রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবনে রাখা রেজিস্টার খাতা। ওই খাতায় রয়েছে বিভিন্ন তথ্যসংবলিত ছক। ভবন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা পরিদর্শন শেষে নির্দিষ্ট কলামে মন্তব্য লিখছেন। ভবনের কাজ শেষে রেজিস্টার খাতাটি জমা দিতে হবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক)। খাতার তথ্য-উপাত্ত সন্তোষজনক হলে ওই ভবন ব্যবহারের সনদ (অকুপেন্সি সার্টিফিকেট) দেবে সংস্থাটি। নকশা মেনে মানসম্মত ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করতে এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। ভবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে যাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এ চিন্তা থেকে এমন ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১১ জুন থেকে এই রেজিস্টার খাতা সরবরাহের কাজ শুরু করে রাজউক। ইতোমধ্যে তিন শতাধিক নির্মাণাধীন ভবনে খাতা দেওয়া হয়েছে। রাজউকের ইন্সপেক্টর থেকে শুরু করে যে কর্মকর্তা-কর্মচারী ভবনটি পরিদর্শনে যাচ্ছেন, পর্যবেক্ষণ শেষে তাঁর মতামত লিখছেন। ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যরাও লিখছেন তাদের অভিমত। পাশাপাশি রেজিস্টার খাতায় সাতটি ঘর রাখা হয়েছে। এসব ঘরে ভবনের আর্কিটেকচার, প্লাম্বিং ডিজাইনার, ফায়ার ফাইটিং ডিজাইনার, ঠিকাদার, সাইট ইঞ্জিনিয়ার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, বাড়ির মালিকের মতো দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। মতামতের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সই, ফোন ও পরিচিতি নম্বর, পদবি এবং ঠিকানা উল্লেখ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এর দায় নেবে।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর ৯০ শতাংশ ভবন নির্মাণের সময় রাজউকের নকশা মানা হয় না। এ জন্য দায়ী কাউকেই জবাবদিহির আওতায় আনা যায়নি। দেখা গেছে, নকশার বাইরে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ভবনের বিস্তৃতি। বাড়ির মালিকের চাপে আর্কিটেক্ট চুপ করে থাকেন। এখন থেকে আর্কিটেক্ট তাঁর মত দিতে পারবেন। এর মাধ্যমে ভবন মালিককেও চিহ্নিত করা যাবে। এ ব্যাপারে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামাল মাহমুদ সমকালকে বলেন, আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে রাজউক এটা চাপিয়ে দিয়েছে। রিহ্যাবের সদস্যরা তাদের স্বার্থেই মানসম্মত ভবন নির্মাণ করে। তবে অনেকে নকশা ছাড়াই পাঁচ-ছয়তলা ভবন তৈরি করছে, সেদিকে তাদের নজর নেই। ওই সব ভবনই ঝুঁকির বড় কারণ। রাজউকের নতুন এই উদ্যোগের কারণে ভবনের নির্মাণকাজে দেরি হবে। এতে আবাসন ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বে। তদারকি হলে কোনো সমস্যা নেই। তবে সেই তদারকির জন্য যেন আবাসন ব্যবসায়ীদের আবার বেশি মাশুল গুনতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি শেখ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা না থাকায় নকশার ব্যত্যয় ঘটা নতুন কিছু নয়। এ কারণে নগরীতে ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে। প্রতিটি কাজে জবাবদিহি থাকা ও সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা জরুরি। এ জন্য গ্রাহক ভোগান্তি যাতে না বাড়ে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। এটা যেন আবার উৎকোচ বাণিজ্যের হাতিয়ার না হয়, সেটাও রাজউককেই দেখতে হবে।
রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা সমকালকে বলেন, মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ভবনে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর দায়ী কাউকে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকে না। অথচ ওই সব দুর্ঘটনার জন্য কারও না কারও দায় আছে। এ জন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে রাজউকের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ভবনের স্থপতি-মালিক কারও দায় এড়ানোর সুযোগ থাকবে না। সমকাল