আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
জনপ্রিয়তা পাচ্ছে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী

দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) নির্মিত পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী। মিরপুরের টেকনিক্যাল রোডে অবস্থিত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার বছর ধরে তৈরি হচ্ছে এসব সামগ্রী। সরকারি কাজের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এখন এইচবিআরআইয়ের সামগ্রীর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, প্রতিবছর দেশে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ইট তৈরি হয়। এতে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টন ভূমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ব্যবহার করা হয়। ইট পোড়াতে ৫০ লাখ টন কয়লা ও ৩০ লাখ টন কাঠ ব্যবহার করা হয়। এতে প্রায় দেড় কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হয়।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার ২০২০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ভাটায় উর্বর মাটি ব্যবহার করে যেভাবে ইট তৈরি করা হচ্ছে, তাতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই ইটের পরিবর্তে হলব্লক বা কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, এইচবিআরআই যেসব সামগ্রী ব্যবহার করছে, তা সরকারি স্থাপনায় ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি আরও বাড়ানো হবে।

এইচবিআরআইয়ের এসব সামগ্রীর প্রধান উপকরণ হচ্ছে নদীর তলদেশ খনন করা মাটি ও অল্প পরিমাণে সিমেন্ট। সামগ্রীগুলোর মধ্যে রয়েছে ইট, ভবনের মেঝে, ছাদ ও দেয়াল তৈরির উপকরণ, বিকল্প হলো স্ল্যাব, বালু-সিমেন্টের কংক্রিট হলো ব্লক, পলি ব্লক, ড্রেজড মাটির ব্লক, মাটি-সিমেন্টের স্ট্যাবিলাইজড ব্লক, ফেরোসিমেন্ট পানির ট্যাংক, একতলা ভবনের খুঁটি, চাল প্রভৃতি।

এইচবিআরআই বলছে, তাদের তৈরি ইটের খরচ প্রচলিত ইটের খরচের অর্ধেক। পাটের আঁশ ব্যবহার করে তারা যে দেয়াল তৈরি করে, তা চূর্ণবিচূর্ণ হয় না, ক্ষয়ও কম হয়। এ ছাড়া এগুলো ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণে সহায়ক। সিমেন্ট ও বালু মিশিয়ে মেশিনে চাপ দিয়ে ইন্টারলকিং ব্লক তৈরি করা হয়। কংক্রিট হলো অগ্নি, তাপ ও শব্দনিরোধক। প্রতিটি নির্মাণসামগ্রীই পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী।

এইচবিআরআইয়ের সূত্র জানায়, ২০১৫ সাল থেকে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী তৈরি করছে। শুরুতে তারা এসব সামগ্রী নিয়ে নানা ধরনের প্রদর্শনী করেছে। এগুলো দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জায়গায় পাঁচতলা একটি বড় ভবন নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া ছোট–বড় আরও কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেসব ভবন এখন নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন সরকারের কাছে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

এইচবিআরআইয়ের পরিচালক শামীম আখতার বলেন, এ বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এইবিআরআই নির্মিত হলব্লক যেন সরকারি ভবনে ব্যবহার করা হয়, তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্মাণসামগ্রীর তালিকায় এইচবিআরআই উদ্ভাবিত ১৮ ধরনের পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রীর তালিকা যুক্ত করা হয়েছে। নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থাপনা তৈরিতে যেসব পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করছে, তার মডেল তৈরি করেছিল এইচবিআরআই। এ ছাড়া পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও পিরোজপুরে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে ভবন নির্মাণে এইচবিআরআইয়ের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।

শামীম আখতার জানান, জাইকার অর্থায়নে এইচবিআরআইয়ে একটি অত্যাধুনিক কারখানা তৈরির কাজ চলছে। অত্যাধুনিক মেশিন আনা হয়েছে। নদীর তলদেশের মাটি দিয়ে পুড়িয়েই এখানে ইট তৈরি করা হবে। দিনে ১২ হাজার ইট তৈরি হবে। বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা যাবে। এই ইটের দামও হবে প্রচলিত ইট থেকে কম।

রাজধানীর বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ঢাকার আশপাশের ইটভাটা। নরওয়েভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এনআইএলইউর সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণায় ঢাকা শহরের বায়ুর গুণগত মানের এই চিত্র উঠে এসেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের গবেষণা অনুসারে শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা শহরের বস্তুকণা দ্বারা বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা ৫৮ শতাংশ দায়ী। তারা ইট তৈরিতে প্রচলিত পদ্ধতি ব্যবহার না করে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুপারিশ করেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করলে দূষণ রোধ করা যাবে। কৃষিজমিও নষ্ট হবে না। নদীর তলদেশের মাটি ব্যবহারের কারণে নদীর পানি প্রবাহিত হবে বেশি, যা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে। প্রথম আলো