আসন্ন ঈদের ছুটিতে মানুষ দেশ–গ্রামে বাড়িতে ছোটার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বাড়ি তাদের নিজস্ব। নিজের নিজের ঘরবাড়ি যাদের আছে, তারা সৌভাগ্যবান। আপন নীড়ে ঠাঁই পেতে মানুষের থাকে অনেক অনেক স্বপ্ন। অপূরণ থেকে যায় এমন স্বপ্নভাঙা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আমরা চাই, সকল শ্রেণীর মানুষের আপন আপন নিবাসের চাওয়া–পাওয়ার পূর্ণতা। সুযোগও সৃষ্টি হোক। দারিদ্র্যের সীমাবদ্ধতা থেকে মানুষের ক্রমশ বেরিয়ে আসার রসদ লাভ করুক। সমাজের সহযোগিতা পাক। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগের সাহায্য লাভ করুক।
জন কল্যাণমুখী সরকারের দায়িত্ব হয়ে পড়ে আপন জনসমষ্টির জন্য এমনই এক আর্থ সামাজিক পরিবেশ ও উপায় গড়ে তোলা, যেখানে বসবাসরত মানবকূল তাদের জন্মগত তথা বেঁচে থাকার প্রাথমিক চাহিদাগুলো আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়।
জন্ম সূত্রেই অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা Ñ এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদা মিটানোর পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করে মানুষ। বাস্তবতা হলো, উল্লিখিত মৌলিক চাহিদাগুলোকে নিজের আয়ত্তে আনতে গিয়ে মানুষকে বহু কাঠখড় পোহাতে হয়। জীবনের বাস্তবতার এক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়, প্রতিটি মৌলিক অধিকারের এক একটির স্বাদ আস্বাদন করার প্রয়োজনে। বাসস্থান আমাদের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধিকার রূপে চিহ্নিত। নিরাপদ বাসস্থান ভিন্ন মানুষের জীবন সংসার সুষ্ঠু ও সুস্থিরভাবে চলতে পারে না। বড়োই কঠিন এই অধিকারের রূপায়ন। চারপাশের সমাজ ও অর্থনীতির নানা গতি প্রকৃতির শাসনে রচিত হয়ে চলেছে মানুষের নানা ক্ষেত্রের সাফল্য ও ব্যর্থতার সংবাদ। দুঃখজনক চিত্র হলো, এদেশে লাখ লাখ পরিবারের কোনো ঘর নেই। আবার, যাদের আছে তাদের মধ্যে একটা বৃহৎ অংশের ঘর বাড়ির অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। গৃহহীন পরিবারের সংখ্যাধিক্য, অননুমোদিত বস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রণহীন ভূমি বাজার প্রভৃতির কারণে গৃহায়ণ ও আবাসন সমস্যা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে।
সরকারের গবেষণা ও প্রকাশনা তথ্য অনুসারে সারাদেশের গৃহের চাহিদা বছরে ৫ লাখ করে বৃদ্ধি পায়। তবে, জমি ও অর্থ সঙ্কট এবং নদী ভাঙনের কারণে গৃহ চাহিদার ৫ ভাগের এক ভাগও সার্বিকভাবে পূরণ হতে পারে না। এভাবে বছরে ব্যাপক হারে গৃহ ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ার ফলে অসহায় পরিবারগুলোর ঘরের অভাব প্রকট আকার ধারণ করে। দীর্ঘকাল আগের জাতীয় গৃহায়ণ নীতিমালা, ২০০৪–এ আবাসন সঙ্কটের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়েছিল। নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিলো, ক্রমান্বয়ে সর্বস্তরের মানুষের জন্য উপযুক্ত গৃহায়ণ ব্যবস্থা সহজলভ্য করা। বাড়ি ও বসতিসমূহের উন্নতি সাধন করা। নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছিল শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গুটিকয়েক মহানগরী ও বড় শহরে বাড়তি জনসংখ্যার সিংহভাগ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পর্যাপ্ত গৃহনির্মাণ সম্ভব হচ্ছেনা বলেই বাড়ছে বস্তি এবং ঘিঞ্জি বসতি অঞ্চল।
গৃহায়ণের লক্ষ্যে নিয়োজিত নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসনের প্রয়োজনের প্রতি এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত দৃষ্টি না দেওয়াতে সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে।
নির্মাণ ও নগরবিদগণের মতে, বর্তমানে আবাসনের কোনো কিছুই স্বাভাবিক নেই। নির্মাণ সামগ্রী ও জমির উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে ব্যাপকভাবে পাকা ঘর নির্মাণ তো দূরের কথা আবাসন শিল্পই ল–ভ– হতে চলেছে। সঙ্কটের এই চরিত্রকে থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে মানবের গৃহ সঙ্কটের সমস্যার সমাধান দিতে পারলে মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই–এর স্বপ্ন সফল হতে পারে।