আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
রাজউকের নতুন ড্যাপ, গঠনমূলক মতামতকে গুরুত্ব দিন: কামাল মাহমুদ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা ঢাকা ডিটেইলড এরিয়া প্লান (ড্যাপ) নামে পরিচিত। ২০১৫ সালে এ মাস্টারপ্ল্যান তথা নতুন ড্যাপ প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালে এটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নতুন ড্যাপ প্রণয়নের লক্ষ্যে ৬০ দিনের গণশুনানির সময় বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, যা চলে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গণশুনানির মেয়াদ আরও ২ মাস বাড়িয়েছে। এ সময়সীমা পুনরায় বাড়ানো না হলে ২০২১ সালের জানুয়ারিতেই চূড়ান্ত হতে পারে ২০ বছর মেয়াদি নতুন ড্যাপ।

আমাদের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং দ্রুত বর্ধনশীল একটি শহর। দেশের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ বাস করে করে এই রাজধানী শহরে। দিন যত যাচ্ছে এই শহরের নাগরিকের সংখ্যা ততই বাড়ছে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্তেও ঢাকা শহর হচ্ছে এই দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। জনবহুল এই শহরের জন্য পরিকল্পিত আবাসন এবং কর্মসংস্থানের জোগান দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা বাসস্থান ও শিল্পায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অবদান অতুলনীয়।

আবাসন শিল্পে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)এর সদস্য প্রতিষ্ঠান সমূহ। প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধারা যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছে, তেমনি আবাসন শিল্পের সাথে জড়িত আড়াই শতাধিক লিংকেজ শিল্প লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করে দেশের অর্থনীতিকে করেছে সমৃদ্ধ। আর সেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে, চলমান রয়েছে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, বিদুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। টেকসই উন্নয়নে রাজধানী ঢাকাকে আধুনিক ও বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কেন্দ্রীয় ঢাকার ওপর চাপ কমাতে প্রতিটি উপ-অঞ্চলভিত্তিক স্কুল নির্মাণ, পার্ক এবং কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন ড্যাপে। একই সাথে বিভিন্ন অঞ্চলে জলকেন্দ্রিক পার্ক নির্মাণ সহ বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব রয়েছে যা খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। খসড়া ড্যাপে এবছর অন্যতম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এলাকা ভিত্তিক জনঘনত্ব জোনিং কিংবা ভবনের উচ্চতা বিষয়ক সুপারিশমালা। বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্য উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে একটি বাস্তবসম্মত ও জনকল্যাণমুখী ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান চূড়ান্ত করা সময়ের দাবি।

নতুন ড্যাপ যেন কোনভাবেই জনস্বার্থ বিরোধী না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজউকের ভবন নির্মাণের উচ্চতার ক্ষেত্রে নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরে ফ্ল্যাটের দাম ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য পরিকল্পিত আবাসনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। আবাসন সেক্টরে ধস নামবে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে ২০৩৫ সালে ঢাকার জনসংখ্যা হবে আড়াই কোটির উপরে। তাই ভবন নির্মাণের উচ্চতার ক্ষেত্রে বাস্তবতাকে অবশ্যেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, পিছনে না। বিল্ডিং এর উচ্চতা বেধে দিলেই যে ঢাকার জন সংখ্যা কমে যাবে বা নাগরিক সুবিধা বেড়ে যাবে বিষয়টা কিন্তু তা নয়। জন সংখ্যার চাপ কমানোর জন্য প্রয়োজন প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ। দরকার বুলেট ট্রেন, মেট্রোরেল, পাতাল ট্রেন সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। বিভাগীয় এবং ঢাকার সাথে সংযুক্ত জেলা শহরের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ঢাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হবে। দখলকৃত খালগুলোকে উদ্ধার করে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

যে কোনো পরিকল্পনা শতভাগ নির্ভুল না হওয়াটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে রাজউকের খসড়া ড্যাপও ব্যতিক্রম নয়। ড্যাপ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট নগরবিদরা গণমাধ্যম সহ বিভিন্নভাবে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। রিহ্যাবসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার এবং পেশাজীবীরা মতামত দিয়েছেন। ২০ বছর মেয়াদি ড্যাপের খসড়ায় যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, সবার গঠনমূলক মতামতের ভিত্তিতে তা সংশোধন করে ঢাকাকে বসবাসযোগ্য আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

চেয়ারম্যান, আইএসও হোল্ডিংস লিমিটেড