বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেশি থাকায় চাহিদার কারণে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে জমির মূল্য অনেক বেশি। যার কারণে এক খণ্ড জমি মানে একটি সোনার খনি। এই সোনার খনিতে যৌথভাবে বাড়ি বানাতে অনেকেই অজ্ঞতার কারণে যেনতেন ডেভেলপারকে জমিটি দিয়ে দেন। পরে অনেক ভোগান্তিতে পড়েন। তখন সোনার খনি হয়ে যায় কয়লার খনি। কোটি টাকার সম্পদ হয়ে যায় গলার ফাঁস। কাজেই যৌথভাবে বাড়ি বানাতে সবার আগে একটি ভাল ডেভেলপার দরকার। শুধু সাইনিং মানি একটু বেশি দিলেই অখ্যাত কোন ডেভেলপারকে জমি দেয়া ঠিক না। যাদের বাজারে সুনাম আছে, দীর্ঘ দিন ধরে সফলতার সাথে, কমিটমেন্টের সাথে ব্যবসা করছে তাদের জমি দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
যৌথভাবে বাড়ি বানাতে কেন ভাল ডেভেলপারকে জমি দিবেন? এর উত্তর আমি আমারে লেখার শুরুতেই অল্প কথায় দিয়েছে। যৌথভাবে বাড়ি বা অফিস স্পেস তৈরি করতে ডেভেলপারকে জমি দেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিৎ। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কোম্পানির অভিজ্ঞতা এবং সুনাম। সুনাম একদিনে গড়ে ওঠে না। যাকে আপনি জমি দিবেন তার পূর্বে কতগুলো বাড়ি করার অভিজ্ঞতা আছে তা যাচাই করুন। কমিটমেন্ট অনুযায়ী আগের বাড়ি বা কমার্শিয়াল স্পেস সঠিক সময়ে হস্তান্তর করেছে কিনা তা যাচাই করুন।জমি দেওয়ার আগে আপনাকে সরেজমিনে তার পূর্বের প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করতে হবে। আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বলতে হবে।
বাংলাদেশে প্রায় আড়াই হাজারের উপর ডেভেলপার কোম্পানি আছে। এর মধ্যে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর মেম্বার আছে এক হাজারের উপরে। বাকিরা রিহ্যাব এর মেম্বার নয়। জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে রিহ্যাব এর ভাল মেম্বারদের অগ্রাধিকার দিন। কারণ আপনি কোন সমস্যায় পড়লে রিহ্যাব এ বিচার দেওয়ার জায়গা রয়েছে। সেখানে মেডিয়েশন সেল রয়েছে। অনেক কোম্পানি আছে যাদের মুখে মধু কিন্তু অন্তরে বিষ। জমি নেওয়ার আগে এক আর জমি নেওয়ার পরে আরেক রূপ। কাজেই জেনে বুঝে যাদের নিজস্ব দক্ষ প্রকৌশলী ও আর্কিটেক্ট আছে এমন ভাল ডেভেলপারকে জমি দিন।
ডেভেলপার এর সাথে জমির মালিক পাওয়ার বা চুক্তি স্বাক্ষরের পরে কোন কারণে জমির মালিক যদি সংশ্লিষ্ট ডেভেলপারের উপর নাখোশ বা বিরক্ত হন এবং উক্ত জমিটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন তখন তিনি কিন্তু তা করতে পারেন না। জমির মালিক চাইলেই পাওয়ার বাতিল করতে পারে না খুব সহজে। কারণ বিষয়টি জটিল। আর বিষয়টি যদি আদালতে গড়ায় তবে বছরের পর বছর মামলা চলতে থাকে। তাই ল্যাণ্ড মালিকের আগেই ভালো কোম্পানি খুঁজে নিতে হবে। নতুবা কোটি টাকার সম্পদ গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিবে। প্রয়োজনে সাইনিং মানি ছাড় দিয়ে হলেও ভাল কোম্পানিকে জমি দিন।
একটি উদাহরণ দেই… ধরুন একজন জমির মালিক কম টাকায় সাইনিং মানি নিয়ে ৫ কাঠার একটি জমি একটি কোম্পানিকে দিলো এবং যথা সময় অর্থাৎ ৩৬ মাসে জি +৭ তলার একটি ভবনের ৭টি ফ্ল্যাট বুঝে পেল (৫০:৫০ রেশিও)। অন্য একটি কোম্পানি বেশি সাইনিং মানি দিলো কিন্তু ভবন ঠিকমত হয়তো সঠিক সময়ে তৈরি করে দিলো না। সময় মত ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করলে জমির মালিকের বড় সমস্যা তৈরি হবে মানসিক অস্থিরতা। তারপর আর্থিক ক্ষতি। কারণ যে যথা সময়ে ফ্ল্যাট বুঝে পাবে সে দ্রুত সেগুলো ভাড়া পাবে। কাজেই সহজেই হিসাব করতে পারবেন একটু বেশী সাইনিং মানির জন্য উনি সত্যিকারে কত বড় ক্ষতির মুখামুখি হচ্ছেন। আর দ্রুত ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়ায় টাকার প্রয়োজন পড়লে উনি উনার অংশের একটি এপার্টমেন্ট সহজেই বিক্রি করতে পারেন। সুতরাং শুধু সাইনিং মানিকেই প্রাধান্য না দিয়ে ফ্ল্যাট দ্রুত বুঝে পাওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।
জয়েন্ট ভেঞ্চার মানে আপনার (ল্যাণ্ডওনার) বিনিয়োগ হচ্ছে জমি আর কোম্পানির বিনিয়োগ হচ্ছে ক্যাশ টাকা। সেই ক্ষেত্রে সব হিসাব নিকাশ করে যাদের হাতে মানে সে সকল কোম্পানির পর্যাপ্ত অর্থ আছে তাদের জমি দিবেন। কোন কোন কোম্পানির হাতে পর্যাপ্ত অর্থ আছে, কাদের সুনাম ভাল তা আপনাকেই চোখ কান খোলা রেখে খুঁজে বের করতে হবে।কোম্পানি নির্বাচিত হলে যথাযথভাবে প্রয়োজনে আইনজীবির সহায়তা নিয়ে চুক্তি সম্পাদন করুন। কারণ মনে রাখবেন চুক্তি অনুযায়ী আপনি সব কিছু পাবেন। সব শেষে বলতে চাই রিহ্যাব সদস্য প্রতিষ্ঠান সমূহ ভাল এবং সৃস্টিশীল ভবন তৈরির করার চেষ্টা করছে। রিহ্যাব এই খাতে ধারাবাহিকভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। রিহ্যাব সদস্য ছাড়া কোন ডেভেলপারকে জমি দেয়া হবে সবচেয়ে বড় ভুল।
কামাল মাহমুদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, রিহ্যাব ও চেয়ারম্যান, আইএসও হোল্ডিংস লিমিটেড