আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
স্বামী-স্ত্রীর জোড়া প্লটে রাজউকের কোপ

রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (রাজউক) বরাদ্দ নীতিমালা ভঙ্গ করে স্বামী ও স্ত্রী দুজন মিলে একাধিক প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। রাজউকের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার তদন্তে বিপুলসংখ্যক প্লট এভাবে তথ্য গোপন করে বরাদ্দ নেওয়ার সত্যতা মিলেছে। এরপরই সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা একাধিক প্লটের বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নিচ্ছে কর্র্তৃপক্ষ। আর এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ ‘ক্যাটাগরি’ ভিন্ন হলে চাওয়া হচ্ছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মতামত। প্রশাসনিক এই মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা তথ্য গোপন করে স্বামী-স্ত্রী অথবা তাদের পোষ্যের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। বেশ কিছু প্লট বাতিলও করা হয়েছে। যাদের দুটি আছে তাদের একটি রেখে অন্যটি বাতিল করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী রাজউক থেকে একই পরিবারের একাধিক প্লট বরাদ্দ নেওয়ার সুযোগ নেই।’ রাজউক সূত্র জানায়, ২০০১ ও ২০০৪ সালে পত্রিকায়

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, প্রচলিত প্লট বরাদ্দ বিধি অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তি বা তার স্বামী অথবা পোষ্য একটিমাত্র প্লট বরাদ্দ নিতে পারবে। সে অনুযায়ী একই পরিবারের স্বামী ও স্ত্রী দুটি প্লট রাজউক থেকে বরাদ্দ পেতে পারে না। রাজউকের গত ৮/২০১৩ তম বোর্ড সভায় এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, রাজউকের প্রকল্পে প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যেকোনো একজনের নামে প্লট বরাদ্দ বহাল রাখা হবে। সেই সূত্রেই রাজউক অনুসন্ধান করে একাধিক প্লটগ্রহীতা স্বামী ও স্ত্রীর নামে থাকা একটি প্লট বাতিল করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ডা. কাজী নূর আফফীনা ‘বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী’ ক্যাটাগরিতে ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সাড়ে সাত কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পান। এ প্রকল্পের ৩ নম্বর সেক্টরের ৪০৫ নম্বর রাস্তার ৭ নম্বর প্লটটির চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র দেওয়া হয় ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। একই ক্যাটাগরিতে অর্থাৎ ‘বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী’ ক্যাটাগরিতে মো. শামসুল আলমকে ২০০৩ সালের ৩১ মার্চ ৭ নম্বর সেক্টরের ৩০১-ডি রাস্তার ২ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাঁচ কাঠা আয়তনের এ প্লট বরাদ্দ-গ্রহীতা শামসুল আলম সম্পর্কে ডা. কাজী নূর আফফীনার স্বামী। বিষয়টি রাজউকের এমআইএস শাখায় অনুসন্ধানকালে বের হয়ে আসে। এরপর একটি প্লট বাতিলের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

পূর্বাচল প্রকল্পে সরকারি চাকরিজীবী কোটায় রাজউকের ১২/২০০৩তম বোর্ড সভায় ডা. মো. জহিরুল ইসলামের নামে (কোড নম্বর-১০৬৯৮) তিন কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই প্রকল্পে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি ক্যাটাগরিতে ডা. মো. জহিরুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে (কোড নম্বর-২৮৮৬৭) প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এমন ঘটনা ঘটে মো. শওকত আলী মোল্লার ক্ষেত্রেও। শতকত আলীকে পূর্বাচল ১০ নম্বর সেক্টরের ৪০৭ নম্বর রাস্তার তিন কাঠা আয়তনের ২৩ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার স্ত্রী রেহেনা আক্তারকে একই প্রকল্পের ১০ নম্বর সেক্টরের ৪০৭ নম্বর রাস্তার ২৫ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পূর্বাচল প্রকল্পে স্বায়ত্তশাসিত ক্যাটাগরিতে দিল আফরোজ নামের একজনকে ৩০ নম্বর সেক্টরের ৪০২ নম্বর রাস্তার পাঁচ কাঠা আয়তনের ৩৪ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার স্বামী এস এম খলিলুর রহমানের সঙ্গে যৌথ নামে উত্তরা তৃতীয় পর্বে ১৭/জি-০৬-০৪ প্লটটি তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আবুল কালাম আজাদ নামের একজন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে (কোড নম্বর-২৫৫২) সাড়ে সাত কাঠা ও সম্প্রসারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব প্রকল্পে (১৭-ডি-৩ এ-০৩৮) নম্বর প্লটটি বরাদ্দ নিয়েছে। রাজউকের এমআইএস শাখা এক ব্যক্তির নামে একাধিক প্লট রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে গিয়ে এ তথ্য পায়। কিন্তু বরাদ্দ তালিকায় দুটি ক্যাটাগরি থাকায় রাজউক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজউকের ১/২০১৯তম বোর্ড সভায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এখনো পর্যন্তএ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে রাজউকে কোনো সিদ্ধান্তের চিঠি আসেনি। তোফায়েল আহমেদ নামের জনৈক এক ব্যক্তির নামে নিকুঞ্জ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকার ৮/এ নম্বর রাস্তার ৫ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দ-গ্রহীতার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের নামে পূর্বাচল প্রকল্পে ৯ নম্বর সেক্টরের ১০৮ নম্বর রাস্তার সাড়ে সাত কাঠা আয়তনের ৭৮ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে রাজউকের এমআইএস শাখার অনুসন্ধানে বিষয়টি বেরিয়ে এলে রাবেয়া বেগমের নামে থাকা প্লটটি সমর্পণ করতে রাজউকে আবেদন করেন তিনি। পূর্বাচলের বেসরকারি চাকরিজীবী ক্যাটাগরিতে তিন কাঠা আয়তনের (২২-৩০৩-০০২) প্লটটি বরাদ্দ পান ডা. শামসুন নাহার নামের একজন। একই প্রকল্পে তার স্বামী ডা. খন্দকার শাহনেওয়াজ সাড়ে সাত কাঠা আয়তনের (১৮-১১২-০২৩) প্লটটি বরাদ্দ পান। মো. আনোয়ারুল ইসলাম খান পূর্বাচল প্রকল্পে ২ নম্বর সেক্টরের ৩০২ নম্বর রোডের ৫ কাঠা আয়তনের ৩৩ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ পান। এ বরাদ্দ-গ্রহীতার স্ত্রী হাসিনারা বেগমের নামে বারিধারার জে-প্রগতি সরণির ৫ কাঠা আয়তনের ৫৪ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ রয়েছে।