আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মাণ ঋণ কারা কীভাবে পাচ্ছেন

মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সমস্যা সমাধানে সরকারের ‘মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মাণ ঋণ’ প্রকল্পে অগ্রাধিকার পাবেন অসচ্ছল জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা। প্রস্তাবিত গৃহনির্মাণের জন্য ন্যূনতম দুই শতাংশ নিষ্কণ্টক জমি আবেদনকারীর নিজের স্ত্রী বা স্বামীর দখলি স্বত্বে থাকতে হবে। আবেদনকারীরা ঋণ পাবেন ৫ শতাংশ সরল সুদে। ওই ঋণের সুদ সরকার কর্তৃক প্রদানকারী ব্যাংক বরাবর বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রদেয় হবে।

গতকাল রোববার (৯ আগস্ট) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১২তম বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে বা বিনা সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য গঠিত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। কমিটি তিনটি বৈঠক করে এই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির পত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংক থেকে বিনা সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়ে বিস্তারিত কর্মকৌশল, সম্ভাব্য আর্থিক সংশ্লেষের তথ্য-উপাত্ত ও মতামতসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই কমিটি গঠন করা হয়। আমরা দ্রুত এই ঋণ কার্যক্রম শেষ করতে চাই।’

চূড়ান্ত হওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই প্রকল্প সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বাস্তবায়ন করবে। সরকার প্রয়োজন মনে করলে অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সম্মতি গ্রহণসাপেক্ষে মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মাণ ঋণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। বাস্তবায়নকারী ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা যাচাই করে আলোচ্য ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে সুদ না নেয়া হলেও ঋণের বাৎসরিক মোট সুদের পরিমাণ কত হতে পারে তার ধারণা ব্যক্ত করতে হবে। নয় মাসের মধ্যে গৃহনির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে এবং ওই নয় মাস গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হবে।

আবেদনকারীর যোগ্যতায় প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা ঋণের আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা থাকবে না। মৃত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে তার সম্মানী ভাতা পাওয়ার যোগ্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তরাধিকারী সব উত্তরাধিকারের লিখিত সম্মতিক্রমে যথাযথ নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওই ভাতা লিয়েন রেখে অন্য কোনো জামানত ব্যতিরেকেই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ঋণের বিপরীতে নির্মিতব্য বাসস্থান ব্যাংকে মর্টগেজ (বন্ধক) করা আবশ্যক হবে না। সম্মানী ভাতাভোগী নন এমন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে তাদের প্রথা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জামানত গ্রহণ করতে পারবে।

কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রেরিত তথ্যমতে মোট গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩০ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত সম্মানী ভাতাভোগী ৫৮৭ জন এবং সাধারণ সম্মানী ভাতাভোগী এক লাখ ৮৪ হাজার ১৩৭ জন। জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ও মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাভোগী উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আনুমানিক ৭০ শতাংশ ঋণ প্রার্থী হবেন। সেই বিবেচনায় প্রার্থী সম্ভাব্য মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা হয় এক লাখ ৬১ হাজার ২৪৪ জন।

প্রতি মুক্তিযোদ্ধাকে প্রদেয় ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ টাকা হিসাবে মোট ঋণের পরিমাণ হবে ১৬ হাজার ১২৪ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে ঋণ পরিশোধ পদ্ধতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়, নয় মাস গ্রেস পিরিয়ডের পর দশম মাস হতে ঋণের আসল ১৩৫টি মাসিক সমকিস্তিতে পরিশোধযোগ্য হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা লিয়েন-পূর্বক উক্ত ভাতা হতে মাসিক কিস্তিতে ঋণ শোধ হবে।

এক ব্যাংক হতে সম্মানী ভাতা গ্রহণকারী উক্ত ভাতা লিয়েন রেখে অন্য বাস্তবায়নকারী ব্যাংক হতে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। ভাতাভোগী নন এমন মুক্তিযোদ্ধারা ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী নিজস্ব উৎস হতে কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন।

এছাড়া প্রতিবেদনে ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি, ঋণের জামানত এবং আদায় সম্পর্কিত নিয়ম পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

এ বিষয়ে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের এই ধরনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের দাবি হল সুদমুক্ত ঋণ। কারণ ৫ শতাংশ সরল সুদের কথা বলা হলেও ব্যাংকগুলো নানান সুদের চক্করে ফেলতে পারে। এই ঋণ সুবিধা যেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা পান। আর এই পুরো প্রক্রিয়া দালালমুক্ত রাখতে হবে। নতুবা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পোষ্যদের বরাবরের মতই নানান হয়রানির শিকার হতে হবে। জাগোনিউজ২৪