রাজধানীতে ফ্ল্যাটের দাম এখনো মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। শুধু তাই নয়, মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে উচ্চবিত্তরাও ফ্ল্যাট কিনতে ভয় পাচ্ছেন। এছাড়া ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি এবং কম সুদে ব্যাংক ঋণ পাওয়া কঠিন। ফলে আবাসন খাতের ব্যবসা দীর্ঘ মেয়াদে মন্দায় রয়েছে। তবে আশার কথা হলো- আবাসন খাতে এখন সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। এছাড়া মধ্যবিত্তের আবাসন সুবিধা নিশ্চিতে স্বল্প সুদে ঋণসহ বিভিন্ন সুবিধার বিষয় চিন্তা করা হচ্ছে। গ্রাহকদের সঙ্গে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা ঠেকাতে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এমন তথ্য জানান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুন আব্দুল্লাহ।
প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে প্রতারিত হবেন না। বিনিয়োগের পর প্লট বা অ্যাপার্টমেন্ট না পেয়ে থাকলে রিহ্যাবের মেডিয়েশন সেলে অভিযোগ করলে সমাধান পাবেন। তবে রিহ্যাব সদস্যদের বাইরে কিছু হলে এর দায়ভার রিহ্যাব নেবে না
জাগো নিউজ : প্রতি বছর এ সময় মেলার আয়োজন করে রিহ্যাব। মেলায় আবাসন খাতে কতটুকু ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : মেলা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। প্রতি বছর এ মেলার জন্য অনেকে উন্মুখ হয়ে থাকেন। এ মেলার মাধ্যমে গ্রাহকরা শুধু বিভিন্ন ফ্ল্যাটের খোঁজ পান না, গৃহঋণসহ অন্য সুবিধার কথাও জানতে পারেন। অন্যদিকে একসঙ্গে আবাসন খাতের ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প সম্পর্কেও জানতে পারেন। পরে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মেলা শেষে আবাসন ব্যবসায়ীরা এর সুফল পান।
জাগো নিউজ : আবাসন খাতের বর্তমান অবস্থা কী?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আবাসন খাত কিছুটা ভালো অবস্থায় রয়েছে। ক্রেতাদের আস্থার সংকট অনেকটা কেটেছে। আশা করছি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পেলে সামনে এ খাত আরো ভালো অবস্থানে যাবে।
জাগো নিউজ : রাজধানীতে ফ্ল্যাটের দাম মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে। তাদের জন্য নতুন উদ্যোগ আছে কি?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : মধ্যবিত্তের জন্য স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা অন্যতম একটি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু এটি একার পক্ষে সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যতটুকু সম্ভব রিহ্যাব তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।
জাগো নিউজ : এ খাতে মন্দা কাটাতে সহজ সুদে ঋণ জরুরি বলে মনে করেন গ্রাহকরা। এ বিষয়ে আপনাদের কোনো উদ্যোগ আছে কি?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : সব ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণের সুবিধা মেলে না। যার কারণে মধ্য আয়ের মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে পারেন না। এজন্য স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে গৃহঋণ দরকার। এখন কিছু বেসরকারি ব্যাংক এগিয়ে আসছে। আমরা সরকারকে বারবার জানিয়েছি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংক এগিয়ে আসলে গ্রাহকদের জন্য বিষয়টি আরো সহজ হবে।
জাগো নিউজ : আগামী বাজেটে বিশেষ তহবিলের কথা বলছেন আপনারা। এতে ক্রেতা নাকি বিক্রেতারা বেশি লাভবান হবেন?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : আমরা সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল চেয়েছি। এখান থেকে সাধারণ ক্রেতারা স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সুবিধা পাবেন। সেখান থেকে ক্রেতারা সুবিধা পেলে ব্যবসায়ীরাও সুফল পাবেন। আমরা তহবিল চাই, সবার সুবিধার্থে, সবার জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে চাই।
জাগো নিউজ : এখাতে অপ্রদর্শিত অর্থের (কালো টাকা) বিনিয়োগের কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। এ অর্থের বিনিয়োগ কি দুর্নীতিকে সমর্থন করে না?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : আমরা কখনই কালো টাকার পক্ষে কথা বলি না, এটাকে সমর্থনও করি না। আমরা চাই বৈধ পথে অর্জিত অপ্রদর্শিত টাকার বিনিয়োগ। কালো টাকার পক্ষে আমাদের কারো সমর্থন নেই। দেশের মধ্যে যদি অপ্রদর্শিত টাকার বিনিয়োগ না হয় তাহলে সেটি সেকেন্ড হোমে চলে যাবে। দেশের বাইরে পাচার হবে।
জাগো নিউজ : এ খাতে বিনিয়োগ কী পরিমাণ আসছে?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : প্রতি বছরই বাজেটে বৈধভাবে অপ্রদর্শিত আয়কে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। তবে অর্থের উৎস নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রশ্ন থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। এর সুরাহা করা গেলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। পাচারের এ অর্থের বড় অংশই ব্যয় হয়েছে মালয়েশিয়া বা কানাডায় ফ্ল্যাট ও বাড়ি কেনায়। সরকারের সহযোগিতায় আমরা যদি সুযোগ তৈরি করে দেই, তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে। এতে সরকারের রাজস্বের পরিমাণও বাড়বে। এ বিষয়ে আমরা আগামীতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করি।
জাগো নিউজ : অভিযোগ রয়েছে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের অনেকেই প্রতারিত হন। প্রতারিত হবেন না- এর নিশ্চয়তা কে দেবে?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে প্রতারিত হবেন না। বিনিয়োগের পর প্লট বা অ্যাপার্টমেন্ট না পেয়ে থাকলে রিহ্যাবের মেডিয়েশন সেলে অভিযোগ করলে সমাধান পাবেন। তবে রিহ্যাব সদস্যদের বাইরে কিছু হলে এর দায়ভার রিহ্যাব নেবে না। আমরা প্রবাসী ভাইদের আহ্বান জানাবো ভালো কোম্পানির কাছে কষ্টার্জিত টাকা বিনিয়োগ করুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই রিহ্যাব সদস্যভুক্ত কোম্পানি হতে হবে।
জাগো নিউজ : এ খাতে বর্তমানে গ্যাস সংযোগের সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন : আবাসনে গ্যাস সংযোগ বড় সমস্যা নয়। বিশ্বের অন্য দেশেও সিলিন্ডারের গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। যেহেতু গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে তাই আমরাও বিল্ডিংয়ের নিচে সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করছি। এ ধরনের কোনো সমস্যাই এ খাতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।