আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
উপকরণের দাম বৃদ্ধির চাপে নির্মাণ খাত

মন্দা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও চাপে পড়তে যাচ্ছে নির্মাণ খাত। এ খাতের প্রধান নির্মাণ উপকরণ রডের দর বেড়েছে ২৩ শতাংশ। বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং ইটের দাম বেড়েছে প্রতি হাজারে এক হাজার টাকা। গত ছয় মাসে দফায় দফায় এসব উপকরণের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো গৃহঋণের সুদহার বাড়াচ্ছে। এর ফলে সংকট উত্তরণের পথে থাকা আবাসন খাত আবারও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

আবাসন নির্মাণ খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, অকারণে ও অস্বাভাবিকভাবে নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা আবাসন খাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ খাত যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, সে মুহূর্তে নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে নির্মাণকাজ করা দুরূহ হবে। তিনি জানান, অনেক প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে যাচ্ছে। যথাসময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনিশ্চয়তায় পড়বে। এতে দুর্ভোগে পড়বেন ক্রেতারা। একই সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ঋণের সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেনদরবার করে সুদ কমিয়ে আনা হয়েছিল। এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুদের হার আবারও বাড়াচ্ছে। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়বেন ক্রেতারা। ফলে আবাসন খাতে আবারও নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ অবস্থায় আবাসন খাত রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, অ্যাসোসিয়েশন থেকে দুটি চিঠি দিয়ে দাম স্বাভাবিক রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। তা ছাড়া সরকার কোনো কর কাঠামোর পরিবর্তন করেনি। এ সময়ে অযথাই দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।

রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি ও শীর্ষস্থানীয় আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শেল্‌টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌফিক এম সেরাজ বলেন, সম্প্রতি ঋণের সুদহার বেড়েছে। এতে আবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সময়ে রড ও সিমেন্টের দাম বাড়ছে। এটা এ খাতের জন্য কাঙ্ক্ষিত নয়। এতে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে, যা ক্রেতাদের আরও বিপাকে ফেলবে।

রাজধানীর নির্মাণসামগ্রীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায়, বিএসআরএম, কেএসআরএম, আরআরএম ও বিএসএমের মতো সব বড় কোম্পানি রডের দাম বাড়িয়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি টন ৬০ গ্রেডের রড ৬৪ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৭ হাজার টাকায়। গত ছয় মাস আগেও ৬০ গ্রেডের রড ৫২ থেকে ৫৩ হাজার ও ৪০ গ্রেড ৪৪ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে টনে ১২ হাজার টাকা বা ২৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে ৬০ গ্রেড ৫৪ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেড ৪৮ হাজার থেকে ৪৯ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এ হিসাবে গত এক মাসে বেড়েছে টনপ্রতি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, রডের দাম নির্মাণ মৌসুমের শুরু থেকে ধীরে ধীরে বেড়েছে। তবে গত ১৫ দিনে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে আগে প্রতি গাড়িতে ১০ টন রড পাঁচ লাখ টাকায় আনা গেলেও এখন ছয় লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। এতে একদিকে বিনিয়োগ যেমন বেড়েছে, তেমনি লাভও কমেছে।

বিএসআরএম স্টিল মিলের নির্বাহী পরিচালক তপন সেন গুপ্ত বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ করে কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এ কারণে এখন বেশি বাড়তি রডের দাম। তা ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতায় দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় ড্যামারেজ চার্জ বেশি দিতে হয়। পাশাপাশি ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। পণ্য পরিবহনের ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। এসব কারণে দাম বাড়ছে বলে তিনি দাবি করেন।

বিশ্ববাজারে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিঙ্কারের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমনকি সরকারও কোনো ধরনের কর আরোপ করেনি। এর পরও দেশের বাজারে সিমেন্টের দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। গত ছয় মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গত অক্টোবরে স্কান, শাহ, প্রিমিয়ার, ক্রাউন, বসুন্ধরা, ইনসিসহ সব ব্র্যান্ডের প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হয় ৩৬০ থেকে ৩৯০ টাকায়। গতকাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ৪২০ থেকে ৪৬০ টাকায়। হঠাৎ করে গত সপ্তাহে আরও এক দফা দাম বেড়েছে।

ছয় মাসে ইটের দামও প্রতি হাজারে এক হাজার টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ভালো মানের ইট প্রতি হাজার ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানের ইট সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

কারওয়ান বাজারের হাবিব ট্রেডার্সের খুচরা ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা বলেন, গত এক সপ্তাহে সিমেন্টের দাম বস্তায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। হঠাৎ করেই সব কোম্পানি একসঙ্গে দাম বাড়িয়েছে। এ সময়ে অর্ডার দিয়েও চাহিদামতো সিমেন্ট

মিলছে না। গত ছয় মাসে প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ৬০ টাকা।