অনেক শহর আছে নদী ও সাগরের তীরকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা। কিন্তু বিশ্বে কম শহরই আছে, যা গড়ে তোলা হয়েছে পানিকে প্রাধান্য দিয়ে। তেমন একটি শহর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ। পৃথিবীর বৃহত্তর দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর এটি। ফিনল্যান্ড সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত রিভা নদীর তীরের এ শহরটিকে বলা হয়ে রাশিয়ার পর্যটক রাজধানী। বানিজ্যিক শহরই বলা হয়ে থাকে। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে রাশিয়ায় আসা লাখ লাখ মানুষকে বেশি টানছে দৃষ্টি নন্দন এ শহর।
ছবির মতো এ শহরের প্রতিষ্ঠাতা দেশটির সাবেক জার পিটার দ্য গ্রেট। তার সেই স্বপ্নের শহর এখন বিশ্বের কয়েকটি সৌন্দর্যভরা শহরের একটি। রাশিয়া বিশ্বকাপের ১২ ভেন্যুর একটি এ শহরে। রিভা নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি এ স্টেডিয়াম এ শহরের শোভা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এ স্টেডিয়াম ঘিরে এখন স্থানীয় ও হাজার হাজার বিদেশি দর্শনার্থীর পদচারণা সেন্ট পিটার্সবার্গে।
হারমিটেজ মিউজিয়াম, কিরভ থিয়েটারসহ বহু দর্শনীয় স্থান এই শহরের ইতিহাস সমৃদ্ধ করেছে। শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থার জন্য দুই বছর আগে সেন্ট পিটার্সবার্গ পেয়েছে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ পর্যটন শহরের স্বীকৃতি।
একটি দেশ ও জাতির যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা এবং নিজস্ব স্বকীয়তায় বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অনন্য নজির রাশিয়ার এ শহরটি। পুরো শহরই যেন খাল ও ব্রীজে ভরা। শহরজুড়ে রয়েছে ৩০০ কিলোমিটারের মতো সুদৃশ্য খাল। ব্রীজ আছে ৮০০ এর মতো। পরিপাটি শহরটির বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পর্যটকদের টেনে আনে এখানে।
হারমিটেজ মিউজিয়াম, পিটার অ্যান্ড পল ফের্টেস, সামার গার্ডেন, দ্য স্টেট রাশিয়ান মিউজিয়াম, দ্য ক্যাথেরিন প্যালেস, পিটারহফ, ম্যারিনক্সি থিয়েটার, সেন্ট আইজ্যাক ক্যাথিড্রাল, চার্জ অব সেইভিয়ার অন্য দ্য স্প্লিট ব্লাডসহ অসংখ্য দর্শনীয় জায়গা এই শহরে। জল, স্থল ও আকাশ-যেখান থেকেই এ শহর দেখুন না কেন, আপনার নজর কাড়বেই।
এক সময় সেন্ট পিটার্সবার্গ ছিল রাশিয়ার রাজধানী। ১৯১৮ সালের পর কেন্দ্রীয় সরকার রাশিয়ার রাজধানী ঘোষণা করে মস্কোকে। কয়েকবার নামও পরিবর্তন হয়েছিল শহরের। মাঝে এ শহরের নাম ছিল লেনিন গ্রাদ। ১৯৯১ সালে শহরটির নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ ফিরিয়ে দেয়া হয়।
রাশিয়ার মানুষ থিয়েটারপ্রিয়। সেন্ট পিটার্সবার্গের মানুষ একটু বেশিই। এখানে তিন শতাধিক থিয়েটার হল আছে। থিয়েটার এতটাই জনপ্রিয় যে, এখান থেকে আসে রাজস্ব আয়ের বড় একটা অংশ। ৫০০ রুবলের নিচে থিয়েটারের কোনো টিকিট নেই এখানে।
বিশ্বকাপ সৌন্দর্যের সঙ্গে নতুন রঙ লেগেছে এ শহরে। শহরের কেন্দ্র থেকে রিভা নদীর উপর দিয়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার একটি দর্শনীয় ব্রীজ সংযোগ করে দেয়া হয়েছে স্টেডিয়াম এলাকার সঙ্গে। এ নদীর পারে দর্শনার্থীর ভীড় থাকে দিনভর, গভীর রাত পর্যন্ত। স্টেডিয়ামের পাশেই তৈরি করা হয়েছে নতুন মেট্রো ষ্টেশন। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে সৌন্দর্যে নতুন সংযোজন হয়েছে শহরে।
কথিত আছে পিটার দ্য গ্রেট বাল্যকাল কাটিয়েছেন নেদারল্যান্ডসে। সেখানেই লেখাপড়া করেছেন। দেশটির রাজধানী আমস্টারডামসহ বিভিন্ন শহরের সৌন্দর্য দেখেই একটা আধুনিক শহর প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ১৬৯৬ সালে পিটার যখন রাশিয়ার জারের দায়িত্বভার নেন, তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর।
রাশিয়া বিশাল এক দেশ হলেও ওই সময় কৃষ্ণ সাগর, বাল্টিক সাগর ও কাস্পিয়ান সাগরের সাথে কোনো সংযোগ ছিল না। পিটার দ্য গ্রেট দায়িত্ব নিয়েই এসব সমুদ্র উপকূলের সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ তৈরির কাজ শুরু করেন। সে ধারাবাহিকতায় শত শত বছর অতিক্রম করে পিটার দ্য গ্রেটের সেই স্বপ্নের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ এখন পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে। জাগোনিউজ