বনানীর আবাসিক প্লটে এখনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান »
- প্রকাশিত :
- ৫ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার, ২২:২৪:২৮

আবাসিক প্লট থেকে অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীর বনানী এলাকায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে আবাসিক এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) আবারও উদ্যোগী হতে বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অন্যদিকে রাজউক কর্মকর্তারা বলছেন, হলি আর্টিজান হামলার পর রাজধানীর গুলশান, বনানী বারিধারার আবাসিক প্লটে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান আদালতের নির্দেশনা নিয়ে আবারও চালু হয়েছে।
বনানী এলাকায় রাজউকের অনুমতি নিয়ে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ এবং ১১ নম্বর সড়কে বৈধভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু বনানী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বনানী বাজারের আশপাশের বিভিন্ন সড়কেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বেশি। এর বেশিরভাগই চলছে আবাসিক প্লটে।
বনানীর ৬ নম্বর সড়কে স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, ১২ নম্বর সড়কে ওরিয়েন্টাল লাউঞ্জ, পান তাও থাই কুইজিন, দ্যা ভোজ কোম্পানি ঢাকা, মামু মারিয়া, থ্রি ড্রাগনস অ্যাট পার্ল, প্যাভিলিয়ন লাইফস্টাইল লিমিটেড, লিটল শপ, কুমুদিনী হস্তশিল্পের দোকান রয়েছে।

১২/এ সড়কে টেস্টবাড, অ্যাবসলিউট থাই; ১৩/এ সড়কে হোটেল অরচার্ড স্যুইটস, সুডোকো রেস্তরাঁ, লেকশোর বনানী; ১৩/বি নম্বর সড়কে ফুলস ডিনার; ১৩/সি সড়কে তারা; ১৩/ই সড়কে ট্রি হাউজ, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস, কোরিয়ান মার্ট, বিবিকিউ বাংলাদেশ ব্যবসা করছে।১৫ নম্বর সড়কে হোটেল সুইস পার্ক; এনামুল হক চৌধুরী সড়কে সালামস কিচেন, তড়কা, হাক্কা ঢাকা চিলেকোঠা রেস্টুরেন্ট; ১৭ নম্বর সড়কে আল হুমায়রা হেলথ সেন্টার, নরডিক হোটেলস লিমিটেড, শালিমার গার্ডেনস রেস্তরাঁ; ২১ নম্বর সড়কে গ্যালাশিয়া রেস্টুরেন্ট ও বারকোড রেস্টুরেন্ট চলছে।
বনানীর ২৭ নম্বর সড়কে প্যারামাউন্ট ট্রেডিং সেন্টার, আত তিন রেস্টুরেন্ট, পোশাকের দোকান ও-টু, হোটেল ইস্টার্ন রেসিডেন্স, হোম-প্রো এবং র-নেশন নামে কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
২৮ নম্বর সড়কে চাঁদসী মেডিকেল সেন্টার এবং একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। ১৯/এ সড়কে রয়েছে জার, চৌসা রেস্তরাঁ।

এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে বনানীর আবাসিক চিত্র পাল্টে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ২৮ নম্বর সড়কের একজন বাসিন্দা।বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার বাসার সামনে একটি মেডিকেল সেন্টার বানানো হয়েছে। এখানে বিদেশগামী শত শত লোক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে আসে। এখানে প্রায়ই গণ্ডগোল হয়, থামাতে পুলিশও আসে।
“তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যানবাহন রাস্তার ওপরে রাখা হয়, ফলে বাড়ি থেকে বের হতে- ঢুকতেও আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।”
আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কার্যক্রম কীভাবে চলছে জানতে চাইলে চাঁদসী মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম নজরুল ইসলাম কথা বলতে চাননি।

বনানীর ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর বাড়িতে রয়েছে বহুল আলোচিত রেইনট্রি হোটেল। রাজউক কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাদের অনুমোদন না নিয়ে আবাসিক এলাকায় ওই হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে।এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে রেইনট্রি হোটেলের তথ্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়, আমি ভালো জানি না।”
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি পরে যোগাযোগ করবেন বলে। কিন্তু পরে তার কোনো সাড়া আর পাওয়া যায়নি।
২০১৬ সালে রাজউক অভিযান শুরুর পর কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া হয়।
১৩ নম্বর সড়কের ৫৭ নম্বর বাড়ির আজ্জুরি কাসিনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জোয়েব পারভেজ জনি বলেন, তাদের রেস্তরাঁও বনানী থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

“ভবন মালিক আমাদের কমার্শিয়াল ভবন হিসেব করে ভাড়া দিয়েছিল। কিন্তু এখন তো আর সেটা চালাতে পারছি না। বিভিন্ন সময় অভিযান চলায় খুব সমস্যা হচ্ছে। আমরা গুলশানে নিয়ে যাচ্ছি।”বনানী সোসাইটির সভাপতি মো. শওকত আলী ভূ্ঁইয়া ডিলান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিয়মের মধ্যে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু পুরো আবাসিক এলাকায় নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
“নাগরিকদের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট জায়গায় কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ম মেনে থাকতে পারে। কিন্তু যেখানে সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলে লোকজনের অসুবিধা হয়। প্রকৃত বাসিন্দারা চায় না আবাসিক এলাকায় এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকুক।”
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর গুলশান বনানী ও বারিধারা এলাকার ৫৫২টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির কথা জানিয়েছিলেন রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী। সে তালিকা অনুযায়ী সে সময় অভিযান চালায় রাজউক।
গত দুই বছরে কতগুলো প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়েছে, কতগুলো প্রতিষ্ঠান সরে গেছে আর কতগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখনও অবৈধভাবে বনানী এলাকায় ব্যবসা করছে, তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি রাজউক।

তালিকাটি হালনাগাদের কাজ চলছে জানিয়ে রাজউকের অঞ্চল-৪ এর পরিচালক খন্দকার অলিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিটি সড়কেই এখনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে।”রাজউকের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা অভিযান শুরু করার পর অনেক প্রতিষ্ঠান আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসায় তাদের আর উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।
“অভিযান শুরুর পর উচ্ছেদ বন্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে কয়েকশ রিট হয়েছে। আবার পুলিশ না পাওয়ায় সময়মতো অভিযান চালানো যাচ্ছে না। গত তিন মাসে সাতদিন মাত্র পুলিশ পেয়েছি।”
২০১৭ সালের ৫ জুলাই ২৩৭টি রিট আবেদন একসঙ্গে নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্টে বেঞ্চ আবাসিক প্লট থেকে সব অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে দশ মাস সময় দেয়।

সেই ২৩৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুলশান-বনানী এলাকার ১৫৪টি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।রাজউকের অঞ্চল-৪ এর কর্মকর্তারা জানান, আদালতের দেওয়া দশ মাস সময় পেরিয়ে গেলে এ বছরের মে মাস থেকে অভিযান চালিয়ে ১০১টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করেছেন তারা। এদের মধ্যেও কিছু প্রতিষ্ঠান আবার হাইকোর্টে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসায় সেগুলো খুলে দিতে হয়েছে।
রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আমরা তিনবার বন্ধ করেছি। তিনবারই তারা হাই কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছে।”
রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“যেগুলোর বিষয়ে মামলা আছে সেগুলো লিগাইলাইজ করার চেষ্টা করছি। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কোর্টের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কিন্তু নতুন করে যেন কোনো প্রতিষ্ঠান আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কাজ করতে না পারে সেদিকেও আমরা নজর দিচ্ছি।”