মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবাসন খাত আরেকটি সুখবর পেল। ফ্ল্যাট কেনা ও বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশনও (বিএইচবিএফসি) ঋণের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই আসতে পারে প্রজ্ঞাপন। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক গৃহঋণের সীমা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই কোটি টাকায় উন্নীত করে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিএইচবিএফসিকে বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট কেনার জন্য এখনকার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম গত ২৭ নভেম্বর বিএইচবিএফসির এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে সই করেন।
সে অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণে একক ব্যক্তি এখন দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। আর গ্রুপ করে ঋণ নিলে প্রতিজনে পাবেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা করে। এদিকে ফ্ল্যাট কেনার জন্যও গ্রাহকেরা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা করে ঋণ পাবেন। এই ঋণ দেওয়া হবে অবশ্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উন্নত কিছু এলাকায়। ৯ শতাংশ সরল সুদে দেওয়া হবে এই ঋণ।
দুই সিটি করপোরেশনের যে এলাকাগুলোতে তুলনামূলক ধনী লোকেরা থাকেন, সেগুলোই এ ঋণের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার এলাকাগুলো হচ্ছে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা, উত্তরা, লালমাটিয়া, ডিওএইচএস (মহাখালী, বারিধারা, বনানী ও মিরপুর)। আর চট্টগ্রামের এলাকাগুলো হচ্ছে আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, কর্নেলহাট, বাকলিয়া, কল্পলোক সিডিএ আবাসিক এলাকা ও খুলশী।
বর্তমানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) তিন কাঠা ও পাঁচ কাঠা জমিতে বিভিন্ন শর্তে ১০তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে। বিএইচবিএফসি ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ৭ হাজার ৯০০ থেকে ৮ হাজার বর্গফুট পর্যন্ত বহুতল বাড়ি নির্মাণে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে আসছিল। কিন্তু এ ঋণ নিয়ে গ্রাহকেরা চাহিদা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করতে পারছিলেন না। এ কথা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অর্থমন্ত্রীর কাছে তাদের উপস্থাপিত সারসংক্ষেপে উল্লেখ করেছে।
৯% সুদে ঋণের সীমা দ্বিগুণ করতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে
এতে গ্রাহকেরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি লাভবান হবে আবাসন খাত
ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলেছে, আগের তুলনায় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে লিফট, জেনারেটর ও সাবস্টেশন স্থাপন করতে হয়, যা অর্থের অভাবে অনেকেই করতে পারেন না। ফলে নির্মাণাধীন ভবনটি বসবাস বা ভাড়া দেওয়ার উপযোগী হয় না। এদিকে ফ্ল্যাটের দামও বেড়েছে। যে কারণে বিএইচবিএফসি গ্রাহকদের যে ঋণ দেয়, তাতে ফ্ল্যাট কেনা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঋণের সীমা বৃদ্ধির আবেদন করেছিলাম। শুনেছি মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে। তবে এখনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’
এলাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রসঙ্গে দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, আপাতত এটা করা হয়েছে। প্রয়োজনে এলাকা বাড়ানো হবে। তবে এসব এলাকায় নির্মীয়মাণ ভবনে শুধু লিফট, জেনারেটর ও সাবস্টেশন স্থাপনের জন্যও আলাদা ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানান তিনি।
ঋণের প্রবাহ কমছে
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিএইচবিএফসির ঋণের সর্বোচ্চ সীমা কম হওয়ায় গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন। কারণ, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ), ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ও আইডিএলসির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো অঙ্কের ঋণ দেয়।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় বিএইচবিএফসির ঋণের প্রবাহ কমছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ঋণ মঞ্জুরের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ৩৫ শতাংশে।
বিএইচবিএফসি অবশ্য বিষয়টি অনেক আগেই টের পেয়েছিল। তাই গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঋণের সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করে সংস্থাটির পর্ষদ।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে আবাসন খাত উপকৃত হবে। বহু দিন ধরে আমরা এর অপেক্ষায় আছি।’