আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় কমিউনিটি ভবন নির্মাণ করবে রাজউক

রাজধানীর হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যেখানে পার্ক, খেলার মাঠসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হবে। এছাড়াও ভবনে কমিউনিটি সেন্টার, মার্কেট, ইনডোর  গেমস, সুইমিংপুল, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসসহ একটি কমিউনিটি ভবন নির্মানের ধারণা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজউকের প্রাথমিক জরিপ থেকে দেখা যায় যে, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকাটির আয়তন ৫৯.৩৫ একর। এখানে মোট ইমারতের সংখ্যা ৮৫৫টি, যার মধ্যে শিল্প কারখানা রয়েছে প্রায় ৬০০টি। গবেষণার এ পর্যায়ে এলাকাবাসী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ চলছে বলে জানায় রাজউক। ১৯৪০ সালের  শেষদিকে নারায়ণগঞ্জ  থেকে চামড়া শিল্পের যাত্রা শুরু। পরে শুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং আরো এগিয়ে নিতে ১৯৬০ সালে তা ঢাকার হাজারীবাগে স্থানান্তর করা হয়। হাজারীবাগের ২৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে  ছোট-বড় প্রায় ২৫০ থেকে ২৬০টি ট্যানারি কারখানা গড়ে উঠেছিল। এতে ওই এলাকার পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ট্যানারি শিল্পের চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা আশেপাশের এলাকা ব্যাপকভাবে দূষিত হয়। ফলে আশেপাশের এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। এছাড়া ট্যানারি কারখানা থেকে নির্গত দূষিত বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গা নদীতে নিষ্কাশন করার কারণে নদীর পানির দূষণ মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ট্যানারির কারণে ওই এলাকার বায়ু ও ভূমি দূষণ স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০০১ সালে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কারখানাগুলো সরিয়ে নিতে ২০০৩ সালে সাভারের হরিণধরা এলাকায় ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমির ওপর পরিবেশবান্ধব চামড়াশিল্প নগরী নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ধীরে ধীরে কারখানা গুলো সাভারে স্থানান্তর করার ফলে হাজারিবাগের জায়গাটি উন্মুক্ত হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)-এর প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, হাজারিবাগ ট্যানারি এলাকাকে ভূমি উন্নয়নের মাধ্যমে বসবাসের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে  আমরা চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে গবেষণা করছি যা আগামী মাসে শেষ হবে। এছাড়া অর্থায়নের জন্য ওয়ার্ল্ডব্যাংক ও জাইকার সাথে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা টেনারি মালিক এসোশিয়েসন, এলাকার বাসিন্দা ও নগর পরিকল্পনাবিদদের সাথেও আলোচনা করছি। বিষয়টিকে এলাকাবাসী ও নগর পরিকল্পনাবিদরা স্বাগত জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায়  প্রকল্প হাতে নেয়ার পূর্বে ওই এলাকার ভূমির মান বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করতে হবে। উন্মুক্ত স্থান বা জনসমাগমস্থল যেমন-পার্ক, খেলার মাঠ গুলোতে সকল শ্রেণি-পেশার, বয়স ও পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা রেখে নকশা করতে মতামত দিয়েছেন তারা। পরিবেশকে বাসযোগ্য করার জন্য পর্যাপ্ত জলাধার ও গাছপালা থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার উপযোগী করে ভবন নকশা করতে হবে। ভবনগুলো ভূমিকম্প প্রতিরোধী হিসেবে নির্মাণ এবং সেগুলোতে জরুরি প্রস্থানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এলাকার মধ্যে নির্ধারিত স্থানে সকল গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখে পুরো এলাকাটিতে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে হাটা ও সাইকেল ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল  মোহাম্মদ খান বলেন, হাজারিবাগ একটি ঘনবসতি এলাকা এখানে ভুমি উন্নয়নের নামে হাউজিং করা হলে এই এলাকার মানুষের দম ফেলার জায়গা থাকবে না। তাই এখানে যেন হাউজিং না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। হাজারিবাগ নিয়ে আমরা রাজউককে একটা প্রাথমিক ধারণা দিয়েছি তারা কি করবে আমার জানা নেই।