এক ভদ্রলোক ১০ বছর আগে ৬০ লাখ টাকায় একটা ২০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। ১০ বছরে এলাকা অনেক ডেভেলপ হয়েছে। আশপাশে শপিং মল, ব্যাংক, হাসপাতাল, সুপার স্টোর, চেইন রেস্টুরেন্টসহ আরো অনেক স্থাপনা হয়েছে। রাস্তাঘাট আরো চওড়া আর উন্নত হয়েছে। খুব কাছ দিয়েই ফ্লাই ওভার গিয়েছে।
শুরুর দিকে উনি ২৫ হাজার করে ভাড়া পেতেন, শেষের কয় বছর পাচ্ছিলেন ৩৫ হাজার করে।
এই ১০ বছরে উনি ভাড়া পেয়েছেন মেইনটেন্যান্স বাদ দিয়ে বছরে ন্যুনতম ৩ লাখ করে, মোট ৩০ লাখ টাকা। ফ্ল্যাটের বর্তমান মার্কেট প্রাইস ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
৬০ লাখ টাকা ১০ বছরে ৩০ লাখ ভাড়াসহ উনার প্রাপ্তি আর সম্পদ মূল্য মিলে দাঁড়াল ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, অর্থাৎ ৩ গুণ।
অথচ ৬০ লাখ টাকা ব্যাংকে ফেলে রাখলে ১০ বছরে যাকাত আসত ১৫ লাখ টাকা। মুসলিম হলে এই টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা সেভিংস একাউন্ট করে সুদও খেতে পারতেন না।
এই টাকা কই বিনিয়োগ করবেন?
বাংলাদেশে শেয়ার মার্কেট হল মাফিয়া আর জুয়াড়িদের হাতে। গত এক বছর শেয়ার মার্কেট যে, স্থবির হয়ে আছে, তেমন কোন লেনদেন নেই এটা নিয়ে পত্রপত্রিকায়ও কোন নিউজ নেই। লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর হাজার কোটি টাকা আটকে আছে, এবিষয়ে সরকারেরও কোন মাথাব্যথা নেই। তাই শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করাও ঝুঁকিপূর্ণ।
আর এই ৬০ লাখ টাকা ১০ বছরে মূল্যস্ফীতি আর ডলারের বিপরীতে মূল্য হারিয়ে হয়তো ৩০ লাখের সমান হয়ে যাবে। তাছাড়া ব্যাংকে টাকা থাকলে মানুষের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় বাড়তে থাকে। ভুল বিনিয়োগ হয় কিংবা কাউকে ঋণ দিয়ে ঠিকমতো ফেরত নাও পাওয়া যেতে পারে।
কোন ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন। বিশ্বস্ত লোক না হলে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলতে পারে, প্রতারণার শিকার হতে পারেন, ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন কিংবা টাকাটা নিয়ে পালিয়েও যেতে পারে।
বাকি রইল জমি। ১২ বছর আগে একজন একটা জমি কিনেছিল। রেজিস্ট্রেশন দিলেও জমি দখল দিচ্ছে না। আবার একজন ৪ বছর আগে কিস্তিতে জমি কিনেছিল এখন পুরো কোম্বানি হাওয়া হয়ে গেছে। আবার অন্য একজন আরেকটা জমিতে বিনিয়োগ করে। হাইকোর্টে মামলা খেয়ে পরিবেশ আইনে উন্নয়ন বন্ধ।এখনো জমি বুঝে পায়নি। বাংলাদেশের অধিকাংশ জমিতেই দেখা যায় কিছু না কিছু ঝামেলা আছে। জরিপ, দখল, দাগ নম্বর, ওয়ারিশ, একাধিক মালিক, ব্যাংকে বন্ধকসহ বিভিন্ন সমস্যা৷
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর প্রজেক্টের কথা ধরেন। কর্নফুলি আবাসিক এর ক্রেতারা পানির লবণাক্ততার জন্য এখনো বাড়ি করতে পারেননি। অনন্যা আবাসিক এলাকার মাটি (সয়েল টেস্ট) এতই খারাপ যে, বাড়ির টাকা পাইলিং আর ফাউন্ডেশনেই শেষ হয়ে যাবে। আর পূর্বাচলের কথা যদি ধরেন, এক জেনারেশন জমি কিনবে তো পরের জেনারেশন সেটা ভোগ করবে, আপনি ভোগ করতে পারলেন কই?
ফ্ল্যাটে কেন থাকবেন? কারণ ফ্ল্যাট হবে উন্নত এলাকায়। সমস্ত নাগরিক সুবিধা, বাজার, স্কুল, ব্যাংক সবই হবে কাছে। যাতায়াত খরচ আর সময় বাঁচবে। ওই এলাকায় জমি কেনার সামর্থ্য কি আপনার আছে? ১ কোটিতে ফ্ল্যাট পাবেন কিন্তু ৩ কাঠার জায়গার দাম তো ৬ কোটি টাকা।
এখন ১ কোটি দিয়ে ১০ কিমি দূরে যদি জায়গা নিয়ে বাড়ি করেন, নাগরিক সুবিধাগুলো কিন্তু আপনি পেলেন না। নিরাপত্তা সমস্যাও হতে পারে। আপনার পরের জেনারেশন হয়ত বাড়তি সুবিধা পাবে, আপনি তো পেলেন না।
ভাড়া বাসায় থাকার অসুবিধা কি কি?
বাড়িওয়ালা যখন খুশী ভাড়া বাড়াতে পারে। যখন খুশী নোটিশ দিয়ে তুলে দিতে পারে। বাসায় কোন ইন্টেরিয়র করতে দিবে না৷ রাতে কবে ফিরবেন, রেস্ট্রিকশন দিতে পারে। অনেক বিষয়ে খবরদারি করতে পারে। যখন তখন পানি বন্ধ করে দিতে পারে। দারোয়ান না রাখলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারেন।
আর এপার্টমেন্ট এর মালিক হলে? আশপাশের নাগরিক সুবিধা ছাড়াও বিল্ডিংয়ে ২৪ ঘন্টা জেনারেটর, পানি, সিকিউরিটি গার্ড, কমিউনিটি হলসহ নানারকম সুযোগ সুবিধা পাবেন। নগদ টাকা ব্যাংকে রাখায় যে সুদ, যাকাতের ইস্যু ছিল সেটাও থাকবে না।
মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা ভাড়া তো বাঁচবেই, ফ্ল্যাটটা স্থায়ী সম্পদ হিসেবে পরিবারের আশ্রয় হিসেবে থেকে যাবে৷ অকালে কিংবা দুর্ঘটনায় মারা গেলে স্ত্রী সন্তান একটা স্থায়ী সাপোর্ট পাবে৷ মাথার উপরে ছাদ কিন্তু যে কোন মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার।
তাছাড়া জমির দখল,কাগজের ঝামেলা ইত্যাদি থাকে।কেনার সময় দেখে কিনলে ফ্ল্যাট নিরাপদ।
মোঃ আব্দুর রশিদ বাবু
ডিজিএম, রিহ্যাব