আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
ঢাকায় ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি বসুন্ধরায়

বিদ্যমান চাপ কমাতে রাজধানীর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এসব আবাসন প্রকল্পে আগ্রহ বাড়ছে নগরবাসীর। এখন রাজধানীতে জমি কিংবা ফ্ল্যাট বিক্রির ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচ এলাকার শীর্ষে রয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা। এমন চিত্রই উঠে এসেছে খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যে।

মূলত নাগরিক নানা সুবিধার উপস্থিতি, ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দামের অবস্থানসহ আরো বেশকিছু কারণে এলাকাটি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে এখন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। রাজধানীতে চলমান নানা নির্মাণযজ্ঞের ভোগান্তি এড়াতেও এলাকাটিকে নাগরিকদের পছন্দের শীর্ষে রাখছে। কেনা-বেচার জন্য দেয়া বিজ্ঞাপনের এক-চতুর্থাংশই তাই রাজধানীর এ এলাকাটিকে কেন্দ্র করে।

বিক্রয় ডটকমের এক সমীক্ষাতেও দেখা গেছে, গত বছর এ-সংক্রান্ত যতগুলো বিজ্ঞাপন সাইটটিতে দেয়া হয়েছে, তার ২৬ শতাংশ বসুন্ধরা এলাকায় অবস্থিত। চাহিদার মাপকাঠিতে এর পরের অবস্থানে রয়েছে মিরপুর। বিক্রির বিজ্ঞাপনের ১৮ শতাংশ এ এলাকার। এছাড়া গুলশানে জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রির বিজ্ঞাপন ছিল ১৫ শতাংশ, রামপুরায় ১১ ও উত্তরা এলাকায় ৯ শতাংশ।

তবে ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ এলাকা গুলশান। ভাড়ার জন্য পাওয়া বিজ্ঞাপনের ৮১ শতাংশই এ এলাকাটির। বনানীতে এ হার ৮ শতাংশ। আর বসুন্ধরায় ভাড়ার জন্য পাওয়া বিজ্ঞাপন মাত্র ৫ শতাংশ।

২০১৮ সালে বিক্রয় ডটকমে জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রিতে দেয়া বিজ্ঞাপনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞাপনদাতার সঠিকতা বিবেচনায় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমন তথ্য পাওয়া গেছে আবাসনসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেও।

জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভুঁইয়া জানান, দেশের সবচেয়ে আধুনিক সুবিধাসংবলিত আবাসিক এলাকা বসুন্ধরা। এখানে প্রায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধা বিদ্যমান। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও মানসম্পন্ন। দামও তুলনামূলক সাশ্রয়ী। সে কারণে এ এলাকার ফ্ল্যাটের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।

প্রতি বর্গফুট ৩ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকার বেশি দামের ফ্ল্যাট রয়েছে এ তালিকায়। তবে সবচেয়ে বেশি হলো বর্গফুটপ্রতি ৫-৭ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাট। বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া প্রায় অর্ধেক ফ্ল্যাটের দাম এ সীমার মধ্যে। ৪৫ শতাংশ ফ্ল্যাটের দর এটি। তবে পরের স্থানেই রয়েছে প্রতি বর্গফুট ১০-১১ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাট। এ ধরনের ফ্ল্যাটের ক্রেতা-বিক্রেতাও কম নয়। মোট বিজ্ঞাপনের ২৬ শতাংশ দেয়া হয়েছে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের এসব ফ্ল্যাটের জন্য। প্রতি বর্গফুট ৬-৭ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাটের ক্রেতা-বিক্রেতাও কম নয়, ১৭ শতাংশ। এর বাইরে বর্গফুটপ্রতি ৩ হাজার টাকার নিচে এমন ফ্ল্যাট ২ শতাংশ, ৩-৪ হাজার টাকার ৫ শতাংশ, ৪-৫ হাজার টাকার ৯ শতাংশ, ৭-৮ হাজার টাকার ৪ শতাংশ, ৮-৯ হাজার টাকার ৪ শতাংশ ও ৯-১০ হাজার টাকা প্রতি বর্গফুট এমন ফ্ল্যাট ছিল ৫ শতাংশ।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা মন্দা গেলেও শুরুতে ও শেষে জমি এবং ফ্ল্যাট কেনার প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখীই ছিল। বিক্রয় ডটকমে দেয়া বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে মাসে গড়ে আট হাজারের বেশি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। তবে পরের প্রান্তিকে এটি কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৯০০টিতে। কেনা-বেচার জন্য এ সময়টি সবচেয়ে খারাপ গেছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতি মাসে গড়ে ৭ হাজার ৮০০ ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে শেষ প্রান্তিকটিতে। ওই প্রান্তিকে প্রতি মাসে গড়ে ৮ হাজার ২০০টি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। বছরব্যাপী বিক্রির বিবেচনায় শীর্ষে ছিল অক্টোবরে। মাসটিতে বিক্রি হয় ৮ হাজার ৮০০টি ফ্ল্যাট।

ফ্ল্যাট কেনায় ঋণ দেয় ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান লংকাবাংলা ফিন্যান্স। কোম্পানিটির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব রিটেইল ফিন্যান্সিং খোরশেদ আলম বলেন, রাজধানীর উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আবাসিক সম্পত্তি কেনার ট্রেন্ড সবচেয়ে বেশি। আবাসিক এলাকাটির ভেতরে নাগরিক সুবিধা আর দামের সমন্বয়ের কারণেই এমনটি হচ্ছে। আমাদের কাছে আবাসন ঋণের যত আবেদন আসে, তার বড় অংশই সেখানে ফ্ল্যাট কেনার জন্য। উত্তরার বিষয়টিও মোটামুটি একই রকম। মিরপুর, রামপুরায় আরেকটু কমে ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। আর্থিকভাবে অনেক সচ্ছল গ্রাহক গুলশান-বনানী এলাকায়ও ফ্ল্যাট কেনেন। সেখানে দাম খুব বেশি।

দামের বিবেচনায়ও এলাকাভিত্তিক পছন্দে ভিন্নতা রয়েছে। প্রতি বর্গফুট ১৫ হাজার টাকা দরের ফ্ল্যাটে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী গুলশান, বারিধারা ও ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দারা। ১০-১৫ হাজার টাকা প্রতি বর্গফুট দরের ক্ষেত্রে পছন্দের এলাকা ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী। প্রতি বর্গফুট ৫-১০ হাজার টাকা দরের ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে বসুন্ধরা, মিরপুর ও রামপুরা এলাকায় চাহিদা বেশি। আর মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও উত্তরা এলাকায় চাহিদা বেশি প্রতি বর্গফুট ৫ হাজার টাকা দরের ফ্ল্যাটের।

সুপরিসর ফ্ল্যাট বেশি জনপ্রিয় গুলশান, বারিধারা ও উত্তরায়। এসব এলাকায় তিন হাজার বর্গফুট বা তার চেয়ে বেশি আয়তনের ফ্ল্যাটের প্রতি বেশি আগ্রহ গ্রাহকদের। মিরপুর, বসুন্ধরা ও উত্তরার ফ্ল্যাটের বেশির ভাগই দুই হাজার বর্গফুট বা তার চেয়ে বড়। আর এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট বেশি মিরপুর, রামপুরা ও মোহাম্মদপুর এলাকায়।

বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া ফ্ল্যাটের সিংহভাগ বা ৯৬ শতাংশই নতুন। বাকি ৪ শতাংশ পুরনো ফ্ল্যাটের বিজ্ঞাপন।

ভাড়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকার বেশি ভাড়া, এমন ফ্ল্যাটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ৪৪ শতাংশ ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ভাড়া ছিল এমন। এরপর ১০-২০ হাজার টাকা ভাড়ার ফ্ল্যাটে আগ্রহী ২২ শতাংশ ভাড়াটিয়া। ১০ হাজার টাকার কম ভাড়া, এমন ফ্ল্যাটে আগ্রহী ১৪ শতাংশ ভাড়াটিয়া। আর প্রতি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকার ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে আগ্রহী ১১ ও ৩০-৪০ হাজার টাকার ক্ষেত্রে ৮ শতাংশ ভাড়াটিয়া। বণিকবার্তা