আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
‘শহরমুখীদের বাস্তবসম্মত বাসস্থান সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ’

দেশের ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে শহরমুখী জনগোষ্ঠীর জন্য বাস্তবসম্মত বাসস্থান সরকারের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বেলকোনি হলে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘গৃহায়ন অর্থায়ন মেলা-২০১৭’ র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি বিপুল জনসংখ্যাধিক্য দেশের গৃহায়ন চাহিদা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে শহরমুখী জনগোষ্ঠীর জন্য বাস্তবসম্মত বাসস্থান সরকারের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। গৃহহীন পরিবারের সংখ্যাধিক্যের ফলে শহরে বস্তির সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য ও বাড়িভাড়া। ফলে গৃহায়ন ও আবাসন সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। শহরাঞ্জলে পর্যাপ্ত উন্নত আবাসনের সুযোগ সৃষ্টি না হলে অনুন্নত ও অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠবে এবং সার্বিকভাবে নাগরিক সুবিধা বাঁধাগ্রস্ত হবে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হলে শুধু নগরে বসবাসকারীদের জন্যই নয়, গোটা দেশের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়াধীন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর দেশের ১৪টি উপজেলার বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলের আরো সাতটি উপজেলার পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু করা হয়েছে। সারা দেশের পরিকল্পনা ব্যতিত কৃষি জমি সুরক্ষা করা সম্ভব নয়।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার গৃহায়নকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি দেশে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করা কঠিন কাজ। আমাদের দেশের শতকরা ৭২ ভাগ লোক গ্রামে বসবাস করে এবং দেশের মোট গৃহের ৮১ ভাগ গ্রামে অবস্থিত। এই ৮১ ভাগ গৃহের মধ্যে ৮০ ভাগই নিম্নমানের কাঠামো। জনসংখ্যা বৃদ্ধিও কারণে যেখানে-সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করায় প্রতিদিন প্রায় ২৩৫ হেক্টর কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে।

সাধারণ মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে সরকারি উদ্যোগে অ্যাপার্টমেন্ট করার নানা উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা আট হাজার অ্যাপার্টমেন্ট হস্তান্তর করেছি। পাইপলাইনে আছে আরও ১৫ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট। আমরা এগুলো বিভিন্ন জায়গায় করতেছি। অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে নিজস্ব স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা ও সোলার সিস্টেম থাকার কথাও জানান তিনি।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মতো পরিবেশবান্ধব ও মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট তৈরিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান মন্ত্রী। বলেন, যারা ডেভেলপার তাদেরকে বলবো, আপনারা দেখে আসেন। আপনারা ওই পানি খেতে পারবেন। সুতরাং ইট ইজ পসিবল ইফ ইউ ওয়ান্ট।

ভবন নির্মাণে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণের সুদ ৪ শতাংশের বেশি নাই। আমাদেরও বাংলাদেশে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

বিএইচবিএফসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে রাখেন বিএইচবিএফসি’র চেয়ারম্যান শেখ আমিনউদ্দিন আহমেদ, রিহ্যাব’র প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল), রিহ্যাব’র ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ লিয়াকত আলী ভূইয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহিদ উল্লা খন্দকার, অর্থমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. ইউনূসুর রহমানসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএইচবিএফসি’র মহাব্যবস্থাপক ও মেলা উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. জাহিদুল হক।

গৃহায়ন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসতে দেশে প্রথমবাবের মতো শুরু হয়েছে “গৃহায়ন অর্থায়ন মেলা-২০১৭”। সোনারগাঁও হোটেলের বেলকোনি হলে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তিন দিনব্যাপী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি) আয়োজিত হোটেলের বলরুমে চলমান এই মেলাটি চলবে আগামি শনিবার (২১ অক্টোবর) পর্যন্ত।

মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলাটি সবার জন্য উন্মুক্ত। এছাড়া, প্রতিদিন র্যাফেল ড্রতে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সার্বিক সহযোগিতায় মেলায় আবাসন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট ও আবাসন সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলায় ৩১টি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, ৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সর্বমোট ৪৭টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে গ্রীনবীজ এ্যাড পয়েন্ট।