
বাংলাদেশ সরকার অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়ার বালুখালিতে অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খুলছে। এই আশ্রয় শিবির থাকবে কাঁটাতার বেষ্টিত। উখিয়ার কুতুপালং-এ ইতিপূর্বে নিবন্ধিত এবং এখন যারা আসছে সকলকে ওই এক জায়গায় নেওয়া হবে। এখানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাদের নিবন্ধন করা হবে। সার্বক্ষণিক ওই আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তায় থাকবে আনসার সদস্যসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত কয়েকদিনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরিণ নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। সর্বশেষ সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯৮ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ১২ হাজার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানান, খাদ্য বা অন্যান্য কারণে রোহিঙ্গারা সারাদেশে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সকলকে একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই জায়গা থেকে কেউ যাতে পালিয়ে দেশের অন্যত্র আশ্রয় না নিতে পারে সে জন্য কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে। আর তাদেরকে সনাক্ত করে রাখতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিষ্ট্রেশন করা হবে।
সচিব আরো জানান, রোহিঙ্গা শিবির পাহারায় আনসার নিয়োগ করা হবে। তবে যে কোন জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেবে। এছাড়া ক্যাম্প স্থাপনের পর নতুন করে স্থানান্তরিতদের গতিবিধি ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল থাকবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আবাসন, খাদ্যসহ নানা সুবিধা নিশ্চিত করার কৌশল ঠিক করতে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসতিয়াক আহমদ, ভূমি সচিব ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কক্সবাজারের ডিসি মো. আলী হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করে দেবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) খাদ্য সহায়তা দেবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রোহিঙ্গাদের আবাসন, খাদ্যসহ সব বিষয়ে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৩৮ হাজার ৪৫৫ জন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। যদিও বাস্তবে ৩৩ হাজার ৫৪২ জন বসবাস করছেন। তাদের থাকার জন্য নির্ধারিত জায়গায় সদ্য অনুপ্রবেশকারী ৫৬ হাজার পাঁচশ’ জনের থাকার ব্যবস্থা করায় দুটি ক্যাম্পে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গারা তিন শিফট করে এসব ক্যাম্পে ঘুমাচ্ছেন। পানি, চিকিত্সাসহ নানা নাগরিক সুবিধা পেতে সমস্যার মুখে পড়ছেন তারা। এর আগে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ কারণে ১৯৯১-৯২ সালে দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জনকে প্রত্যাবাসন করা হয়। তবে পরে মিয়ানমার সরকারের অনিহার কারণে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শেষ করা যায়নি।