আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
সরকারি ছোট ফ্লাটে বসবাসে অনীহা, ছেড়ে যাচ্ছেন অনেকে

নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ফ্ল্যাটগুলো। রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরে নির্মিত ভবনগুলো বাইরে থেকে দেখতে চাকচিক্যময় হলেও ভেতরের দৃশ্য করুণ। বাইরের সিঁড়ি ও ফ্লোরে টাইলস থাকলেও রুমের ভেতরে নেই। বাথরুমের ভেতর পড়েছে কলাম। রান্নাঘরে ঝুলছে বড় বড় পাইপ। এছাড়া, ছয় মাস না যেতেই ফ্ল্যাটের ভেতরের প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। এখনও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলোর রুম দেখতে অনেকটা কবুতরের খাঁচার মতো। যে কারণে অনেকেই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছেন। দুই রুমের ছোট ফ্ল্যাট হওয়ার কারণে এখানে কেউ থাকতে চাচ্ছেন না। একক পরিবারই থাকছে, কিন্তু যৌথ পরিবারের সবারই অনীহা ওই সব ফ্ল্যাটে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের সুবিধা বৃদ্ধির পরিবর্তে তাদের ঝামেলায় ফেলানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কর্মচারীরা।

জানা গেছে, ঢাকার শেরে-বাংলা নগরে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আটটি ভবনে ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ফ্ল্যাটগুলো নির্মিত হয়েছে। তিনটি ভবনে ৬০০ বর্গফুটের ১৬৮টি, দুটি ভবনে ৮০০ বর্গফুটের ১১২টি, দুটি ভবনে এক হাজার বর্গফুটের ১১২টি এবং একটি ভবনে এক হাজার ৫০ বর্গফুটের ৫৬টি ফ্ল্যাট নির্মিত হয়েছে। ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে চলমান প্রকল্পটি সমাপ্ত হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে। মোট ব্যয় হয় ২০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত অধিদপ্তর।

৪৪৮টি ফ্ল্যাটগুলোর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন সংসদ সচিবালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী স্বপন মাহমুদ (ছদ্মনাম)। চাকরির গ্রেড অনুসারে প্রাপ্ত ৬০০ বর্গফুটের দুই রুমের ওই ফ্ল্যাটে চলতি বছরের জুন মাস থেকে ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন স্বপন মাহমুদ। ছোট পরিসরের ওই ফ্ল্যাটই হয়েছে এখন তাঁর গলার কাঁটা। অফিস সহায়ক হিসেবে প্রতি মাসে তার বেসিক বেতন ১০,০৫০ টাকা। যার ৬৫ শতাংশ ফ্ল্যাট ভাড়া বাবদ কেটে নিচ্ছে সরকার। সেই হিসেবে ৬ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া বাবদ পরিশোধ করতে হয় প্রতি মাসে। পাশাপাশি প্রতি মাসে দুই সিলিন্ডারের গ্যাস খরচ ২২শ’ টাকা, বিদ্যুৎ ৯০০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ গুণতে হয় ১০ হাজার ১০০ টাকা। ফ্ল্যাট বরাদ্দের পর থেকেই ৬৫ শতাংশ বেসিক বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য খরচ গুণতে হচ্ছে কর্মচারীদের।

ফ্ল্যাট ছাড়ার বিষয়ে স্বপন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ছেলে-মেয়েদের উপযুক্ত বয়স হয়েছে। তাদের জন্য আলাদা দুই রুম লাগে। বৃদ্ধ বাবা-মা আছে, তাদের কোথায় রাখবো? ছেলে-মেয়ে কোথায় থাকবে? আর স্ত্রী নিয়ে আমি কোথায় থাকবো? তাই চিন্তা ভেবেছি, সরকারি ফ্ল্যাট ছেড়ে বাইরে থাকবো। দুই রুমের কবুতরের খাঁচায় বসবাস করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ১০ হাজার ১০০ টাকায় বাইরে ভালোবাসা পাবো।

শুধু স্বপন মাহমুদ নয়, তাঁর মতো অনেকে ছেড়ে দিচ্ছেন রেডি ফ্ল্যাট।

জানা গেছে, চলতি মাসের ২ নভেম্বর প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তদন্ত কমিটি। পরিদর্শনে নানা ধরনের অসঙ্গতি ফুটে উঠেছে। পরিদর্শনে দেখা গেছে, ৮০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা রয়েছে। তবে ৬০০ বর্গফুটের ১৬৮টি ফ্ল্যাট যেন গলার কাঁটা। এগুলোর বরাদ্দ নিতে চাচ্ছেন না কর্মচারীরা। আইএমইডি’র পরিদর্শনে আরও দেখা গেছে, ১৬৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এখনও ৬০টি ফ্ল্যাট ফাঁকা। এগুলো নিতে অনীহা কর্মচারীদের। ফলে ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দহীন পড়ে আছে।

ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণকালীন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন শাহিন আহমেদ। ছোট পরিসরের ফ্ল্যাট প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সব দিক বিবেচনা করেই ফ্ল্যাটগুলো নির্মিত হয়েছে। আমাদের একার সিদ্ধান্তে হয়নি।

ফ্ল্যাটগুলো নিতে কর্মচারীরা অনীহা প্রকাশ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে শাহিন আহমেদ আরও বলেন, ফ্ল্যাটগুলো কেন ফাঁকা আছে কেনই বা কর্মচারীরা নিতে চাচ্ছেন না তা আমি বলতে পারবো না। ফ্ল্যাটগুলো স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বরাদ্দ দিচ্ছেন। আপনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন।

সম্পাদনা: জেডএইচ/আরএ/আরবি