
কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার। সরকারের নীতিনির্ধারকদের দাবি- অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অবৈধ মজুদের মাধ্যমে চালের বাজার অস্থির করে তুলেছে। গুদামগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেও মিলছে না সুফল। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মজুদবিরোধী আইন কার্যকর অর্থে প্রয়োগ না হওয়ার কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একপক্ষকালে ( ১৫ দিনে একপক্ষ) একটি রাইস মিল যে পরিমাণ ধান থেকে চাল প্রসেসিং করতে সক্ষম, ওই সময়ে মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতার ৫ গুণ ধান এবং ২ গুণ চাল মজুদ রাখতে পারবেন মিল মালিকরা। এই পরিমাণ ধান-চাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। ৩০ দিনের বেশি মজুদ রাখলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
বিদ্যমান মজুদ নীতিমালা অনুযায়ী একটি মিলের এক পক্ষকালের ক্যাপাসিটির ৫ গুণ ধান ও ২ গুণ চাল মজুদ রাখতে পারবেন। এই পরিমাণ ধান-চাল রাখতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত। এই চেয়ে পরিমাণে বেশি ধান-চাল রাখলে বা এই সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে মজুদ রাখলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।
অর্থাৎ একটি মিলের এক পক্ষকালের ক্যাপাসিটি যদি ১০০ মন হয় তাহলে ওই মিল কর্তৃপক্ষ এর ৫ গুণ অর্থাৎ ৫০০ মন ধান ও ২ গুণ অর্থাৎ ২০০ মন চাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন। এর বেশি হলেই তা অপরাধ।
মজুদ কী, বিদ্যমান মজুদ আইনে যা আছে
বিদ্যমান আইনে মজুদদারির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো আইন দ্বারা বা আইনের আবর্তে কোনো ব্যক্তি মজুদ অথবা গুদামজাত করার সর্বোচ্চ পরিমাণের বেশি দ্রব্য মজুদ বা সংরক্ষণ করলে তা মজুদদারি হিসেবে গণ্য করা হবে।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মজুদদারি নিষিদ্ধ করে এই অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের ২ (ঙ) ধারায় মজুদদারির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘মজুদদারি বলতে বোঝায়, কোনও আইন দ্বারা বা আইনের আওতায় কোনও ব্যক্তি মজুদ বা গুদামজাত করার সর্বোচ্চ পরিমাণের বেশি দ্রব্য মজুদ বা সংরক্ষণ করা।’
এ আইনের ২৫ (১) ধারার বিধানে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, ‘কেউ মজুদদারি বা কালোবাজারে লেনদেনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তার আজীবন কারাদণ্ড বা চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যদি প্রমাণ হয় যে, মজুদদার কোনও লাভের জন্য পণ্য মজুদ করেনি, তাহলে ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।’
এদিকে ইস্ট বেঙ্গল অ্যাক্ট-এর আওতায় অতি প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের সরবরাহ, বিতরণ ও মজুদ নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৫৩ সালে দ্য অ্যাসেনসিয়াল আর্টিকেলস (প্রাইস কন্ট্রোল অ্যান্ড এন্টি হোর্ডিং) অ্যাক্ট ১৯৫৩ শিরোনামে এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বলতে দ্য কন্ট্রোল অব অ্যাসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট, ১৯৫৬-এর ধারা-২-এ উল্লিখিত পণ্যকে বোঝানো হয়েছে।
The Essential Articles (Price Control and Anti-Hoarding) Act, ১৯৫৩-এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ব্যবসায়ীরা সুবিধাজনক জায়গায় বা নিজেদের দোকান ও গুদামের সামনে পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য তালিকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য থাকবে। নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রয়ের তারিখ ও মেয়াদও সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারবে।’
ধারা ৮-এ বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যবসায়ী সরকারের দেওয়া পূর্ব-কর্তৃত্ব ছাড়া কোনও ব্যক্তির কাছে কোনও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বিক্রি আটকে রাখতে পারবে না বা বিক্রি করতে অস্বীকার করতে পারবে না। এ আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা এক হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’বাংলা ট্রিবিউন