আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
মন্দা অবস্থা কাটছে না চট্টগ্রামের আবাসন খাতে

মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আবাসন খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ খাতের মন্দা অবস্থা কাটছে না। কখনো স্থবিরতা আবার কখনো মন্দার মধ্যেই ধুঁকছে সম্ভাবনাময় খাতটি। দিন দিন এ খাতের ব্যবসা ও নতুন প্রকল্প গ্রহণের হার কমছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি রেডি ফ্ল্যাট পড়ে আছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) চট্টগ্রাম রিজিওনাল প্রেসিডেন্ট আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী মানবকণ্ঠকে বলেন, আবাসন খাতের অবস্থা বর্তমানে ভালো নয়। ব্যাংক সুদের হার কমানোর কথা বলা হয়েছে কিন্তু এখনো ব্যাংকগুলো তা কার্যকরে পদক্ষেপ নেয়নি। কিছু কিছু ব্যাংক সুদের হার কমালেও এখনো বেশিরভাগ ব্যাংক কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এটা খুবই প্রয়োজনীয়। সামগ্রিকভাবে আবাসন খাতের জন্য সরকার ফান্ড সৃষ্টি না করলে এ সেক্টর ঘুরে দাঁড়াবে না। দিন দিন এ সেক্টর খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
রিহ্যাব সূত্র মতে, চট্টগ্রামে রিহ্যাবের প্রায় দেড় শতাধিক কোম্পানি (ঢাকার কোম্পানিসহ) ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে। চট্টগ্রামে এ খাতে মোট বিনিয়োগ ৫ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে হস্তান্তরযোগ্য এবং নির্মাণাধীন প্রায় ২৭০টি প্রকল্প হন্তান্তর বা নির্মাণ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। যার কারণে বর্তমানে এ শিল্প চরমভাবে আর্থিক ও সমাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কোম্পানির অধীনে প্রায় দশ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট সমস্যাগ্রস্ত। এসব অ্যাপার্টমেন্টের অধীনে ভূমির মালিককে প্রতিমাসে ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ কোটি টাকার মতো। ফ্ল্যাট গ্রহীতাকে মাসিক ভাড়া দিতে হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। তা ছাড়া মাসে ব্যাংকের সুদ দিতে হচ্ছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। বর্তমান সমস্যাগ্রস্ত এসব অ্যাপার্টমেন্টে বিদ্যুতের মোট চাহিদা রয়েছে ৬০ হাজার কিলোওয়াট এবং গ্যাসের সংযোগের প্রয়োজন রয়েছে সাড়ে ৬ হাজারটি।
রিহ্যাব চট্টগ্রামের কো-চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. দিদারুল হক চৌধুরী মানবকণ্ঠকে বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বর্তমান সরকার আসার পর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সরকার আবাসন খাতের প্রতি মনোযোগী হওয়াতে ব্যবসা অনেকটা চাঙ্গা হয়েছে। আবাসন ব্যবসা শুধু বড় মানুষের জন্য নয়। সাধারণ মানুষ যাতে ফ্ল্যাট কিনতে পারে সে চেষ্টায় গ্রামগঞ্জেও ব্যবসা ছড়িয়েছে। সরকার রেজিস্ট্রেশন খরচ কমালে এবং ব্যাংক লোন সহজ করলে আবাসন খাত আবার চাঙ্গা হবে।
চট্টগ্রামের আবাসন খাতের উত্থান ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে রিহ্যাবের বাইরেও শতাধিক আবাসন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে চট্টগ্রামে। তখন প্লট ও ফ্ল্যাটের চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত জমজমাট থাকে আবাসনের বাজার। ২০০৬ সালে মাত্র ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আবাসন খাতের বড় সংগঠন রিহ্যাবের চট্টগ্রাম রিজিওনাল অফিসের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ক্রমান্বয়ে সদস্য সংখ্যা বেড়ে ২০১৩ সালে ১০২টি প্রতিষ্ঠান রিহ্যাবের সদস্য হয়। তবে ২০১৪ সালে আবাসন ব্যবসায় মন্দার সঙ্গে সঙ্গে রিহ্যাবের সদস্য সংখ্যাও কমতে শুরু করে। ২০১৪ সালে ৯৮টি, ২০১৫ সালে ৯২টি এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ৮৭টি প্রতিষ্ঠান রিহ্যাবের সদস্যপদ নবায়ন করে। আবাসন ব্যবসায় মন্দার কারণেই মূলত রিহ্যাবের প্রতিষ্ঠানগুলো সদস্যপদ নবায়ন করা থেকে বিরত থাকে। গত কয়েক বছরে মধ্যবিত্তদের হাতে নগদ অর্থের প্রবাহ কমে যাওয়া ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার ঘোষণা অনুযায়ী সিঙ্গেল ডিজিটে না নামার কারণেই আবাসন খাতের এমন অবস্থা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরো নাজুক পরিস্থিতি পড়তে হবে বলে মনে করছেন তারা।
রিহ্যাব চট্টগ্রামের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কমিটির আহবায়ক এএসএম আবদুল গফ্ফার মিয়াজী বলেন, আবাসন খাত এখন আস্তে আস্তে সমস্যা থেকে উত্তরণের পথে এসেছে। আবাসন খাতকে রক্ষা করতে হলে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য অবিলম্বে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।