নিজের বাসস্থানের স্থায়ী ব্যবস্থা করার জন্য অনেকেই অনেক কষ্ট করে। নিজের একটা বাসস্থান মানুষের আত্মমর্যাদা বাড়িয়ে দেয়। যাঁরা কিছুটা আয়েশি ধরনের তাঁদের জন্য ফ্ল্যাটই আদর্শ। বাড়ি করা সংক্রান্ত কোনও রকম ঝামেলার অবকাশ না থাকায় ফ্ল্যাট কেনার দিকে আগ্রহী ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। আজকাল বহু ফ্ল্যাটে শরীরচর্চা (জিম), ইনডোর গেমস, স্যুইমিং পুল ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকায় এই সব কাজে বাইরে যেতে হয় না। নিজস্ব কমিটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে বলে দায়িত্ব ভাগাভাগি হয়ে যায়।
ছোটরা যেমন একসাথে খেলার সঙ্গী পান তেমনি বয়স্ক মানুষেরাও তাদের সাথী পেয়ে যান। সঙ্গী পেয়ে যান। ছোটখাট দুই একটা সমস্যা ছাড়া ফ্ল্যাটে সুবিধাই বেশি। বর্তমানে অনেক নাগরিক ফ্ল্যাট কেনার জন্য নিজেদের অনেক আনন্দ ফূর্তির খরচকে কমিয়ে, সঞ্চয় করে। কিন্তু, আমার সুদীর্ঘকাল অভিজ্ঞতার আলোকে দেখেছি, অনেকেই ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে, শুধুমাত্র অজ্ঞতার কারণে এবং যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য সারাজীবনের সঞ্চয়কে জলাঞ্জলি দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন । জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কাজেই ফ্ল্যাট কেনার সময় সতর্ক থাকা উচিৎ। জেনে বুঝে সব কিছু দেখেশুনে ফ্ল্যাট বা জমি ক্রয় করা দরকার।
ফ্ল্যাট কেনার জন্য প্রথমেই দেখতে হবে স্থানটি, অর্থ্যাৎ ফ্ল্যাটটি কোথায়। সেখান থেকে হাট বাজার, নিজের কর্মক্ষেত্র, স্কুল,কলেজ, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, হাসপাতাল ইত্যাদির দূরত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাগুলো কেমন। আপনার কর্মক্ষেত্র বা বাচ্ছাদের স্কুল কলেজ অনেক দুরে হলে জীবনে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ পাবেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থাটা কেমন সেটা অনেক বড় একটা বিবেচ্য বিষয়।
নিকট আত্মীয় স্বজন কাছাকাছি আছে কিনা সেটাও দেখা উচিত। এরপর ফ্ল্যাটটি কত তলায় অবস্থিত। একদম উপরের তলায় হলে, অত্যধিক গরমের সময় গরম লাগবে। আবার শীতের সময় বেশি শীত লাগবে। উঁচূ ভবন হলে, লিফ্টের সুবিধা আছে কি না। পরিপার্শ্বিক পরিবেশ আপনার পরিবারের জন্য অনুকূলে কি না ? ফ্ল্যাট টি পছন্দ হয়ে গেল এবার পালা ফ্ল্যাটের দরদাম এবং ফ্ল্যাটটি যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রয় করছেন তার মালিকানা সঠিক কি আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য , প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখে নিতে হবে ।
যদি ডেভেলপার এর কাছ থেকে কেনা হয়, তাহলে যে জমিটির উপর ফ্ল্যাট কেনা হচ্ছে, সেই জমির প্রকৃত মালিকানা কার। রাজউক সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জমির মালিক এবং ডেভেলপার মিলে যুক্তভাবে যদি প্রকল্পটি হয়ে থাকে, তবে মালিক এবং ডেভেলপার এর মধ্যে কি চুক্তিপত্র হয়েছে বিশদে দেখতে হবে এবং বিশেষভাবে দেখতে হবে যে মালিক ডেভেলপার কে ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য যথাযথ ভাবে কর্তৃত্ব আরোপ করেছেন কি না ? এবং এই চুক্তিপত্রে ফ্ল্যাটের ক্রেতাকে কোনোভাবে অযৌক্তিক শর্তে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে কি না ? যে ফ্ল্যাটটি কিনছেন, বা যে জায়গার উপর ফ্ল্যাটটি কিনছেন সেটি অন্য কোনো ঋণের দায়ে ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধ আছে কি না?
এবার আসি ফ্ল্যাটের ক্রেতা বিক্রেতার চুক্তিপত্র সম্পর্কে : ক্রেতা হিসাবে আপনার উচিত্ হবে চুক্তিপত্রটি বার বার পুংখানুপুঙ্খ রূপে দেখে নেয়া । এই চুক্তিপত্রে এমন সব শর্তাবলী লেখা থাকে যেগুলি ঠিকভাবে দেখে না নিলে, এই চুক্তিপত্র ক্রেতার জন্য মৃত্যুবানে পরিনত হতে পারে এবং আইনি সহায়তার সুযোগকে নষ্ট করে দিয়ে ক্রেতাকে বিপদে ফেলে দিতে পারে । সেজন্য এই চুক্তিপত্রটি বারবার পড়ে দেখে নিন এবং অবশ্যই আপনার সুপরিচিত কোনো আইনজীবিকে দিয়ে দেখিয়ে নিন ।চুক্তি পত্রে অনেক সময় অনেক কিছুর উল্লেখ থাকে, যথা ফ্ল্যাটের কমন স্পেস, ফ্ল্যাটের দাম মেটাবার পদ্ধতি, পাকিং এর পজিশনসহ ইত্যাদি।
সাধারণত: চুক্তিপত্রে দেখা যায় যে ফ্ল্যাটের পজিশনের সময়সীমা একটা সময় ধরে দেখিয়ে দেওয়া হয় । সেটা দু বা তিন বছর, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় দেয়া হয় না । ক্রেতার উচিত্ হবে এটা নিশ্চিত করা যে চুক্তিপত্রে যেন এই সময়সীমা যাতে নির্দিষ্ট থাকে যথা কোন বছরের কোন মাসের কোন তারিখের ভেতর ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করা হবে । ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে একদম তাড়াহুড়ো করা যাবে না । বিক্রেতার কথাগুলির ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন । কষ্টার্জিত পয়সা দিয়ে বাড়ী বা ফ্ল্যাট কেনা । পদে পদে সতর্ক থাকুন । বিপদে পড়ে লড়াই করার চাইতে বিপদ এড়ানোই শ্রেয়।
কামাল মাহমুদ, চেয়ারম্যান, আইএসও হোল্ডিংস লিমিটেড