আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
একটি ভবন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন

কর্ণফুলী নদীর তীরে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। গতকালের পর আজও বেশ কয়েকটি বড় বড় গুদাম ও ভবন ভাঙা পড়েছে এ অভিযানে। তবে সদরঘাট এলাকায় ‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’ নামে একটি তিন তলা ভবন ভাঙা না ভাঙা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দ্বিতীয় দিনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গার ভূমি সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।

সরেজমিন দেখা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে ‘আরব ঘাটে’র পাশেই নদীর পাড় দখল করে তৈরি টিকে গ্রুপের একটি গুদাম ভাঙার কাজ শুরু করে উচ্ছেদ অভিযানে আসা দল। এ সময় ওই গুদামে সরকারি সংস্থার বিপুল সারের বস্তা থাকায় তাদের কিছু সময় দেয়া হয়। পরে পাশে আদম ঘাট এলাকার বেশ কিছু আধাকাঁচা ঘর উচ্ছেদ করা হয়।

দুপুর ১২টার দিকে উচ্ছেদকারী দল নারিকেল তল এলাকায় নদীর তীরে তৈরি করা লবণের মিল উচ্ছেদ শুরু করে। এসব মিলের অধিকাংশ আধাপাকা ও কাঁচা স্থাপনা হলেও লবণ পরিশোধনের জন্য মাঠির নিচে করা বিশাল বিশাল পাকা হাউস উচ্ছেদ কাজে বিপত্তি দেখা দেয়। পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা এগিয়ে এলে সেসব স্থাপনাও গুড়িয়ে দেয়া হয় সহজে।

karnafuli-ucched

উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে যখন এত তোড়জোড় তখনো ঠিক আধ মাইলেরও কম দূরত্বে ‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’ এ দেখা যায় রাজ্যের ব্যস্ততা। নদী পাড়ের অন্যান্য দখলদাররা যখন নিজের কোটি কোটি টাকার মালামালসহ গোডাউন ও কারখানা বাঁচাতে উদ্বিগ্ন। নিজেদের মালামাল সরাতে মানুষ ডেকেছে, জাহাজ এনেছে। তখন নির্বিকার ‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’। শুধু তাই নয় নদীর পাড়ে অবৈধভাবে তৈরি জেটি ব্যবহার করেই গড়ে তোলা ভবন ভর্তি করা হচ্ছে হাজার হাজার বস্তা মাছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আইন সবার জন্য সমান হতে হবে। উচ্ছেদ অভিযানের পথে যে ভবন আগে পড়েছে তা আগে ভাঙতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি ভবনকে পাশকাটিয়ে অন্য ভবনগুলো ভাঙা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে থাকা টিকে গ্রুপের কর্মচারী শামশুল ইসলাম বলেন, ‘দেখেন ভাই আমাদের গোডাউন ভরা সারের বস্তা। তবুও ভবনের অনেকাংশ ভেঙে দেয়া হয়েছে। পাশের ‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’-এর তিনতলা ভবনের অর্ধেক ভাঙা পড়ার কথা। তার পরও ওরা নাকি সময় পাইছে।’

karnafuli-ucched

আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোকমুখে প্রচার কেউ বলে পাঁচদিন আবার কেউ বলছে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ’কে। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন কাউকে কোনো সময় দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গার ভূমি সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি কনকুলেশনে আসার কিছু নেই। আমরা আরএস দাগ ধরে যেসব স্থাপনা চিহ্নিত করেছি তার কোনোটাই থাকবে না। সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের সবটুকু দিয়ে কাজ করছি। এখানে কাউকে প্রাইরোটি দেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।’

karnafuli-ucched

অভিযানের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানান, দ্বিতীয় দিনে বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় ২০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে আড়াই একরের বেশি নদীর জায়গা উদ্ধার করা গেছে।

তবে স্থানীয় লবণ মিল মালিক হাজী খোরশেদ দাবি করেন তারা গুদাম থেকে মালামাল সরানোর পর্যাপ্ত সময় পাননি। তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজ বড় প্রতিষ্ঠান, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। কিন্তু আমরাওতো বাজারে লাখ লাখ টাকা খাটিয়ে রেখেছি। তারা সময় পেলে আমরা কেন পাব না। আপনি নিজের চোখে দেখেন এখনই আমার গুদাম ভেঙে ফেলা হবে, তাই যতটা পারছি লবণের বস্তাগুলো জাহাজে করে সরানোর চেষ্টায় আছি। আর একই সময় কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজে জাহাজ থেকে মাছ আনলোড করা হচ্ছে। আইন সবার জন্য সমান কীভাবে হলো?’

অভিযানে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, মূলত কর্ণফুলী কোল্ড স্টোরেজে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার মাছ আসে সাগর থেকে। এ ভবনের বড় একটি অংশ রেফ্রিজারেটেড। ভবনের উপরেও বেশকিছু ভারি মালামাল আছে। এ ভবন উচ্ছেদে বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন, তাই সময় নেয়া হচ্ছে। জাগোনিউজ