আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
পূর্বাচল ও ৩০০ ফুট সড়ক মিলে অন্য রকম শহর অবয়ব পাচ্ছে

বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে চলার পথের সঙ্গী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা কী কাজ করেছে তা তুলে ধরেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। গত ২৯ জুলাই দুপুরে তাঁর মন্ত্রণালয়ে একান্তে আলাপকালে চলার পথের অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

 

প্রতিবেদক : এই মুহূর্তে আপনারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কোন প্রকল্পে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনে। ঢাকায় তারা এ সেবা পেত ৮ শতাংশ। ঢাকার দেড় লাখ কর্মজীবীর মধ্যে এই ৮ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা এ সুবিধা ৪০ শতাংশে উন্নীত করছি। আজিমপুর কলোনিতে এক হাজার ৮০০ কর্মচারী থাকে। চারতলা ভবনকে ২০ তলা করা হবে। এখানে ৯ হাজার লোকের আবাসন সুবিধা তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে ছয়টি ভবন ২০ তলা করা হয়েছে। ১৭টি ভবনের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ওখানে ওয়াসার পাইপলাইন নেই। সোলার, সুইচ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট আছে। এখানে দুটি পুকুর সংরক্ষিত থাকবে। উন্মুক্ত স্থান আগের চেয়ে বেড়ে যাবে দেড় গুণ। ওয়াকওয়ে হবে চারদিকে।

 

প্রতিবেদক : কত টাকা ব্যয় হচ্ছে তাতে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : প্রথম পর্বে ২৭৫ কোটি টাকা লাগছে। ১৭টি ভবনে ৯০০ কোটি টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে ৯ হাজার ফ্ল্যাট হবে।

 

প্রতিবেদক : মতিঝিলে সরকারি আবাসন সুবিধা কতটুকু বাড়ছে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : মতিঝিল কলোনিতে থাকে প্রায় এক হাজার ৯০০ কর্মচারী। সেখানে ১০ হাজার কর্মচারীর আবাসনের সুবিধা তৈরি করা হবে। ২০ তলা ভবন করা হচ্ছে।

 

প্রতিবেদক : সংসদ ভবন এলাকা ও মিরপুরে সরকারি আবাসন সুবিধা বাড়াতে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : লুই আই কানের নকশায় সংসদ ভবন এলাকায় ৪০ একর জায়গায় পাকিস্তান আমলে ডুপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটা ১০ তলা ভবন করা হবে। সেখানে ৩৫ হাজার ফ্ল্যাট হবে। এখন থাকে ৫০০ জন।

আর মিরপুরে ছোট ছোট ভবন আছে, সেগুলো চার-পাঁচতলার। সেগুলোতে আবাসন সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। আমরা আবাসন সুবিধা এভাবে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা নিশ্চিত করব। রাজধানীতেই সচিবদের জন্য তিনটি টাওয়ার করা হচ্ছে। ১১৪ জন সচিব একসঙ্গে থাকবেন। সেখানে থাকবে সুইমিং পুল, হেলথ ক্লাবসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা।

জাজেস কমপ্লেক্সের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ৭৬ জন বিচারপতি একসঙ্গে থাকছেন। এখানে এসটিপি বসানো হচ্ছে। বায়োপাইপ বসানো হয়েছে। সিঙ্গাপুরে এ ব্যবস্থা আছে বেশির ভাগ স্থানে।

 

প্রতিবেদক : ঢাকার বাইরে এ সুবিধা কি বাড়ানো হচ্ছে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধার জন্য অবকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে। নোয়াখালীতে হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধাসংবলিত নতুন আবাসনের ব্যবস্থা। গত ১০ বছরে এই যে সরকারি কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা বেড়েছে—এর আগে এতে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। নোয়াখালী, কুমিল্লা, খুলনা—দেশব্যাপী সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল ভবন করেছি অনেক। আমরা ২৯টি মন্ত্রণালয়ের ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র প্রকল্প এলাকায় আমরা একাধিক ২০ তলা ভবন করে দিয়েছি দ্রুত। দেশের ৩৭টি জেলায় বিদ্যমান সার্কিট হাউস সংস্কার ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সার্কিট হাউস নির্মাণের কাজ চলছে। কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার, বাগেরহাট জেলার মোংলা, রাজশাহী ও রংপুর জেলায় সার্কিট হাউস নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের দপ্তর ও আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ করা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অন্যতম দায়িত্ব। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব বিভাগীয় শহরে বহুতলবিশিষ্ট সরকারি কোয়ার্টার্স নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে মুসলিম হল কি বড় হচ্ছে? শহীদ মিনার কি সংস্কার করা হচ্ছে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : চট্টগ্রামে মুসলিম হল একটি বড় হল। সেখানে লাইব্রেরিও আছে। এটি মাল্টিপারপাস হল। এখানে কয়েকটি হল করা হবে। কোনোটি ৪০০ আসনের, কোনোটি ৩০০ আসনের, কোনোটি ২৫০ আসনের—এসব হল নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। হ্যাঁ, চট্টগ্রামে শহীদ মিনার সংস্কার করে আধুনিক করা হবে। এটি একটি প্লাজা হবে।

 

প্রতিবেদক : ঢাকার বাইরেও কি আপনারা নভো থিয়েটার করতে যাচ্ছেন?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : ঢাকায় নভো থিয়েটার আছে। রাজশাহীতে নভো থিয়েটার হচ্ছে। কাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশালেও হবে নভো থিয়েটার।

 

প্রতিবেদক : ঢাকায় আপনাদের করা কোন প্রকল্পের উদাহরণ প্রথম উল্লেখ করবেন?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : আমাদের কাজের উজ্জ্বল ও বড় উদাহরণ হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৫ সালে বলেছিলেন, এটা করতে হবে। আগে এখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াত। এখন মানুষ সেখানে যায়, প্রকৃতির সঙ্গ, সৌন্দর্য উপভোগ করে। আমরা বিজয় সরণি-তেজগাঁও ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি। হাতিরঝিল প্রকল্প রাজধানীর যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে এই হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এ এলাকা বর্জ্য মেশানো পানিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। বিষাক্ত পরিবেশকে সবুজের সমারোহ দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে গড়ে তোলা হয়েছে। রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডা-প্রগতি সরণিসংলগ্ন হাতিরঝিল প্রকল্পের নর্থ ইউ লুপ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এটি নির্মাণ করেছে। এটি ৫৫৮ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ইউ লুপ। এতে ব্যয় হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত ও এর সৌন্দর্য বাড়াবে ইউ লুপ। প্রধানমন্ত্রী রাজধানী ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে, যানজট নিরসনে তাঁর ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের কথা বলেছেন। পুরো ঢাকাকে ঘিরে একটি এলিভেটেড রিং রোড নির্মাণের পরিকল্পনা তাঁর সরকারের রয়েছে। পুরো ঢাকা ঘিরে একটি রিং রোড করা হবে। এটি হবে সম্পূর্ণ রিং রোড। যানবাহন রাস্তা দিয়ে নয়, ওপর দিয়েই যাবে।

অনেক কার্যক্রম সেখানে হয়েছে। কিছু ইউ লুপ হয়েছে। সর্বশেষ আমরা বাড্ডায় যে ইউ লুপ চালু করেছি, এর আগে রামপুরায়ও করা হয়েছে ইউ লুপ। ঢাকার যানজট নিরসনে এখনো কার্যকর ভূমিকা রাখছে এসব ইউ লুপ। এর আগে এ ধরনের কাজ আর হয়নি। আমরা প্রথমবারের মতো করেছি। নেত্রী বলেছেন, নৌকায় ভোট দিলে কাজ হয়। ঢাকায় এলিভেটেড সার্কুলার রোড হবে, স্যাটেলাইট টাউন হবে। বুলেট ট্রেন হবে। বুলেট ট্রেনে ঢাকায় এসে কাজ করে আবার বাড়ি ফিরতে পারবে মানুষ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা যাবে এক ঘণ্টায়। ঢাকায় পাতালরেল হবে, বাস থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে যাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায় সে জন্য বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকা থেকে সিলেট, রাজশাহী, দিনাজপুর, বরিশাল—একেবারে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এবং ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত এই ট্রেন চালু করা হবে। ঢাকায় আর এত বেশি মানুষকে বসবাস করতে হবে না। দিনে দিনে কাজ সেরে যে যার গন্তব্যে যেন ফিরে যেতে পারে—সে লক্ষ্য থেকেই এ পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আসলে সরকারের ইচ্ছা থাকতে হবে। অতীতে অনেক সরকার এসেছে। তাদের ইচ্ছা ছিল না। যেমন ধরেন, পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে অতীতে যথাযথ কাজ হয়নি। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে এসব সম্পত্তি তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা এবার এসে কী করলাম? পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে আমরা বড় ভবন করেছি সরকারি আবাসন সুবিধা বাড়ানোর জন্য। শুধু ১২টি বাড়ি ধানমণ্ডিতেই আছে। গুলশানে ৩০টি এ ধরনের বাড়িতে রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট করছে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কথাই বলি। এখান থেকে চারদলীয় জোটের সময়ে বিএনপির লোকেরা সুবিধা পেয়েছে। আমরা এই সংস্থার অধীনে হাউজিং করেছি চট্টগ্রামের হালিশহরে এবং ঢাকার মিরপুরে। মিরপুরে ১৪০ একর জায়গা পিপিপি ভিত্তিতে উন্নয়ন করব।

 

প্রতিবেদক : জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ নিয়ে আপনাদের অর্জন কী?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ২০ বছর আগে আমার মাধ্যমে শুরু। চারদলীয় জোট সরকারের সময় বিএনপি নেতারা বুঝতে পারেননি কী জন্য এটি করা হয়েছে। তহবিল ছিল শূন্য। আমার আগে অবশ্য যখন মান্নান সাহেব ছিলেন তখন তাঁর সময়ে ১০০ কোটি টাকা জমা হয়েছিল তহবিলে। আমরা চার বছর ছয় মাসে দুই হাজার কোটি টাকা জমা করেছি। এখানে গৃহায়ণ ব্যবসা ‘হট কেকের’ মতো। বাজার থেকে দাম কম। চার বছরে অর্ধেক টাকা বিনা সুদে দিতে হয়। ১৬ বছরে দিতে হয় অর্ধেক, ৯ শতাংশ সুদে। পাইপলাইনে পাঁচ-ছয় হাজার কোটি টাকার তহবিল আছে।

 

প্রতিবেদক : উপজেলা পর্যায়ে আবাসন সুবিধা কি বাড়ানো হয়েছে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : গত প্রায় সাড়ে চার বছরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ প্রতি উপজেলায় ১৬ একর করে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। এতে কি হবে জানেন, ঢাকায় মাইগ্রেশন কমে যাবে। এ ধরনের আবাসনব্যবস্থা প্রতিটি উপজেলায় হচ্ছে। ৬৪টি উপজেলায় এ পর্যন্ত হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় এই আবাসনব্যবস্থায় যুক্ত থাকবে স্কুলসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গ্রামে শহরের সুবিধা সৃষ্টি করবেন। আমরা তাই প্রতিটি উপজেলায় শহরের সুবিধা দেব। বুলেট ট্রেন হয়ে গেলে ট্রেনেই লোকজন আসা-যাওয়া করবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অন্য রকম। তিনি আধুনিক চিন্তাবিদ। তিনি শুধু চিন্তা করেন না, বাস্তবায়নও করেন। এখানেই অন্যদের সঙ্গে তাঁর বড় পার্থক্য।

সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে সচেষ্ট রয়েছে। এ জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মোট ২২টি প্লট উন্নয়ন প্রকল্পসহ ৪৪টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। যেসব জেলা-উপজেলায় আবাসন প্রকল্প নেওয়া হয়নি, সেখানে জনগণের চাহিদা ও নিষ্কণ্টক জমি পাওয়া গেলে প্রকল্প নেওয়া যাবে।

 

প্রতিবেদক : আপনার নির্বাচনী এলাকায় কী কী কাজ করেছেন?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : আমি আমার নির্বাচনী এলাকায়ও কাজ করেছি। এলজিইডি প্রায় সব রাস্তাই পাকা করে দিয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে।

আমার এলাকায় মহামায়া লেক আছে। এটি সংস্কার করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক তৈরি করা হয়েছে। দুই পাহাড়ের মধ্যে এটি খুব সুন্দর লেক। এখানে আছে প্রচুর মাছ। সারা বছর পানি থাকে। সারা বছরই কোলাহল থাকে। হাজার হাজার মানুষ দেখতে আসে লেক। ১২ মাস পানি পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও মিরসরাইয়ের মধ্যে ইকো ট্যুরিজম করার প্রস্তাব দিয়েছি। এটি পিপিপি ভিত্তিতে করা যায়। এ এলাকায় অনেক লেক আছে। বিদেশিরা থাকতে পারবে। গহিন বন আছে। সীতাকুণ্ড তো পর্যটনকেন্দ্র আগেই হয়ে উঠেছে। ইকো ট্যুরিজম এলাকা গড়ে তোলা হলে এখানে কেবল কারে পর্যটকরা ছুটে যাবে বনের ওপর দিয়ে। আমি বন বিভাগের কাছে প্রস্তাব করেছি।

 

প্রতিবেদক : এই সরকারের কোন পরিবর্তনের বিষয়টি আপনি বেশি উল্লেখ করেন?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : এই সরকারের আমলে মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের পকেটেও টাকা আছে। গ্রামে অবকাঠামো বদলে গেছে। এয়ারপোর্টে গেলে মনে হবে এটি যেন রেলস্টেশন হয়ে গেছে। কারণ ডমেস্টিক এয়ারপোর্টে এখন যাত্রীর অভাব নেই। ২০ বছর আগে সেটি ছিল না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আমি আমার এলাকায় আগে বৃহস্পতিবার ভিক্ষুক দেখতে পেতাম, ভিড় করত। এখন আমি ভিক্ষুক দেখতে পাই না। টাকা দেওয়ার জন্য ভিক্ষুক মেলে না। এটি পরিবর্তন, বড় পরিবর্তন।

 

প্রতিবেদক : আপনারা কি ঢাকার আশপাশে স্যাটেলাইট টাউন করছেন?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : আমরা স্যাটেলাইট টাউন করব রাজউকের উদ্যোগে, প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমির ওপর হবে। আশুলিয়ায় স্যাটেলাইট টাউন হবে ৯ হাজার একরের ওপর। এ জন্য উন্নয়ন প্রকল্প ছক বা ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। আশুলিয়ায় এটি এমনভাবে করা হবে, যাতে এখানে দ্বিগুণ পানি ধরে রাখা যায়। চার ভাগের মধ্যে দুই ভাগেই থাকবে পানি। আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি প্রকল্পে নকশায় যা থাকে, বাস্তবে তা থাকে না। আমাদের প্রকল্পগুলো সে রকম না; যেমন—উত্তরা তৃতীয় পর্বে ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট করা হয়েছে। সেখানে লেক আছে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ, প্রশস্ত প্রায় ৩০০ ফুট। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করবেন বলে আমরা আশা করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ঢাকাকে ঘিরে যেমন রিং রোড করব, পাশাপাশি ঢাকার আশপাশে ছোট ছোট শহর গড়ে তুলব, যে শহরগুলো হবে বহুতল ভবনবিশিষ্ট।’ সেসব ভবনে সব ধরনের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা থাকবে।

 

প্রতিবেদক : আর ঝিলমিল প্রকল্পের কী অবস্থা?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : ঝিলমিলে আমরা ১১ হাজার ৪০০ অ্যাপার্টমেন্ট করছি। কাজ শুরু হয়েছে। মালয়েশিয়ার কম্পানি সেটি করছে।

 

প্রতিবেদক : উত্তরায় আট হাজার ৪০০ অ্যাপার্টমেন্ট করার প্রকল্পের কী অবস্থা?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত। এটি ক্রয় কমিটিতে যাবে অনুমোদনের জন্য। এই প্রকল্প হলে আট হাজার ৪০০ অ্যাপার্টমেন্ট হবে।

 

প্রতিবেদক : আপনাদের আইকন টাওয়ারের কী অবস্থা? প্রকল্প কোন পর্যায়ে আছে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : এটি হবে পূর্বাচলের ঠিক মধ্যস্থলে, প্রকল্পের ভেতরে। ১৪২ তলা টাওয়ার করার জন্য এখন মাটি পরীক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে আসলে কত তলা টাওয়ার করা যাবে। এ জন্য ১০০ একর জমি দরপত্রের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। প্রতি একরের দর আগে ছিল ২১ কোটি, আমরা আগের দরের বিষয়টি বর্তমানের সঙ্গে তুলনা করে একরপ্রতি ৩০ কোটি টাকা ধরেছি। সিকদার গ্রুপ জাপানের কাজিমা গ্রুপের সঙ্গে মিলে এই টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তবে আগে সিলেটের প্রবাসী কালীপ্রদীপ যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা আমরা গ্রহণ করিনি। সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যোগ্যতমকে দেওয়া হয়েছে প্রকল্প। প্রকল্পের ১৯ নম্বর সেক্টরের ১০০ একর জমির ওপর এই আইকনিক টাওয়ারটি নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগিয়েছে। ১০০ একর জমির পেমেন্ট অর্ডার হস্তান্তর করেছে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস লিমিটেড ও কাজিমা করপোরেশন কনসোর্টিয়াম।

আইকনিক টাওয়ারের মধ্যে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার। ভবনে আন্তর্জাতিক কনভেনশন, এক্সিবিশন সেন্টার, হোটেল, থিয়েটার ও শপিং মল থাকবে। টাওয়ার ঘিরে তৈরি হবে আরো কয়েকটি ছোট-বড় ভবন ও নান্দনিক স্থাপনা।

 

প্রতিবেদক : পূর্বাচলে গ্রহীতারা এখনো সবাই জমি বুঝে পায়নি, প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে কবে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : সবাইকে হয়তো ছয় মাসের মধ্যে তাদের নিজ নিজ জমি বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এখানে গভীর বন আছে। এটি হবে আমাদের সর্বশেষ স্মার্ট সিটি। এখানে নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থাকবে। পানি সরবরাহ করা হবে প্রিপেইড পদ্ধতিতে। সিলিন্ডার গ্যাসস্টেশন করা হবে। কারণ এ ধরনের কম্পানি তো আছেই। খালি পড়ে থাকা প্লটে ২০ থেকে ৩০ তলা ভবন করা হবে। এটি করা হবে পিপিপি ভিত্তিতে (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে)। এ ধরনের ভবন করা হবে শ্রমজীবীদের আবাসনের জন্য। প্রতিটি ফ্ল্যাট হবে ৫০০ থেকে ৬০০ বর্গফুটের মতো। পূর্বাচলে গৃহকর্মীদের জন্যও ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা থাকবে। বস্তি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। পূর্বাচলে ২৬ হাজার গ্রহীতা আছে। এখানে হবে ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এটি করা হবে ৩৭ একর জমিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বললেন তখন আমরা আনন্দের সঙ্গেই এর জন্য জমি দিয়েছি। আগামী সেপ্টেম্বরে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করবেন। পূর্বাচলে পুলিশ ফাঁড়ি থাকবে কমপক্ষে আটটি। এটি করা হচ্ছে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য। করা হবে ফায়ার ব্রিগেডের স্টেশন। সিঙ্গাপুরের নামি হাসপাতালের শাখা খোলা হবে এখানে স্বাস্থ্যসেবার জন্য।

 

প্রতিবেদক : পূর্বাচল ও ঝিলমিলে কত ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : উত্তরা তৃতীয় পর্ব, পূর্বাচল ও ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় এক লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ফ্ল্যাট গ্রহণযোগ্য মূল্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিক্রি করা হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে ২০২১ সালের মধ্যে বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষসহ সবার জন্য পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় ৮০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কম সুদে ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য শক্ত ও মজবুত বাড়ি নির্মাণ করবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমির যথাযথ ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকার এরই মধ্যে উত্তরা এলাকায় জমির পরিবর্তে ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়া শুরু করেছে। ঝিলমিল ও পূর্বাচলে ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু করা হচ্ছে পুরোদমে। গ্রামের মানুষও যাতে আধুনিক টেকসই আবাসন গড়ে তুলতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে।

দেশের জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ কম। তাই গ্রামেও বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণে গুরুত্ব দিতে হবে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করছে।

 

প্রতিবেদক : ৩০০ ফুট সড়কের কাজ শেষ হবে হবে করেও শেষ হচ্ছে না। এই কাজ শেষ হবে কবে?

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : এটি বড় প্রকল্প। অনেক কাজ শেষ করেও শেষ করা সম্ভব হয় না। তবে এটিও ছয় মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। ৩০০ ফুট সড়কের মধ্যস্থলের দুই দিকে গাড়ি চলবে, মেট্রো রেল চলবে মধ্য দিয়ে, সে জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। আমি মনে করি, পূর্বাচল ও ৩০০ ফুট সড়ক মিলে যে অন্য রকম শহর অবয়ব পাচ্ছে, তা দেখার জন্য আগামী দিনে পর্যটকরা আসবে। আমরা এভাবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পরিকল্পিত রাজধানী গড়তে চাই।

 

প্রতিবেদক : আপনাকে ধন্যবাদ।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

কালের কণ্ঠ

শেয়ার করুন