মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, ঢাকা–চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের উপর দাঁড়িয়ে আছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এসব উন্নয়নের পর নতুনভাবে পরিচিত পাওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্যবসার একটি হাব হবে শহরটি। এতে অবকাঠামোগত প্রয়োজনে আগামী দশ/বারো বছরে নতুন করে আরও ২ থেকে ৩ কোটি বর্গফুট রিয়েল এস্টেটের চাহিদা তৈরি হতে যাচ্ছে এ সেক্টরে। এ সময় বিশ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রামে আবাসন খাতে সম্ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এমনটাই বলছেন র্যাংকস এফসি প্রোপার্টিজের সিইও তানভীর শাহরিয়ার রিমন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে প্রতিবছর ৩ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হচ্ছে রিয়েল এস্টেট খাতে। তার প্রায় ২০ শতাংশ হচ্ছে চট্টগ্রামে। আগামী দশ বছরে সেটা বেড়ে যাবে। এতে শুধু চট্টগ্রামে আগামী ১০ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে রিয়েল এস্টেট খাতে। তরুণ এ কর্পোরেট আইকন বলেন, চট্টগ্রামে যে ধরনের কানেক্টিভিটি তৈরি হচ্ছে, তাতে করে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে আগামী দশ বছরে শুধুমাত্র আগ্রাবাদ ও জিইসি মোড়েই ৫০ লাখ বর্গফুট বাণিজ্যিক জায়গার চাহিদা তৈরি হবে। এই চাহিদা পূরণে আমরা ভার্টিক্যালি গ্রো করব।
এছাড়া বর্তমানে যে সমস্ত আবাসিক ভবন তৈরি হচ্ছে, তার অধিকাংশই দশ–বিশ কাঠা জায়গার মধ্যেই তৈরি হচ্ছে। আগামীতে এর পরিধি আরও বৃদ্ধি পেয়ে তা স্যাটেলাইট টাউনশিপে রূপ নেবে বলে জানিয়ে এসব ডিমান্ড পূরণের জন্য রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের প্রস্তুত থাকতে হবে বলে জানান তানভীর।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এই তরুণ আইকন আরও বলেছেন, চট্টগ্রামে যে ধরনের সক্ষমতা আছে, তার মাত্র ২০ শতাংশ ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। বাকী ৮০ শতাংশ ডেভেলপমেন্ট কাজ এখনো হয়নি। তিনি বলেন, এটা আমরা দেখতে পাব আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। যখন আমাদের দেশের অর্থনীতি বিলিয়ন ডলার থেকে ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। সিটি ডেভলপমেন্টের সাথে রিয়েল এস্টেটের ডেভলপমেন্ট হবে। বড় বড় অত্যাধুনিক কমার্শিয়াল বিল্ডিং তৈরি হবে। র্যাংকস এফসি চট্টগ্রামের এমন উন্নয়নে অংশীদার হতে চায়। ট্রেড সেন্টার হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি সম্মুখভাগে থাকতে চায়।
বর্তমানে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কাজের জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন। ওই সময় কিন্তু তারা চট্টগ্রামে চলে আসবেন। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এমনটি দেখা যাবে বলে জানান তিনি।
যেমন– মীরসরাই যে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মিত হচ্ছে সেখানে প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বাইরে থেকে বিনিয়োগকারীরা এখানে আসবেন। সবমিলিয়ে লোকবল প্রয়োজনের পাশাপাশি এদের থাকার জন্য বাসস্থান, বাণিজ্যিক স্থাপনা তখন প্রয়োজন পড়বে।
তরুণ এই কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব বলেন, আগামী পনেরো বছরের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি বাণিজ্যিক কেন্ত্রের মধ্যে চট্টগ্রাম নিজ অবস্থান তৈরি করে নেবে। দেশে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে বিশ্বের উন্নত নগরী হিসেবে দোহা, হংকং, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের মতো চট্টগ্রামকে তুলনা করবে বিশ্ববাসী। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করা গেলে দেশের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে র্যাংকস এফসির সিইও বলেন, সমুদ্র বন্দর সংস্কার, উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের রানওয়ে তৈরি করে প্রকৃত মানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করতে পারলে বিশ্বের শীর্ষ বিমান সংস্থাগুলো চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে। তখন দেশের তৈরি পোশাক খাতের বিদেশী বায়াররা চট্টগ্রামে সরাসরি ল্যান্ড করে কারখানা ভিজিট করতে পারবে। চট্টগ্রামে রেডিসনের মতো আরো অনেক পাঁচ তারকা হোটেল তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য এখানে বিনিয়োগ করবে। তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেশের আবাসন শিল্প মন্দাভাব কাটিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তানভীর বলেন, চট্টগ্রামে আবাসন ব্যবসার সোনালি সময় ছিল ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আবাসন ব্যবসায় মন্দা দেখা যায়। এ মন্দাভাব অব্যাহত থাকে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত। দেশজুড়ে হরতাল অবরোধ বন্ধ হওয়ার পর আবার ঘুরে দাঁড়ায় আবাসন শিল্প। হংকংয়ে আবাসন সেক্টরে মন্দা কাটাতে ১১ বছর সময় লেগেছে। অথচ বাংলাদেশ তিন বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনার ব্যাপারে তানভীর শাহরিয়ার রিমন বলেন, ১০ বছর পরে চট্টগ্রাম কোথায় থাকছে। সেটা আমরা এখন থেকেই ভাবছি। এটার উপর ভিত্তি করেই র্যাংকস এফসি সামনে এগুচ্ছে। ভবিষ্যতের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ব্যবসার ধরনও পাল্টে ফেলছি। লোকবল উন্নয়নের পাশাপাশি একই সময়ে পণ্যের ডিজাইনের উন্নয়নে আমরা সময় দিচ্ছি। আমরা প্রথমত এখানে অগ্রাধিকার দিচ্ছি জনবলকে। আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি সঠিক লোকবল থাকে, তাহলে কোয়ালিটি সম্পন্ন প্রোডাক্ট পাওয়া যাবে। আপনি অ্যাপার্টমেন্টে যে লাইফস্টাইলের স্বপ্ন দেখছেন, সেই লাইফস্টাইলটাকে আমরা যোগান দিচ্ছি। চট্টগ্রামে প্রথম ভার্টিকাল ল্যান্ডসক্যাপ র্যাংকস এফসি নিয়ে আসে। এখন আমরা এক্সিলেন্সের পথ খুঁজছি। রিয়েল এস্টেট শুধু ফ্ল্যাট তৈরি বা বুঝিয়ে দিলাম, তা নয়। রিয়েল এস্টেটের পরিধি ব্যাপক বলে জানান তানভীর। আমরা বিশ্বাস করি। অতীতকে কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। কিন্তু ভবিষ্যতকে পরিবর্তন করতে পারি। আপনি যদি ভবিষ্যতকে দেখতে না পারেন তাহলে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না বলে জানান তানভীর।
র্যাংকস এফসি ঢাকায় ১৯৯৬ সাল থেকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করে। চট্টগ্রামে ২০১০ সাল থেকে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে। এই আট বছরে প্রতিষ্ঠানটি একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন র্যাংকস এফসির সিইও তানভীর।