আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
অতি বৃষ্টি, সিমেন্ট কোম্পানির আয়ে ধাক্কা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের ৭টি কোম্পানির মধ্যে ৫টির আয় ২৪ থেকে ৪৮৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এরমধ্যে দুটি কোম্পানি মুনাফা করার ধারবাহিকতা থেকে বের হয়ে লোকসানেই পড়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ প্রান্তিকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দেখা গেছে।

মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিভিন্ন সিমেন্ট কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে শীত মৌসুমেই সাধারণত নির্মাণ কাজে হাত দেন মানুষ। ফলে এ সময়ে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর আয়ও বেশি হয়। কিন্তু এবার জানুয়ারি-ফ্রেব্রুয়ারি থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির প্রকোপ শুরু হয়। যা মার্চ এপ্রিলে আরও বেড়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার মার্চ ও এপ্রিল মাসেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। যে ধরনের বৃষ্টিপাত সাধারণত মে ও জুন মাসে হয়ে থাকে। এবার মার্চ ও এপ্রিল মাসে আগের বছরের তুলনায় ১৯২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে অতি বৃষ্টির ফলে এ সময়ে বন্যাও হয়েছে। এতে এ বছরের শুরুতে নির্মাণ কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেও অনেকেই কাজ করাননি। ফলে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর আয়ও ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে আরামিট সিমেন্টের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯২ পয়সা। যা আগের অর্থবছরের একইসময়ে ২৪ পয়সা মুনাফা ছিল। অর্থাত্ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার কোম্পানিটির মুনাফা কমার হার ৪৮৩ শতাংশ। লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের অবস্থাও একই। এ কোম্পানিটিও গত বছর মুনাফায় ছিল। এবারের (এপ্রিল-জুন) প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ৩৮ পয়সা মুনাফা ছিল। অর্থাত্ এ সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ১১৮ শতাংশ। এছাড়া সর্বশেষ প্রান্তিকে মেঘনা সিমেন্টের মুনাফা কমেছে ৫২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। হাইডেলবার্গ সিমেন্টের মুনাফা কমেছে ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। এমআই সিমেন্টের মুনাফা কমেছে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সর্বশেষ প্রান্তিকে প্রিমিয়ার সিমেন্টের মুনাফা বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং কনফিডেন্স সিমেন্টের মুনাফা বেড়েছে ১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

মুনাফা কমে লোকসানে পড়ার কারণ জানতে চাইলে লিখিত বক্তব্যে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে জুনে শেয়ার প্রতি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে, এর মূল কারণ বিক্রি কমে যাওয়া। বিক্রি কমার পিছনে যে কারণগুলো কাজ করেছে সেগুলো হলো অপ্রত্যাশিত বন্যা, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, চ্যানেল লেভেলে অতিরিক্ত মজুদ এবং সিলেটে চাহিদা কমে যাওয়া। এর পাশাপাশি মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে সিমেন্টের দাম কমানো, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি শেয়ার প্রতি আয় কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আয় কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে এমআই সিমেন্ট কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সিমেন্টের পিক সিজন (বিক্রির মৌসুম) ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। আর অবশিষ্ট সময় সিমেন্টের অফ পিক সিজন। তাই এ জানুয়ারি থেকে মার্চ এবং মার্চ থেকে জুন প্রান্তিকে সিমেন্ট কোম্পানিগুলো ভালো আয় করে থাকে। তবে এবার অসময়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় নির্মাণ কাজে নেতিবাচক কিছুটা প্রভাব পড়েছে। ফলে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর আয় কমে গেছে। বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার তথ্য মিলেছে আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যানেও। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ৫১২ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর ২০১৬ সালের একই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২ হাজার ৯৭২ সেন্টিমিটার। অর্থাত্ এ বছর দেশে বৃষ্টিপাত প্রায় ৫২ শতাংশ বেড়েছে।

একাধিক সিমেন্ট কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় নির্মাণ কার্যক্রম আগের তুলনায় কম হচ্ছে। কারণ গ্রামে গঞ্জে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নির্মাণ কাজ করা হয় রেমিট্যান্সের টাকায়। এবছর দেশে রেমিট্যান্স কমায় নির্মাণ কাজও কম হচ্ছে। বিভিন্ন সিমেন্ট কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোম্পানির আয় কমার কারণ জানালেও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তাদের সাথে বারবার চেষ্টা করলেও তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
আহসান হাবীব রাসেল, ইত্তেফাক