একর জমিতে ৩৬টি পুরনো ভবন বিদ্যমান আছে। যেখানে বর্তমানে ৩৫২টি পরিবার বসবাস করছে। নতুন করে ১৫টি ভবন নির্মাণের জন্য বিদ্যমান ৩৬টি জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হবে। এক হাজার ৮৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। চলতি বছর প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে আগামী ২০২১ সালের জুনে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ দিকে ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, এখানে তিনটি ২০তলা বিশিষ্ট ভবনে ১৮ শ’ বর্গফুটের ২২৮টি ফ্ল্যাট, আটটি ২০তলা বিশিষ্ট ভবনে ১৫ শ’ বর্গফুটের ৬০৮টি ফ্ল্যাট, চারটি ২০তলা বিশিষ্ট ভবনে সাড়ে ১২ শ’ বর্গফুটের ৩০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া মসজিদ, কমন স্পেস, একটি ১২তলা মেকানিক্যাল কার পার্কিং, দু’টি জলাধার এবং ৪০ হাজার মিটার ওয়াকওয়ে ও ফুটপাথ থাকবে। ১৮ শ’ বর্গফুটের বিশ তলা একটি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ১৫ শ’ বর্গফুটের বিশ তলা একটি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ৮৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং সাড়ে ১২ শ’ বর্গফুটের বিশ তলা একটি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ৯২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন ১৮ শ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাট তৈরিতে আপত্তি জানিয়ে বলছে, নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের পর পঞ্চম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা সরকারি ফ্ল্যাটে বসবাস করার উৎসাহ পাচ্ছেন কি-না তা বিবেচনায় নিয়ে ছোট আকারের (১৫ শ’ বা সাড়ে ১২ শ’) অধিকসংখ্যক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যেতে পারে। আর ওখানে বসবাসরত ৩৫২টি পরিবারকে পুনর্বাসন করে তারপর তাদের উচ্ছেদ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ এই প্রকল্প শেষ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত লাগবে।