
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই)। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই তৈরি করেছে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী। কিন্তু যথাযথ প্রচারের অভাবে এই সব নির্মাণ সামগ্রীর তেমন কোন ব্যবহার হচ্ছে না। এমনকি সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানগুলোো তা ব্যবহার করছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করলে নির্মাণ খরচও কমে যাবে। তাই এসব নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহারের জন্য প্রথমে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে ব্যক্তি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এতে আগ্রহী হবে।
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এসব সামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রে প্রধান উপকরণ হচ্ছে নদীর তলদেশ খনন করা মাটি ও অল্প পরিমাণে সিমেন্ট। সামগ্রীগুলোর মধ্যে রয়েছে ইট, ভবনের মেঝে, ছাদ ও দেয়াল তৈরির উপকরণ, বিকল্প হলো স্ল্যাব, বালু-সিমেন্টের কংক্রিট হলো ব্লক, পলি ব্লক, ড্রেজড মাটির ব্লক, মাটি-সিমেন্টের স্ট্যাবিলাইজড ব্লক, ফেরোসিমেন্ট পানির ট্যাংক, একতলা ভবনের খুঁটি, চাল প্রভৃতি।
ইনস্টিটিউট বলছে, তাদের তৈরি ইটের খরচ প্রচলিত ইটের খরচের অর্ধেক। পাটের আঁশ ব্যবহার করে তারা যে দেয়াল তৈরি করে, তা চূর্ণবিচূর্ণ হয় না এবং ক্ষয় কম হয়। এ ছাড়া এগুলো ভূমিকম্প সহনীয় নির্মাণে বিশেষ সহায়ক। সিমেন্ট ও বালু মিশিয়ে মেশিনে চাপ দিয়ে ইন্টারলকিং ব্লক তৈরি করা হয়। কংক্রিট হলো ব্লক অগ্নিতাপ ও শব্দনিরোধক। প্রতিটি নির্মাণসামগ্রীই পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী।
এইচবিআরআইয়ের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক বলেন, প্রতিবছর দেশে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ইট তৈরি হয়। এতে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টন ভূমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ব্যবহার করা হয়। ইট পোড়াতে ৫০ লাখ টন কয়লা ও ৩০ লাখ টন কাঠ ব্যবহার করা হয়। এতে প্রায় দেড় কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হয়। পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করলে দূষণ হবে না। কৃষিজমি নষ্ট হবে না। নদীর তলদেশের মাটি ব্যবহারের কারণে নদীর পানি প্রবাহিত হবে বেশি, যা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইনস্টিটিউটের ভেতরে পাঁচতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরও দুটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ভবনগুলোর পুরোটাই তৈরি হয়েছে পরিবেশবান্ধব এসব সামগ্রী দিয়ে।
এইচবিআরআইয়ের পরিচালক বলেন, ‘এ ভবনগুলোর নকশা করেছেন আমাদের নিজস্ব প্রকৌশলী ও স্থপতিরা। ভবন তৈরির চলমান খরচের তুলনায় এগুলোতেই শতকরা ৩০ শতাংশ খরচ কম হয়।’
কিন্তু এই পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার কম হচ্ছে কেন এবং পোড়ানো ইটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ইট বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না কেন জানতে চাইলে আবু সাদেক বলেন, মাগুরা গ্রুপসহ অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবহার করছে। এটি যদি সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণপূর্ত, রাজউক, সিটি করপোরেশন, এলজিইডি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মতো ভবন নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করত, তাহলে মানুষ এটি দেখে এসব সামগ্রী ব্যবহারে উৎসাহিত হতো। তিনি আরও বলেন, দেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় সুইচ এশিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু সচেতনতা ও গবেষণা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম চলছে। তবে এ জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
সরকারি সূত্র বলছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ইট তৈরিতে মাটির ব্যবহার ২০২০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সরকারের নিজেরই এই পরিকল্পনার কোনো প্রকাশ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, সরকারের এই সংকল্পকে বাস্তবে ব্যবহার করতে হবে।
স্থপতি ইকবাল হাবিবও বললেন, ঢাকা শহরকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পরিবেশবান্ধব ইট বা নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিকল্প নেই। সরকারকে এই বিকল্প নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে ইট তৈরিতে প্রস্তুত। এসব ব্যাপারে আইনে দিকনির্দেশনা থাকা উচিত।’