আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
রহিম সাহেবের ক্রয়কৃত এক টুকরো জমি ও মামলায় জড়িয়ে পড়ার গল্প

রহিম সাহেব নতুন ব্যবসায়ী। বহু শখ আর সাধনায় এক টুকরো জমি কিনলেন। আক্ষরিক হস্তান্তর হলেই তো আর জমি হস্তান্তর হয় না, তার আইনগত হস্তান্তরও যে চাই। তিনি এক পর্যায়ে অবগত হন যে ওই জমিটি নিয়ে আদালতে মোকদ্দমা চলছে। অর্থাৎ সরল বিশ্বাসে কিংবা অজ্ঞাতেই হোক জমিটি ক্রয় করার পর রহিম সাহেব দেখলেন, ওই বিক্রেতা তার ক্রয়কৃত জমিতে আগেই স্বত্ব হারিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির অজ্ঞাতেই হোক কিংবা প্রতারণামূলকভাবে হোক, রহিম সাহেব ইতোমধ্যে জমিটির মালিক বলে নিজেকে দাবি করছেন। কিন্তু রহিম সাহেব ইচ্ছে করলেই বিরোধীয় জমিটির আইনগত মালিক দাবি করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে রহিম সাহেবের কোনো প্রতিকার পাওয়া সম্ভব কি-না? আবাসন বার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলে।

১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ভাষ্য অনুযায়ী, বিরোধীয় জমিটি অর্থাৎ যেটি আপনি কিনেছেন সে জমিটিতে হস্তান্তর গ্রহীতা হিসেবে আপনি প্রতিকার দাবি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫২ ধারায় সুষ্পষ্টভাবে প্রতিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে অবস্থিত যথাযথ এখতিয়ারসম্পন্ন কোনো আদালতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে মামলা চলার সময় মামলাটি ষড়যন্ত্রমূলক না হলে এবং মামলাটিতে সম্পত্তির কোনো স্বত্ব বা মালিকানা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত থাকলে বা আদালত কোনো শর্ত আরোপ করলে, এমন ক্ষেত্র ব্যতীত মামলার সাথে জড়িত কোনো পক্ষ সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি এমনভাবে হস্তান্তর করতে পারবে না, যার ফলে আদালতের কোনো সম্ভাব্য ডিক্রি বা আদেশের প্রাপ্ত অপর কোনো পক্ষের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। আইনের ভাষায় একে ‘Lispendens বা অমীমাংসিত মোকদ্দমা বলা হয়। এ নীতিটি বিখ্যাত ‘Bellamy Vs Sabine’ মামলায় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং মোকদ্দমা বিচারাধীন জেনে বা না জেনে, যেভাবেই হস্তান্তর করা হোক না কেন, নীতিটি প্রযোজ্য হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জমি বা সম্পত্তির হস্তান্তর দাতার বদলে হস্তান্তর গ্রহীতা হিসেবে ক্রয়কারী স্থলাভিষিক্ত হবেন।

দেওয়ানি কার্যবিধির ৯৬ ধারার বিধান মোতাবেক, এ নীতি অনুযায়ী হস্তান্তর গ্রহীতা অর্থাৎ যিনি জমিটি অজ্ঞাতে কিনলেন, তিনি আপিল করার যোগ্যতা অর্জন করলেন। আপিল দায়েরের মাধ্যমে মূল বিবাদীর জায়গায় রায় ও ডিক্রি রদ বা রহিতের জন্য আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমিটির মূল্য বাবদ নির্দিষ্ট এখতিয়ারধীন আদালতে আপিল দায়ের করতে হবে। জমিটির মূল্য পাঁচ লাখ টাকার নিচে হলে জেলা জজ আদালতে এবং পাঁচ লাখের উপরে হলে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করতে হবে।

এ ধরণের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রতিকার প্রার্থী অ্যাপিল্যান্ট এবং মূল বাদী রেস্পনডেন্ট হিসেবে গণ্য হবেন। এ ক্ষেত্রে অ্যাপিল্যান্টকে ওই ডিক্রি সম্পর্কে অবগত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে হবে। এ আপিলের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আদালত প্রতিকার প্রার্থীকে পক্ষভূক্ত করে মামলা পুনর্বিচারের জন্য প্রেরণ করতে পারেন। ক্ষেত্র বিশেষ বাদীর পক্ষে ডিক্রিটি বাতিল করার ক্ষমতাও আপিল আদালতের থাকে। এতে মূল মামলার ক্ষেত্রে যে কোর্ট ফি দেওয়া থাকে, অ্যাপিলকারীকে অনুরূপ কোর্ট ফি দিয়ে আপিল দায়ের করতে হবে। তবে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল ব্যর্থ হলে তামাদি আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কারণ উল্লেখসহ পৃথক আবেদন দায়ের করতে হবে।

সিরাজ প্রামাণিক
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা ও গবেষক।