
রাজধানীর ঢাকা প্রতিদিন আট হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য জমা হচ্ছে। এ বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস ও জৈবসার উৎপাদন করার কথা বলে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে এর দায়িত্ব দেয়া হয় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এবার বাসাবাড়ির কঠিন বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস জৈবসার উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তার অপতৎপরাতায় রাজধানীর দৈনন্দিন উৎপাদিত বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প গ্রহণ করার পরেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়হীনতাও এর জন্য অনেকটা দায়ী। এ প্রকল্প এখন বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
দু’ডিসিসি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় আট হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ গৃহস্থলির আবর্জনা থাকায় এগুলোকে জৈব সম্পদ বলা যায়, যা থেকে বিভিন্ন ধরনের শক্তি তৈরি করা যায়। এর মধ্যে রাসায়নিক সার, জ্বালানি গ্যাস বা বিদ্যুৎ উল্লেখযোগ্য। এই বিশাল পরিমাণ আবর্জনা রাজধানীর আমিনবাজার ও মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল্ডে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু তা কোন কাজে লাগানো হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনের লক্ষ্যে ২০১২ সালের শেষ দিকে ইতালির ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্স (এসইএল) কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। চুক্তি-পরিবর্তী এক বছরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা থাকলেও বিগত দিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে কমিটির কোনো সভা হয়নি। এমনকি কমিটির অনেক সদস্যই জানেন না প্রকল্পটি এখন কী পর্যায়ে রয়েছে। জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য বর্জ্য জোগান দেয়ার কথা ছিল দুই সিটি করপোরেশনের। আর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে ইতালির ম্যানেজমেন্ট এনভায়রনমেন্ট ফিন্যান্স কোম্পানি। এই প্ল্যান্টে দৈনিক পাঁচ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। যদি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয় সরকার বিদ্যুৎ কিনতে পারবে প্রতি কিলোওয়াট ৮ দশমিক ৭৫ টাকা দরে। প্রকল্পটি তত্ত্বাবধানে থাকবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তির মেয়াদ ২০ বছর। প্রকল্পটির দুটি স্থান ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজার। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ২৫ মেগাওয়াট। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটির প্রধান রয়েছেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব। কমিটিতে আরো থাকবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দুজন অতিরিক্ত সচিব, বিদ্যুৎ সচিব এবং দু’ডিসিসির প্রতিনিধি। কিন্তু তাদের কাজের কোন অগ্রগতি নেই। এমতাবস্থায় রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আবাসন পরিকল্পনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় কঠিন বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন ও জৈবসার প্রস্তুত করা হবে।
জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মিরপুরে স্বপ্ননগর আবাসিক প্রকল্পে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্যুয়োরেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনসহ বড় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে বাসাবাড়ির কঠিন বর্জ্য পৃথক করে তা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা হবে এবং অবশিষ্টাংশ থেকে জৈব সার উৎপাদন করা হবে। এ ছাড়া, রাজউকের উত্তরা এপার্টমেন্ট প্রকল্প, ঝিলমিল এপার্টমেন্ট প্রকল্প ও পূর্বাচলেও অনুরূপ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে কর্তৃপক্ষের প্রতিটি আবাসিক প্রকল্পে এ ব্যবস্থা চালু করে বায়োগ্যাস ও জৈবসার উৎপাদন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন বলেন, নগরাঞ্চলের বর্জ্যকে সম্পদ হিসেবে পরিনত করা সম্ভব। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক উপায়ে রাস্তার পাশে মূল্যবান বর্জ্যপদার্থগুলো ফেলে রাখে। অথচ এগুলো কাজে লাগাচ্ছে না। তাই রাজউক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের প্রকল্পগুলোতে এসব বর্জ্য কাজে লাগিয়ে বায়োগ্যাস ও জৈবসার উৎপাদন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।