আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
আবাসন শিল্পের বিপনন কৌশল কেমন হতে পারে?

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে আবাসন শিল্পের ভূমিকা অবিসংবাদিত। গত দুই যুগে সমগ্র জিডিপির সাড়ে আট শতাংশের কাছাকাছি অবদান রেখেছে আবাসন শিল্প। ভবিষ্যতের চাহিদা এবং সরবরাহের কথা মাথায় রেখে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা এবং সরকারও নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন একটি টেকসই আবাসন খাত গড়ে তোলার জন্য।

বিগত কয়েক বছরে ঢাকাসহ দেশের বেশকিছু জায়গাতে প্রচলিত আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে উন্নত বিশ্বের মতো অভিজাত গেইটেড কমিউনিটি, স্যাটেলাইট টাউন গড়ে উঠছে, আবাসিক ভবনগুলোতে Smart Home প্রযুক্তির ব্যবহার চোখে পড়ছে এবং সর্বাধুনিক বাণিজ্যিক স্থাপনাও গড়ে উঠছে বলে দেখা যাচ্ছে যা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের একটি ধারাবাহিক চিত্র বৈকি!

বর্তমানের এই বাজারে আবাসন কোম্পানিগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিপনন কৌশল বা Marketing Strategy। দিনে দিনে প্রচুর রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়ছে ফলে বাজার হয়ে উঠছে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক।

পণ্যের গুণগতমান, মূল্য ও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও সঠিক পণ্য নিয়ে সঠিক ক্রেতার কাছে পৌঁছতে না পারার কারণে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী নিজস্ব বিপনন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন বা তোলার চেষ্টা করছেন।

আমরা চোখ বুলিয়ে নিতে পারি নিচের বিষয়গুলোতে যা আমাদের আবাসন শিল্পের বিপননের কৌশল নির্ধারনের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে-

১)আপনি যে আবাসন পণ্য তৈরি করবেন বলে ভাবছেন আগে বাজারে তার চাহিদা ও সরবরাহের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। সব ধরনের আবাসন পণ্যের ক্রেতার চাহিদা এক নয়। তাই পণ্য অনুযায়ী সম্ভাব্য ক্রেতা শ্রেণিকরণ বা Customer Profiling আগেই করে নিন। এতে করে সঠিক পণ্য নিয়ে সঠিক ক্রেতার কাছে পৌঁছান সহজ হবে।

২) ক্রেতার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে তিনটি বিভাজন বা Segmentation করে নিতে পারেন ক) যিনি জীবনে প্রথমবার একটি প্লট, ফ্ল্যাট বা যে কোনো আবাসিক বা বাণিজ্যিক জায়গা/স্থাপনা কিনতে চান খ) যিনি একাধিকবার কেনার পরিকল্পনা করছেন এবং গ) যারা আবাসন শিল্পে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের মাধ্যমে একক বা দলগতভাবে লাভবান হতে চান। অবশ্যই এই তিন শ্রেণির ক্রেতার জন্য আলাদা আলাদা বিপনন কৌশল করুন, কারণ এদের প্রত্যেকের প্রয়োজনও আলাদা।

৩) দামি ব্রোশিওর বা ব্যয়বহুল বিজ্ঞাপনের চেয়ে ক্রেতার সঙ্গে ভালো একটি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে পণ্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা ফিচার নিয়ে সংক্ষিপ্ত ডিরেক্ট মেইলার, অনলাইন ভিডিও কমার্শিয়াল এবং পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারেন।

৪) একটি উন্নত Customer Relationship Management (CRM)বা ক্রেতা সম্পর্ক বিভাগ থাকতে হবে। যুগোপযোগী CRM Software এর মাধ্যমে ক্রেতার তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এতে করে ভবিষ্যতে একই ক্রেতার কাছে আরও বিক্রির সম্ভাবনা বাড়বে।

৫) এই ডিজিটাল বিপ্লবের যুগে শুধু বিক্রয় কর্মীদের কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে বিক্রি বৃদ্ধি সম্ভব নয়। তাদের হাতে তুলে দিতে হবে মানসম্পন্ন লিড। এ জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে। অনেক ক্রেতাই এখন টেলিফোন বা ডোর টু ডোর পদ্ধতির বিক্রয় কৌশলকে পছন্দ করছেন না তাদের ব্যাস্ত কর্মসূচির মাঝখানে। এমতাবস্থায় ফেসবুক, লিংকডইনসহ সর্বাধুনিক Artificial Intelligence বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রচুর মানসম্পন্ন লিড জেনারেশন সম্ভব।

৬)প্রচুর পরিমাণে ইভেন্টে অংশগ্রহণ না করে এমন ইভেন্ট নির্বাচন করতে হবে যেখানে পণ্যের পর্যাপ্ত তথ্য বিতরণ ও ক্রেতা সম্পর্ক তৈরির সু্যোগ বেশি রয়েছে।

৭) বিক্রয়কর্মীদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে তাদের নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

৮)ভবিষ্যৎ ই-কমার্স বিপ্লবের কথা মাথায় রেখে বাণিজ্যিক স্পেস বিপননের কৌশল তৈরি করতে হবে। পন্যের গুণগত মানের পাশাপাশি ভার্চুয়াল স্পেসও বানাতে হবে।

৯) প্রতিটি আবাসন কোম্পানি বিপনন নিয়ে নিয়মিত গবেষণা ও নীতি নির্ধারণে সহায়তার জন্য একটি গবেষণা (R&D)শাখা রাখতে পারেন।

কোম্পানি ও বিপনন কর্মকর্তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গাটাতেও গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি ২১ শতকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে আবাসন খাত যাতে আরও বড় অবদান রাখতে পারে সে জন্য বিপননশিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেখক: বিপনন পেশাজীবী এবং আবাসন ও পরিবহন খাতের বিপনন নিয়ে গবেষণারত। যুগান্তর