করোনাকালের ধকল কাটিয়ে ওঠার সঙ্গে নির্মাণ খাতও দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নির্মাণসামগ্রী ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির দরুন দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের। এই বাড়তি দামের ফলে উচ্চবিত্তরা ফ্ল্যাট কিনতে পারলেও কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যম আয়ের ক্রেতারা।
আবাসন খাত-সংশ্নিষ্টরা জানান, গত এক বছরে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার ফলে নির্মাণ ব্যয় ২০ শতাংশের মতো বেড়েছে। যার মধ্যে অন্যতম নির্মাণসামগ্রী রডের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। বর্তমানে প্রতি টন ৬০ গ্রেড এমএস রডের সর্বোচ্চ দাম ৮১ হাজার ৫০০; যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬৬ হাজার টাকা। সিমেন্ট, পাথর, বিটুমিন, টাইলসসহ অন্য অনেক নির্মাণসামগ্রীর দামও গত কয়েক মাসে বেড়েছে। ফলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে রিয়েল এস্টেট খাতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ক্রেতাদেরও তুলনামূলক বাড়তি দামে ফ্ল্যাট কিনতে হবে।
এ খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নির্মাণাধীন সব ফ্ল্যাটের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে। অন্যদিকে, নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার আগে যেসব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছিল, সেগুলো নির্মাণ করতেও আবাসন কোম্পানিকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। নির্মাণসামগ্রীর দাম যদি এভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে পছন্দসই ফ্ল্যাট কেনা মধ্যবিত্তের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
নতুন ফ্ল্যাটের পাশাপাশি ব্যবহূত ফ্ল্যাট কেনাবেচা হয়ে থাকে। বিদেশে অভিবাসন, অন্যত্র বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত, একই মালিকানায় একাধিক ফ্ল্যাট থাকা, নতুন ফ্ল্যাট কেনা বা নানা কারণে অনেকে ব্যবহূত ফ্ল্যাট বিক্রি করে থাকেন। নতুন ফ্ল্যাটের এই চড়া দামের সময়ে সমাধান হতে পারে ব্যবহূত ফ্ল্যাট। ক্রেতারা এখন ঝুঁকে পড়ছেন ব্যবহূত ফ্ল্যাট ক্রয়ের দিকে। দেশের সর্ববৃহৎ প্রপার্টি সল্যুশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিপ্রপার্টিতে আসা গ্রাহক অনুসন্ধানের তথ্য তাই বলছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে এ বছরের মে থেকে জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে রাজধানী ঢাকায় ব্যবহূত ফ্ল্যাটের জন্য গ্রাহক অনুসন্ধানের সংখ্যা ৪১ শতাংশ বেড়েছে। জানা গেছে, ব্যবহূত ফ্ল্যাট কেনাবেচা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগামীতে এ প্রবণতা বাড়তে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিপ্রপার্টির হেড অব মার্কেটিং মাহজাবীন চৌধুরীর মতে, বর্তমানে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাওয়ার যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা অনেকখানি দূর করতে পারে ব্যবহূত ফ্ল্যাট। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবহূত ফ্ল্যাটের দাম নির্মাণসামগ্রীর বর্তমান দামের ওপর নির্ভর করে না। তাই সেগুলোর দাম সামনের দিনে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের নাগালের মধ্যেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’ সমকাল