আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
রিহ্যাবের সদস্য ছাড়া কোন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করতে পারবে না

অপর সম্ভাবনাময় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শত বাধা-বিপত্তি সত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে সমৃদ্ধির দিকে। শিল্পায়নের পথ ধরে বাংলাদেশ স্থান করে নিচ্ছে শিল্পোন্নত দেশের তালিকায়। তারণ্যে উজ্জীবিত দেশের যে কয়েকজন বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও সফল রাজনীতিবিদ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ভোলা- ৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি। আবাসন খাতে সরকার স্বীকৃত একমাত্র প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। বর্তমানে সংগঠনটির সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জনাব নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি। দেশের বেসকারি খাতে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখা নাওয়াল গ্রুপের কর্ণধারও তিনি। আবাসন খাতের বর্তমান অবস্থা এবং প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি কথা বলেন আবাসন বার্তার সাথে। নিচে তার কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

আবাসন বার্তাঃ আবাসন ব্যবসার বর্তমান অবস্থা কী?
নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি:: বেশ কিছু সময় ধরে আবাসন ব্যবসার মন্দাভাব চলছে। এই মন্দাভাব থেকে বেরিয়ে আসার গতিটা খুবই কম। এই অবস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি। আবার খুব যে বেশি দিনের তাও নয়। মূলত ২০১০ সালের পর থেকে নীতি সহায়তা সংক্রান্ত নানাবিধ কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। আপনারা জানেন, ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অধিকাংশ ডেভেলপার উচ্চ সুদে ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। ব্যবসায় মন্দাভাব থাকায় ওই ঋণ তারা পরিশোধ করতে পারছেন না। হাজার হাজার রেডি ফ্ল্যাট অবিক্রিত পড়ে আছে। এতে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে আছে। অন্যদিকে, উচ্চহারের নিবন্ধন ব্যয়ের কারণে ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। আবাসন এমন একটি খাত যার সাথে অনেক কিছু জড়িত। দেশের জন্য ভাল কিছু করতে হলে, মানুষের মৌলিক অধিকার আবাসনের বিষয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। আমরা আশাবাদী সরকার আবাসন খাত নিয়ে আন্তরিক। এই খাতের বর্তমান অবস্থা সরকার অবশ্যই ভেবে দেখবেন।

আবাসন বার্তাঃ এবার নতুন একটি বিষয় নিয়ে জানতে চাই। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করেছে। যেখানে বলা হয়েছে এখন থেকে রিহ্যাব সদস্য ছাড়া আর কেউ রিয়ের এস্টেট ব্যবসা করতে পারবে না। এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চাই।

নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি:: হাঁ ঠিকই বলেছেন। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সদস্য পদ ছাড়া কোন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করতে পারবেন না। পরিপত্রের স্মারক নং-বাম/টিও-২/এ-৩/৯২ (অংশ-৩)/১২৩ তারিখ ২ মে, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ।
মূলত বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ১৩ (১) ধারার বিধানমতে সকল ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) এর সদস্য পদ আবশ্যিকভাবে গ্রহণ করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং সদস্য পদ গ্রহনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। বাণিজ্য সংগঠন (ডি টি ও) এর পরিচালক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এ পরিপত্র ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর চেয়ারম্যান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, তেজগাঁও এর বাংলাদেশ প্রকাশনা অফিস, রিহ্যাব সহ ৯টি স্থানে বিতরণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এটা আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। মূলত আবাসন খাতের স্বচ্ছতা- জবাবদিহীতা এবং শৃঙ্খলতা ফিরে নিয়ে আসার জন্য এটা করা হয়েছে। অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ক্রেতাদের সাথে অনিয়ম এবং প্রতারণা করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যায়। যার বদনাম হয় পুরো খাতের উপর। রিহ্যাব ছাড়াও প্রায় আরো দেড় হাজার রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান আছে। তারা আমাদের সদস্য না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসলে আমরা তা সমাধান করতে পারতাম না। সেজন্য এক ছাতার নিয়ে নিয়ে আসতে সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোকে সাধুবাদ জানাই। আশা করি খুব দ্রুত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এটা কার্যকর হলে এই খাতে সুশাসন আরো সুদৃঢ় হবে এবং সব পক্ষই লাভবান হবে।

আবাসন বার্তাঃ জাতীয় বাজেটে আপনাদের দাবি কি কি? কতটুকু প্রতিফলন পেয়েছেন আপনাদের দাবির বিষয়ে।
নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি:: বর্তমানে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গ্রহণের সুযোগ থাকায় দেশের অর্থ বিদেশ চলে যাচ্ছে। অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিলে ভবিষ্যতে ওইসব বিনিয়োগকারী ট্যাক্স নেটের আওতায় চলে আসবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এই বিনিয়োগের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা ১৯ বিবিবিবিবি-তে ইনডেমনিটি রাখা প্রয়োজন। বলা যায় আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ১৯ বিবিবিবিবিতে ইনডেমনিটি না থাকায় সরকারের রাজস্ব বাড়ছে না। আবাসন ব্যবসার মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে সরকার থেকে নীতিগত সহায়তা খুবই দরকার।
বর্তমানে ব্যয় অত্যধিক হওয়ায় ক্রেতারা তাদের প্লট বা ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানো দরকার। বর্তমানে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট ফি ১৪ শতাংশ এর উপরে। সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের এই ফি অনেক বেশি। সার্কের অন্য দেশগুলোয় রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৪-৭ শতাংশের বেশি নয়। রিহ্যাব থেকে আমরা ফ্ল্যাট ও প্লটের রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট ফি ও কর কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছি। এর মধ্যে থাকবে গেইন ট্যাক্স ২ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি ১.৫ শতাংশ, রেজিস্ট্রেশন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ১ শতাংশ এবং মূল্য সংযোজন কর ১.৫ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতি বর্গমিটারের জন্য আয়করের হার কমিয়ে আনা এবং নতুন করে মূল্য সংযোজন কর যেন আরোপ করা না হয়। একই সাথে গৃহায়ন শিল্পের উদ্যোক্তাদের আয়কর হ্রাস করতে হবে। ক্রেতা, জমির মালিক ও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য অসমাপ্ত প্রকল্পগুলোতে বিশেষ ঋণের প্রচলন করা দরকার। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে ঘোষিত হয়েছে। বাজেটে আবাসন খাতে সবকিছু আগের মতই বিদ্যমান রয়েছে। আমরা আমাদের দাবির পক্ষে তেমন কোন প্রতিফলন পাই নাই। এটা তো প্রস্তাবিক বাজেট। আশা করি বাজেট পাশ হওয়ার পূর্বে অবশ্যই সরকার বিষয়গুলো ভেবে দেখবে।

আবাসন বার্তাঃ এক সময় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ‘হাউজিং লোন’ নামের এক কর্মসূচি চালু ছিল। বর্তমানে এটা কি অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়ে আপনাদের কি ধরনের দাবি রয়েছে।
নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি:: সীমিত আয়ের মানুষের জন্য হাউজিং লোন চালু ছিল ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে। ২০১০ সালের পর থেকে এই তহবিল টা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ওই ঋণের সুদ ছিল ৯ শতাংশ। আমরা মনে করি, আবাসন শিল্প রক্ষায় অবিলম্বে হাউজিং লোন কর্মসূচীটা চালু হওয়া উচিৎ। আমরা ২০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছি। এই তহবিল থেকে ক্রেতাদের চাহিদা মত ঢাকা শহরের আশপাশে বা মিউনিসিপ্যাল এলাকার পাশে দেড় হাজার বর্গফুট বা তার চাইতে ছোট ফ্ল্যাট কিনতে ন্যূনতম ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে। সরকার চাইলে ফ্ল্যাটের আয়তনের ওপর ভিত্তি করে ঋণ ও সুদের হার নির্ধারণ করে দিতে পারে। এই ঋণ সরবরাহ কাজে ডিবিএইচ, আইডিএলসি ও ন্যাশনাল হাউজিংয়ের মত বেসরকারি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। প্রতি নাগরিক যাতে ভাড়ার টাকায় অন্তত তাদের একটি ঠিকানা খুজে পায় সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে।

অর্থ দিগন্তঃ আবাসন শিল্পে সেকেন্ডারি মার্কেট বলে একটা কথা শোনা যায়, যেখানে একটি ফ্ল্যাট একাধিকবার বিক্রির সুযোগ থাকে। আমাদের দেশে বর্তমানে এই সেকেন্ডারি মার্কেটের অবস্থা কেমন?
নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি:: আমাদের দেশে আবাসন শিল্পের জন্য সেকেন্ডারি মার্কেটের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এটা সময়ে দাবি এবং খুবই জরুরী। তবে আমরা এই মার্কেটের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানাচ্ছি। বর্তমানে এখন পুরাতন একটা ফ্ল্যাট ক্রয় করতে গেলে নতুন ফ্ল্যাটের মত ট্যাক্স দিতে হয়। রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি, গেইন ট্যাক্স ইত্যাদি বিদ্যমান ব্যয় কমিয়ে ৩.৫ শতাংশে দ্বিতীয় বার ফ্ল্যাট কেনাবেচার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। ফলে একই সম্পত্তি একাধিকবার হাত বদলের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে আবাসন শিল্পের জন্য “সেকেন্ডারি বাজার” সৃষ্টি সহ উন্নত দেশের মত “রিয়েল এস্টেট মার্কেট” ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যেসব ফ্ল্যাট প্রথম বিক্রির পর পাঁচ বছরের মধ্যে আবার বিক্রি হবে, শুধু সেসব ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ৩.৫ শতাংশ বা তার নিচে ট্যাক্সে বিক্রির জন্য সেকেন্ডারি মাকের্ট চালু করা দরকার। সেকেন্ডারি মার্কেট ব্যবস্থার প্রচলন হলে একদিকে যেমন আবাসন শিল্পে গতি বাড়বে, অন্যদিকে সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে। এ ছাড়াও আবাসন শিল্প রক্ষায় শহর এলাকায় পাঁচ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে এবং শহরের বাইরে দশ বছরের জন্য ট্যাক্স হলিডে প্রচলন, সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

আবাসন বার্তাঃ কি পরিমান জনশক্তি আবাসন খাতের সাথে জড়িত। বেকার সমস্যা সমাধানে কতটুকু অগ্রগতির রাখছে আবাসন খাত।

নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি:: বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সাথে ৩৫ হাজার উচ্চতর ডিগ্রীধারী প্রকৌশলী ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, স্থপতি ও উচ্চতর ব্যবস্থাপকদের কর্মসংস্থানের সাথে ৩৫ লক্ষ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের যোগান দিয়েছে। এই সেক্টরে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। শিক্ষিত বেকার সমস্যা সমাধানে বিশাল অবদান রেখে আসছে রিহ্যাব সদস্যরা। উপরের সংখ্যার দেখেই বুঝতে পারছেন কতগুলো জনশক্তি রিয়েল এস্টেট শিল্পের সাথে জড়িত। আগামীতে এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে।

আবাসন বার্তাঃ আপনাকে ধন্যবাদ কষ্ট করে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।
নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), এমপি:: আপনাকেও ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন