আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
দশ বছরেও হয়নি নতুন আবাসিক এলাকা

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নতুন কোনো আবাসন প্রকল্প হয়নি ১০ বছরেও। এর ফলে নগরবাসীর আবাসন সমস্যা থেকেই গেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের অনীহার কারণে নতুন আবাসন প্রকল্প হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। চউকের বাস্তবায়ন হওয়া সর্বশেষ আবাসন প্রকল্প অনন্যা আবাসিক এলাকা। ২০০৮ সালে প্লট বরাদ্দের পর থেকে একাধিক প্রকল্প নেয়া হলেও আর কোনো প্রকল্প হয়নি। আগের চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন সময় একাধিক আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করলেও বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম দায়িত্ব নেয়ার পর অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায় নামের একটি প্রকল্প হাতে নেন। এর কোনো অগ্রগতি নেই। সর্বশেষ অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী, পাঁচলাইশ ও কুয়াইশ মৌজার জমি বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করা হবে হাটহাজারীর বাথুয়া ও শিকারপুর মৌজা থেকে। ডিপিপি সংশোধন করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, কোনো না কোনো অজুহাতে কৌশলে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। অথচ দৃশ্যমান অনেক বড় বড় প্রকল্প এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করেছে চউক। এসব প্রকল্পের অনুমোদন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত ব্যাপকভাবে তৎপর ছিলেন চউক চেয়ারম্যান। ব্যতিক্রম শুধু আবাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। এমন অভিযোগ চউকের একাধিক কর্মকর্তারও। তাদের মতে, চউক চলছে চেয়ারম্যানের একক ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কর্মকর্তাদের কোনো পরামর্শ তিনি নেন না। এর আগে বাকলিয়ায় কল্পলোক আবাসিক এলাকা তৃতীয় পর্যায় নামের একটি প্রকল্প বাতিল করেন চউকের চেয়ারম্যান। সাগর পাড়ে স্মার্ট সিটি আবাসিক এলাকা, ডেভেলপমেন্ট অব ফতেয়াবাদ নিউ টাউন ইন চট্টগ্রাম, রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি অ্যাট কুলগাঁওসহ আরও একাধিক আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। পাশাপাশি বেশকিছু ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নেরও কথা ছিল। কিন্তু এসব প্রকল্প শুধু কথা ও কাগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবিক পক্ষে এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই চউক চেয়ারম্যানের। ফলে প্রকল্পগুলো আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা সংশয় দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

২০১৬ সালে ‘অনন্যা আবাসিক (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় চউক। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অনুমোদন পায়। সেই ধারাবাহিকতায় নগরীর পাঁচলাইশ, কুয়াইশ ও বাথুয়া মৌজার ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। বিশাল এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চউক। পাঁচলাইশ ও কুয়াইশ মৌজার জমির মূল্য বেশি হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যায়। এ কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার উদ্যোগ নেয় চউক। গত বছরের ১২ অক্টোবর চউকের বোর্ড সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইসলামী ব্যাংক থেকে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়নের এলাকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। চউক প্রাথমিকভাবে প্রকল্প ব্যয় কমানো ও ব্যাংক ঋণ এড়ানোর জন্য হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া ও শিকারপুর এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, নগরবাসীর আবাসন সংকট নিরসনের জন্য আমরা বেশ কিছু আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। নানা জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময় জমির মূল্য বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। চউক একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। জমির ক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় প্লটের বিক্রয় মূল্যও নির্ধারণ করতে হচ্ছে বেশি- যা অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা অনন্যা আবাসিক এলাকা হাটহাজারীর শিকারপুর ও বাথুয়া মৌজায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমার আন্তরিকতার অভাব নেই। আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনীহার যে অভিযোগ তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। যুগান্তর